আলোচনার চেয়ে খানা-পিনা বেশি চলছে : জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রসঙ্গে সালাহ উদ্দিন আহমদ
২৬ জুন ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে আলোচনার চেয়ে খানা-পিনা বেশি চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এখনো সংস্কার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু হতাশা কেউ ব্যক্ত করেননি। আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ, আলোচনা চলছে। তার চাইতে বেশি হয়ত খানাপিনা চলছে। সময় অনেক লাগছে। তবে আমি বিশ্বাস করি আমরা একটা জায়গায় ঐক্যতে আসতে পারব। আমরা ঐক্যতে আসার জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে কি কি বিবেচনায় নিয়েছি তা আপনারা লক্ষ্য করেছেন। আমরা বলেছি, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে বসতে পারবেন না। এখানেই স্বৈরাচারকে রুখে দেয়া হলো, এখানে ফ্যাসিবাদের উপত্তি বন্ধ করে দেয়া হলো।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান কি তা তুলে ধরতে গিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ২০১২ সালের ১ জুন বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্য যাত্রা শুরু করে।
স্বৈরাচারের উৎপত্তি বন্ধ করতে হলে দেশে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যদি সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে এখানেই কিন্তু স্বৈরাচারের উৎপত্তিটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না। নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে, বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে এবং আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে এবং সেখানেই থাকবে একটা কমপ্লিট ব্যালেন্স অব পাওয়ার। এটাকে আমরা আইনের ভাষায় বলি সেপারেশন অব পাওয়ার থিউরি। যেটার মূল কথা, হারমোনিয়াস কো-আপরেশন ইন বিটুইন অল দ্যা অর্গানস অব দ্যা স্টেট শুড বি স্টাবলিসড। তাহলে পরে কোনো অর্গান কোনো অর্গানের ওপরে ওভার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, একটা আরেকটা ব্যালেন্সিং পাওয়ার হিসেবে পাহারাদার হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতন্ত্র রক্ষাকবজ হিসেবে শক্তিশালীর ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো হবে। তার জন্য কি করতে হবে? এক নম্বর বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা (বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) যদি আমরা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে পারি তাহলে এটা গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হবে। দুই নম্বর, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং তিন নম্বর নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা ৭০ অনুচ্ছেদের মধ্যে সংস্কার এনেছি, সবাই ঐক্যমত্য হয়েছে। এখন আমরা একটা প্রস্তাব আরও দিয়েছি যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সদস্যদের মধ্যে গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে এমপিরা ভোট দেবে, সেটা আরেকটা বিপ্লব হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ আমরা ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করলাম। সেটা কী আমাদের বড় ধরণের অর্জন নয়।
তিনি বলেন, আমরা যদি প্রতিক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে সীমাবদ্ধ করি আইনিভাবে-সাংবিধানিকভাবে তাহলে কিন্তু নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হবে, রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না, সরকার পরিচালনা করা যাবে না। আর যদি যে যার জায়গায় নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইনসভা তার তার সীমাবদ্ধের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য থাকে সেই ব্যবস্থাটা আমরা গ্রহন করি। তাহলে প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের সংস্কার হবে। আমরা সেই সংস্কার চাই যে, সংস্কারের মধ্যে কোনো বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হবে না।
সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা সেই সংস্কার চাই, যেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো নির্মিত হবে, সেই সংস্কার আমরা চাই যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার হবে, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার হবে এবং যার ফলোশ্রæতিতে আমরা জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারব। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সেই সমাজ ব্যবস্থা আমরা কামনা করি।
বিএনপির এই নেতা জানান, এখন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের প্রচেষ্টার মধ্যে নির্বাহী বিভাগকে যত বেশি নিয়ন্ত্রিত করা যায়। সেটা নির্বাহী বিভাগকে অতীতে একজন স্বৈরাচার হয়েছিল সেজন্য নির্বাহী বিভাগকে আমরা বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না। একজন সংসদীয় পদ্ধতিতে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো সেজন্য আমরা আইনসভাকে বিলুপ্ত করতে পারব না। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং একটা হারমোনিয়াস কো-অপারেশন, মধুর সম্পর্ক, পাহারাদার সৃষ্টি করা, সেইফ গার্ড সৃষ্টি করার জন্য সকল অর্গানগুলোকে সেইভাবে শক্তিশালী করা। সকল গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীর ভিত্তির উপরে দাঁড় করানো যাতে করে তারা নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তাহলে আর কোনোদিন এদেশে স্বৈরাচারের উপত্তি হবে না। আমরা ক্রমান্বয়ে সেদিকে যাচ্ছি।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি শুধু আপনাদের সবাইকে বলব, চোখ-কান খোলা রাখবেন, খরগোসের মতো কানগুলো যাতে সব সময় সর্তক থাকে। চোখ খোলা থাকবে। কেনো? দেখেন সত্যি সত্যি কি হচ্ছে?
আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণফোরামের মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন
দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা
ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস
চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার
পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি
কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা
বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু
ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক
মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি
দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার
দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ
জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান
চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু
তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা
মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা
গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল