ফ্যাসিস্টদের আশাভঙ্গ, মুখ লুকাচ্ছে দিল্লিপন্থী ষড়যন্ত্রকারীরা

দাবি-দাওয়ার ভিন্নতা স্বত্বেও ড. ইউনূসকে অকুণ্ঠ সমর্থন

Daily Inqilab সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

২৫ মে ২০২৫, ১১:১৬ এএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৫, ১১:১৬ এএম

জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হতাশা প্রকাশ ও পদত্যাগ করার ভাবনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নিজ নিজ দলের দাবি-দাওয়া ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রধান উপদেষ্টার কাছে নতুন করে তুলে ধরেছে দলগুলো।

 

 

তবে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি ও দাবি-দাওয়াতে ভিন্নতা থাকলেও একটা অতুলনীয় বিষয় দৃশ্যমান। এটা আবারও দিনের মতো স্পষ্ট, ড. মুহাম্মদ ইউনূস হচ্ছেন ইতিহাসের একমাত্র সরকার প্রধান যার পদত্যাগ কোনো রাজনৈতিক দল বা দেশের সাধারণ মানুষের কেউই চান না। দাবি-দাওয়াতে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সিরিজ বৈঠকে তার প্রতি এমন অকুণ্ঠ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে দলগুলো।

 

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার অকুণ্ঠ সমর্থনই ড. ইউনূসের শক্তি। তাই তিনি এখন আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি বিপ্লবের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈঠকে ডেকেছেন। এবার বিপ্লবের আরেক অংশীজন তিন বাহিনী প্রধানকেও ডাকতে হবে। এটা জনমনে স্বস্তির বার্তা আনবে। দিল্লিপন্থী ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ থুবরে পড়বে।

 

২৪’র গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস ক্ষমতায় থাকার পর নানা কারণে পদত্যাগের গুঞ্জন উঠে তার। এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের বরাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘পদত্যাগ গুঞ্জন’ সামনে আসে। আর এই ইস্যু টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়। বিদেশি সংবাদমাধ্যেমেও এসেছে সেই খবর। আর ‘পদত্যাগ গুঞ্জন’ নিয়ে আগ্রহের সাথে সংবাদ ছেপেছে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমও।

 

অন্যদিকে, ড. ইউনূসের পদত্যাগ গুঞ্জনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শিবিরে ব্যাপক মাতামাতি শুরু হয়। দেশে ফেরার আশায় বুক বাঁধে ভারত পলাতক আওয়ামী লীগের নেতারা। এমনকি পদত্যাগ গুঞ্জনে এক বিএনপি নেতার বাড়িতে আওয়ামী লীগের হামলার খবরও ছড়িয়ে পড়ে। পতিত স্বৈরাচারদের বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে রাজপথে নামার ঘোষণাও দেয়া হয়। কিন্তু দিনশেষে ড. ইউনূস পদত্যাগ না করায় আশাভঙ্গ হয় তাদের। সব দল ফের অকুণ্ঠ সমর্থন করায় ফের গর্তে ঢোকার দশা হয় ভারতীয় এজেন্টদের।

 

সম্প্রতি নির্বাচনের রোডম্যাপসহ বেশ কিছু ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে বিএনপির এক ধরনের টানাপোড়েন তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদের ইস্যুকে সামনে এনে রাস্তা আটকে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর একটি চ্যানেল কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশিদের দায়িত্ব দেয়া নিয়েও বিএনপির পক্ষ থেকেও আপত্তি তোলা হয়।এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করছেন বলে খবর সামনে আসে।

 

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিন দলের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সবগুলো দল প্রধান উপদেষ্টাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে।

 

বৈঠক শেষে বিএনপি প্রতিনিধি দলের প্রধান খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং, প্রথমদিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে।

 

বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদ ছাড়তে চেয়েছেন আমরা তাকে সে অবস্থান থেকে সরে আসার আহবান জানিয়েছি।

 

এদিকে, এই সংকট কারা তৈরি করলো তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ড. ইউনূসকে জন বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয়। যে কারণে অভ্যুত্থানের মূল শক্তি বিএনপি ও জামায়াত ইসলামকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়। অভ্যুত্থানের আরেক বড় শক্তি সশস্ত্র বাহিনীকেও রাখা হয় অন্ধকারে। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি ছাত্রদের মধ্যেও দেখা দেয় অনৈক্য। এর ফলে বাড়তে থাকে দূরত্ব। পরের পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নেয়। অস্বস্তিতে পড়ে যায় অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো।

 

এরপর থেকেই একটা সমঝোতায় আসার চেষ্টা চলে। নানা ইস্যুতে দূরত্ব কমাতে বৈঠক করে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম তিন অংশীদার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি। অতি সম্প্রতি উপদেষ্টা পাড়ায় একজন উপদেষ্টার বাসায় এ বৈঠকটি হয়। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নেতারা সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো আলোচনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় যমুনায় এখন আর পদত্যাগের প্রস্তুতি তো নেই। বরং নতুন করে ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে। যেমনটা দাবা খেলায় ঘটে থাকে। রাজা চেকমেট হয়ে গেলে নতুন করে সাজাতে হয়।

