দলের ঐক্যের প্রতি বারবার তাগাদা দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজেকে, পরিবারকে সর্বোপরি দেশকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণ এখন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমরা কিভাবে কি করবো, কিভাবে দেশকে সাজাবো সেটা মানুষ আমাদের কাছে জানতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল। একমাত্র বিএনপিই পারবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ি দেশ গড়তে। সেজন্য আপনাদেরকে (দলের নেতা-কর্মীদেরকে) জনগণের কাছে সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলে। বেলা পৌনে পাঁচটার দিকে তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। আশুগঞ্জ উপজেলার আব্বাস উদ্দিন খান মডেল কলেজ মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, ‘স্বৈরাচারের আজ পলাতক। তবে স্বৈরাচারের মাথাটা শুধু পালিয়েছে। অবশিষ্ট এখনো রয়ে গেছে। এরার বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দিতে যাচ্ছে। এরা অবস্থান গুছানোর চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে দেশকে নিজেদের দখলে নিতে। দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা হাজির হচ্ছে।’
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূইয়া, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া। সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন। এছাড়া কেন্দ্র, জেলা ও উপজেলা বিএনপি’র বেশ কয়েকজন নেতা এতে বক্তব্য রাখেন। জেলা বিএনপি’র সদস্য মো. কবির আহমেদ ভূইয়া পুরো সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টি সমন্বয় করেন। সম্মেলন হলেও জেলা বিএনপি’র নতুন কোনো কমিটি করা হয়নি। তারেক রহমান সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অর্থাৎ কমিটি গঠন বিষয়ে দায়িত্ব নেন। অচিরেই দ্বিতীয় অধিবেশনের জন্য তারিখ করা হবে বলে তারেক রহমান উল্লেখ করেন।
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমরা যদি শুধু নিজেদের স্বার্থের জন্য তর্কে লিপ্ত থাকি, তাহলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার। আগামী দিনে সংসদ কীভাবে পরিচালিত হবে, সংসদের মেয়াদ কতদিন হবে; একজন মানুষ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন- এমন বিভিন্ন বিষয় আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে সক্ষম। এগুলো নিয়ে আমরা মাত্রাতিরিক্ত আলোচনা করলে রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ব। রাষ্ট্র্র পুনর্গঠন থেকে যদি আমরা পিছিয়ে যাই, তাহলে দেশ এবং দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিগত ১৫ বছর জনগণে ভোট দেয়ার কোনো উপায় ছিলনা। জনগণের ভোট দেয়ার ক্ষমতা অস্ত্রের বলে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। অস্ত্র দিয়ে আমরা দেখেছি কখনও ডামি নির্বাচন, কখনও আমরা দেখেছি ভোটারবিহীন নির্বাচন। আমরা দেখেছি উন্নয়নের নাম করে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়ে গেছে। কোনোরকম জবাবদিহিতা ছিলনা বলেই দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনসহ সব ব্যবস্থাকে আবার পুনর্গঠন করতে হবে। রাষ্ট্রকাঠামোর এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যত দ্রæত শুরু করা যাবে, দেশ তত দ্রæত আমরা উন্নত করতে পারব। বিএনপি একমাত্র দেশকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। আপনারা জানেন যে, ইতিমধ্যেই আমরা এসব বিষয়ে একটা রূপরেখা দিয়েছি। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব বিষয়ে বলা আছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আদর্শ থাকতে কিভাবে দেশের মানুষের ভালো করা যায়। ৭৫ সালে দেশ ভেঙ্গে পড়ার পর মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিলো। তখন দেখেছি জিয়াউর রহমান কিভাবে দায়িত্ব নিয়ে দেশ গড়ে ছিলেন। স্বৈরাচারের পতনের পর দেশ যখন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছিলো তখন কিভাবে খালেদা জিয়া গড়েছেন।’ গণতন্ত্রের পক্ষে প্রতিটি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হবে বলে তারেক রহমান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।