ঈদ আনন্দে ভাসছে দেশ
১১ জুন ২০২৫, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৫, ১২:১৭ এএম

ভয়-ভীতি ছাড়া, ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন ষ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় কর্মী সমর্থকদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত
সারা দেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা ও উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে উদযাপিত হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদ আনন্দের রেশ আজও কাটেনি। এবার দীর্ঘ ছুটি থাকায় সবাই প্রাণ ভরে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছে। কেউবা গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সাথে, কেউবা প্রিয়জনদের নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে ঘুরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সব মিলিয়ে টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়ে সারাদেশই বলা যায় ঈদ আনন্দে ভাসছে।
বাংলাদেশের মানুষ এবার ভয়-ভীতি ছাড়া, ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন করেছে। মানুষের মনে ছিল না হামলা-মামলার ও গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্ক। এর আগে গত ১৬ বছর ধরে অনেক মানুষ গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িতে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে পারেনি। পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ঈদ এলে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ওপর নেমে আসত আরো বেশি গ্রেফতার ও হয়রানির খড়্গ। পরিবারের সঙ্গে যাতে ঈদ করতে না পারে, তার জন্য বাড়ি বাড়ি খুঁজতে যেত পুলিশ। এছাড়া এলাকাছাড়া করার হুমকি দিতো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। ফলে মামলার জালে আটকে পড়া বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের কারো ঈদ কেটেছে জেলখানায়, আবার কারো ঈদ কেটেছে লুকিয়ে-পালিয়ে। ফ্যাসিবাদ পতনের পর এবার মুক্ত পরিবেশে স্বস্তির ঈদ বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের। নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ মানুষের সাথে অধিকাংশ নেতা এবার ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। সামনে নির্বাচন, সেই প্রস্তুতি নিতেই মূলত নেতারা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করছেন। প্রায় ১৬ বছর পর মুক্ত পরিবেশে ঈদ উপলক্ষে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দীর্ঘ সময় পর এবার দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বাঁধাহীন ঈদ উদযাপনে বেশ উৎফুল্ল। এরই মধ্যে তারা নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনুষ্ঠান করছেন, দাওয়াত খাচ্ছেন, সব মিলিয়ে বেশ আনন্দ-উচ্ছ¡াসের মধ্যে নেতাদের এই ঈদের সময় অতিবাহিত হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, এবার নির্বিঘেœ ঈদ উদযাপন করতে পারছেন তারা। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে গণসংযোগ করছেন। ঈদের শুভেচ্ছ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নেতাদের বন্ধন আরো দৃঢ় হচ্ছে।
অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে ঈদ আনন্দ ছিল নাগালের বাইরে। এবারে দ্রব্যমূল্যও ছিল সহনীয় পর্যায়ে। এছাড়া ঈদে আবহাওয়াও ছিল অনেকটাই অনুক‚লে। ঈদের সময় প্রচুর বৃষ্টি হবে এমন একটা আশঙ্কা ছিল মানুষের মনে। তবে সেটা হয়নি। ঈদের দিনটি ছিল খুবই চমৎকার আবহাওয়া। কোথাও সামান্য বৃষ্টি হলেও সেটা ঈদ আনন্দকে বিঘিœত করতে পারেনি। ঈদের সময়ে আবহাওয়া খুব বেশি গরমও ছিল না, আবার বেশি বৃষ্টিও ছিল না। সব মিলিয়ে একটা স্বস্তিদায়ক অবহাওয়ায় মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। এবার ঈদ যাত্রাও অনেকটা ভোগান্তিহীন ছিল। ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ নিজ পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করতে পেরেছেন।
বাংলাদেশের ঈদ উদযাপনে এবার এক অন্যরকম মাত্রা পরিলক্ষিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে চাপা আনন্দ, সীমাবদ্ধ উদযাপন এবং নিষ্প্রাণ আনুষ্ঠানিকতার পরিবর্তে এবার ঈদে দেখা গেল বর্ণিল উৎসব, প্রাণবন্ত মিছিল আর ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ। নতুন প্রজন্মের জন্য এটি ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা, যেখানে ঈদের আনন্দ উৎসব সামগ্রিক সামাজিক ঐক্যের প্রতিচিত্র হয়ে উঠেছে। রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামায়াতে অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাধারণ মানুষের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সেখানে মানুষের মধ্যে ছিল স্বতঃস্ফ‚র্ত ও প্রাণবন্ত উচ্ছ¡াস।
ঈদ মানেই খুশির বার্তা, আর সেই খুশিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ঢাকার রাজপথের ঈদ মিছিল। ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে ঈদের জামাত শেষে সকাল ৯টার দিকে শুরু হয় এক অভ‚তপূর্ব ঈদ আনন্দ মিছিল। এই মিছিলে অংশ নেয়া ব্যান্ড পার্টির বাদ্যযন্ত্র, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত মানুষ। মিছিলটি চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে খামারবাড়ি মোড় পার হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গিয়ে শেষ হয়। এই মিছিল কেবল আনন্দের নয়, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক পুনরুজ্জীবন। সুলতানি ও মোঘল আমলে যে ঈদ আনন্দ রাজপথে ছড়িয়ে পড়ত, এবার তা ফিরে এলো নতুন রূপে। ঈদ মিছিলে অংশ নেয়া মানুষদের হাতে ছিল বিভিন্ন সামাজিক ও ঐক্যের বার্তা তুলে ধরা প্ল্যাকার্ড। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছে, যা সা¤প্রতিক বছরগুলোতে হারিয়ে যেতে বসেছিল। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামেও ছোট-বড় ঈদ মিছিলের আয়োজন করা হয়, যা নতুন বাংলাদেশের উদযাপনের অনন্য প্রতিচিত্র হয়ে উঠেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এর আগে কখনো ঈদকে এমনভাবে উদযাপন করতে দেখেনি। আগে ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ ছিল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরে, কিন্তু এবার পুরো দেশ যেন একত্রে ঈদ উদযাপনের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছে।
গ্রামের সাধারণ মানুষও বলছে এবারের ঈদের আনন্দ একেবারেই আলাদা। কোনো বাধা নেই, দুশ্চিন্তা নেই, একদম প্রাণ খোলাভাবে সবাই ঈদের আনন্দ উপভোগ করছে। এ রকম স্বস্তিদায়ক পরিবেশে সম্প্রীতির বন্ধনে দেশে প্রতিবারই ঈদ উদযাপিত হোক এটাই সবার প্রত্যাশা।
এবারের ঈদে ঈদ সালামির ব্যাপারটিও ছিল ব্যতিক্রমী। যেখানে সাধারণত ছোটদের সালামি দেয়ার সংস্কৃতি প্রচলিত, এবার তা ছড়িয়ে গেছে বড়দের মধ্যেও। ঈদ সালামি নিয়ে মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো, এমনকি রাজনৈতিক নেতারাও এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। কেউ কেউ ঈদ সালামি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ ঈদ সালামি চেয়ে মজার পোস্ট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঈদ সালামি নিয়ে এমন রসিকতা ও বিনিময় ঈদের আনন্দে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ঈদ মিছিল ছাড়াও ঢাকার চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ঈদ মেলাও এবারের ঈদকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। সেখানে প্রায় ২০০টি স্টল বসে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী খাবার, পোশাক ও বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও অন্যান্য খেলার আয়োজন করা হয়, যা পরিবারগুলোর ঈদ আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এবারের ঈদ কেবল যেন একটি উৎসব নয়, এটি ছিল বাংলাদেশের নতুন যুগের সূচনা। যেখানে মানুষ নিঃশঙ্কচিত্তে, উৎসবমুখর পরিবেশে, স¤প্রীতির আবহে ঈদ উদযাপন করেছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশে ঈদ ফিরে পেয়েছে তার প্রকৃত রূপ সবার জন্য খুশি, আনন্দ ও ঐক্যের প্রতীক।
মুসলমানদের জীবনে বছরে দুটি খুশির দিনের একটি হলো ঈদুল আজহা, যা ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। সামর্থ্যবানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করেন। এই কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়, বরং অন্তরের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে আত্মশুদ্ধির এক অনন্য মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জবাই করা পশুর রক্ত-মাংস আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধু তোমাদের তাকওয়া।’ এই তাকওয়া আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহভীতি এই দিনটির মূল শিক্ষা। এদিন মানুষকে শেখায় অন্যায়, জুলুম, মিথ্যা ও পাপাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং মানবিকতায় উজ্জীবিত হতে। কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হয়, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের দেয়া হয় এবং এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা হয়। এর মাধ্যমে গরিব-ধনী সবাই মিলে ঈদের আনন্দে শরিক হন। সারা বছর যারা গোশত কিনে খেতে পারেন না, তাদের ঘরেও গোশত রান্না হয়। মহান আল্লাহ নিজেই তাদের হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ঈদের এই ত্যাগ ও সহমর্মিতার বার্তাই সমাজে সাম্য, স¤প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে শক্তিশালী করে। এই মহতী দিনটি যেন আমাদের জীবনে প্রকৃত ত্যাগ, মানবিকতা ও নৈতিকতা চর্চার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে, এটাই সবার কামনা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