 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতেই ড. ইউনূস পদত্যাগ ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর ও দিল্লিপন্থী যারা সরকারের ভেতরে থেকে ভিন্ন মতলবে ঘুঁটি চালাচালি করছিলেন তারা এখন মুখ লুকাচ্ছেন। পরিস্থিতি যে তাদের অনুকূলে নেই এটা এখন সত্য।

 

আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তুহিন মালিক নিজের ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন,একটা অতুলনীয় বিষয় দৃশ্যমান। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস হচ্ছেন ইতিহাসের একমাত্র সরকার প্রধান যার পদত্যাগ রাজনৈতিক দল বা দেশের সাধারণ মানুষের কেউ চায় না। এটাই ডক্টর ইউনূসের শক্তি। তাই তিনি এখনও আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।

 

তিনি আরও লেখেন, সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচনের একটা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দিতেই হবে। না হলে অস্থিরতা বাড়বে। একগাদা সংস্কারের পরিবর্তে দ্রুত মৌলিক সংস্কারগুলোকে শেষ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। আর রাজনৈতিক দলগুলোকেও দলীয় এজেন্ডার বাইরে গিয়ে দেশের মানুষের চাওয়া পাওয়া ও জাতীয় স্বার্থে নমনীয় হতে হবে।সংস্কার হতেই হবে। নইলে ফ্যাসিবাদের জন্ম হতেই থাকবে। এবার একটা সুযোগ এসেছে। মানুষ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন চাচ্ছে। কতবার মানুষ রক্ত দিয়ে এটা আপনাদের বোঝাবে?


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পরিবারের ‘অন্যায়ের’ প্রতিবাদ করায় নিখোঁজ যুবক, অভিযোগের তীর মা ও বোনের দিকে

পরিবারের ‘অন্যায়ের’ প্রতিবাদ করায় নিখোঁজ যুবক, অভিযোগের তীর মা ও বোনের দিকে

রাঙামাটি মহিলা কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বসতবাড়ি ভাংচুর ও উচ্ছেদের অভিযোগ

রাঙামাটি মহিলা কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বসতবাড়ি ভাংচুর ও উচ্ছেদের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন ছাড়া কোনো সংস্কার গ্রহণযোগ্য নয়

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন ছাড়া কোনো সংস্কার গ্রহণযোগ্য নয়

ছাগলনাইয়ায় ব্যতিক্রমী আয়োজনে জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধন

ছাগলনাইয়ায় ব্যতিক্রমী আয়োজনে জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধন

যথাসময়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে: ট্রাম্প

যথাসময়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে: ট্রাম্প

৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ‘তারুণ্যের উৎসব’, লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশ গড়া

৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ‘তারুণ্যের উৎসব’, লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশ গড়া

পাকুন্দিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে ভারসাম্যহীন শিশুর আত্মহত্যা

পাকুন্দিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে ভারসাম্যহীন শিশুর আত্মহত্যা

আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শে আমাদের কাজ করতে হবে-মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শে আমাদের কাজ করতে হবে-মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

১৪৬ কোটি টাকায় ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার

১৪৬ কোটি টাকায় ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার

নির্মাতা ও অভিনেতাসহ ব্যাচেলর পয়েন্ট’র ৬ জনকে লিগ্যাল নোটিশ

নির্মাতা ও অভিনেতাসহ ব্যাচেলর পয়েন্ট’র ৬ জনকে লিগ্যাল নোটিশ

জুলাই যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ তহবিল করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

জুলাই যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ তহবিল করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী

এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী

ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা হজ্জ ও ওমরাহ সেভিংস স্কিম: সঞ্চয়ে স্বপ্নপূরণ

ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা হজ্জ ও ওমরাহ সেভিংস স্কিম: সঞ্চয়ে স্বপ্নপূরণ

ল’ রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দেশবাসী আইন অঙ্গন সম্পর্কে জানতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল

ল’ রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দেশবাসী আইন অঙ্গন সম্পর্কে জানতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল

নরসিংদীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপি নেতা বহিষ্কার

নরসিংদীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপি নেতা বহিষ্কার

মানিকগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় মানববন্ধন পণ্ড

মানিকগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় মানববন্ধন পণ্ড

আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইসিসির

আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইসিসির

ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপরে, এবারও বন্যার আশংকা

ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপরে, এবারও বন্যার আশংকা

মুল্ডারের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে দ. আফ্রিকার নতুন রেকর্ড

মুল্ডারের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে দ. আফ্রিকার নতুন রেকর্ড