হামজার পর এবার দেশে আসলেন যুক্তরাজ্যের পিপি রেঞ্জার্স ক্লাবের ফুটবলার সিলেটের তানভীর

সিলেটে করোনার আক্রান্ত একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক : চিকিৎসায় প্রস্তুত শামসুদ্দিন হাসপতাল

ভ্যাপসা গরমে হাসপাতালে রোগীর ভিড়, সংকট স্যালাইনের

গুমবিষয়ক স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে: আসিফ নজরুল

নালিতাবাড়ীতে বিএনপি নেতার উপর আওয়ামী নেতার সন্ত্রাসী হামলা: গ্রেপ্তার দাবি

চিন্ময় কৃষ্ণকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী আনজুম হত্যার রহস্য উদঘাটন, হত্যাকারী যুবক আটক

ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে ছাত্রদলের শোক

ঢাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের জুলাই সনদ ও গণহত্যার বিচার দাবি সংবাদ সম্মেলন

তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন দূতাবাস

ঢাবিতে ককটেল বিস্ফোরণ-ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে উত্তেজনা

নোয়াখালীতে অগ্নি ঝুঁকিতে শত শত বহুতল ভবন, নেই আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা
বিশ্ববাজারে আরও বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম

ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ২০ ছাড়াল

বীরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের

‘ভারত পানি বন্ধ করলে যুদ্ধই একমাত্র পথ’— হুঁশিয়ারি বিলাওয়ালের

শেরপুরের ফুটবলের ফাইনালে কানিপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব চ্যাম্পিয়ন

মাগুরায় ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বী হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

বিস্ফোরক মামলায় খালাস পেলেন বিএনপি নেতা এ্যানীসহ ৯ জন

ফ্যাসিস্টমুক্ত গণমাধ্যম জাতির জন্য আশীর্বাদ -সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার