‘মুফতি নিয়োগ : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’
১৭ মে ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
১২ : ০২ : দ্বিতীয় শ্রেণী : এমন মুফতী যিনি তাঁর অনুসৃত ইমামের মাযহাবের অধীনস্থ মুফতী হয়ে থাকেন। তাই তিনি তাঁর ইমামের ফাতওয়াসমূহ, বক্তব্যসমূহ, উৎসসমূহ ও নীতিমালাসমূহ বিষয়ে গবেষণা করার মতো যোগ্যতা রাখেন, জ্ঞান-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হন; তা থেকে বিধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হন এবং তাঁর অনুসৃত ইমামের যেসব বিষয়ে বর্ণনা বা দলীল অনুপস্থিত সেক্ষেত্রে বিদ্যমান নসসমূহ দ্বারা কিয়াস করতে পারেন; বিধান ও দলীলে তাঁর ইমামের তাকলীদ ব্যতীতই। তবে ইজতিহাদ ও ফাতওয়াদানের ক্ষেত্রে তাঁর ইমামের পন্থা-পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন এবং তাঁরই মাযহাবের প্রতি, বিন্যাসকৃত ও সিদ্ধান্তকৃত বিষয়াদির প্রতি আহ্বান করে থাকেন। তাই তিনি উদ্দেশ্য ও কর্মপন্থা উভয়ক্ষেত্রেই ইমামের অনুগামী হয়ে থাকেন। এ শ্রেণীর মুফতীর মর্যাদা-স্তর হচ্ছে, স্বাধীন গবেষক ইমামগণের নিচে।
১২ : ০৩ : তৃতীয় শ্রেণী : এমন মুফতী যিনি তাঁর সম্পর্কযুক্ত মাযহাবের ভেতরে থেকে গবেষণা করে থাকেন, যার দলিল-প্রমাণ স্থিরীকৃত, তাঁর (ইমামের) ফাতওয়াসমূহে দৃঢ় আস্থা রাখেন, ভালো জ্ঞান রাখেন। ইমামের অভিমত ও ফাতওয়াসমূহের বাইরে যান না এবং বিরোধিতা করেন না। যে ক্ষেত্রে বা যখন ইমামের বাণী বা বর্ণনা বিদ্যমান পান তা অবশ্যই এড়িয়ে যান না। অধিকাংশ গ্রন্থ রচিয়তা এর গুণ-অবস্থান এমনটাই হয়ে থাকে যাঁরা স্বীয় মাযহাবের ইমামদের মাযহাব বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করে থাকেন। আর গবেষণা’র ক্ষেত্রে এমনটাই অবস্থা হয়ে থাকে অধিকাংশ দল-মতের (মাযহাবকেন্দ্রিক) আলেমদের। এঁদের অনেকে এমন ধারণা করে থাকেন যে, কুরআন, সুন্নাহ ও আরবী ভাষা বিষয়ে পা-িত্যের প্রয়োজন নেই। কারণ, তিনি পরিতুষ্ট থাকেন (তাঁর) ইমামের বাণী-বর্ণনার উপর Ñযিনি তাকে কষ্ট-সাধনার ক্লেশ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। মাযহাবের ইমামই তার পক্ষে অনুসন্ধান করে শরীয়তের বিধানাবলী স্থির করা এবং তা শরীয়তের দলীল-প্রমাণ থেকে বের করার দায়-দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট করেছেন। তিনি যখন দেখেন যে, তাঁর মাযহাবের ইমাম সুনির্দিষ্ট বিধানটি দলিলসহ উল্লেখ করে দিয়েছেন। তখন তিনি বিপরীত মেরুর কোনো দলীল আলোচনা-গবেষণায় না গিয়ে সেই দলিলসহ প্রাপ্ত বিধানকেই যথেষ্ট জ্ঞান করে থাকেন।
১২ : ০৪ : চতুর্থ শ্রেণী : এ শ্রেণীভুক্ত মুফতী হচ্ছেন তাঁরা যারা মাযহাবগুলোর কোনো একজন ইমামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এঁরা সেই ইমামের ফাতওয়াসমূহ ও শাখা-প্রশাখাগত বিধানসমূহ আয়ত্ব বা কণ্ঠস্থ করেছেন এবং সবদিক বিবেচনায় এঁরা নিজেদের পুরোপুরি তাকলীদের মাধ্যমে সেসব বিধানে স্থির রেখেছেন। কোনো মাসআলা-বিধানে কোনোদিন কুরআন ও সুন্নাহ্র কথা উলেল্লখ করলেও তা একান্তই সম্মান ও বরকতের বিবেচনায় করে থাকেন। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে আমাদের ইমাম অনেক বেশি জ্ঞান-বিদ্যার অধিকারী। আমরা মনে প্রাণে তাঁর তাকলীদ (অনুকরণ-অনুসরণ) করেছি; তাই তাঁকে অতিক্রম করতে চাই না এবং তাঁর ভুল অনুসন্ধান করতে যাবো না। তিনি যা কিছু বলেছেন, সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সে সব বিষয়ে তিনি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী, অভিজ্ঞ”। এর পর তিনি লিখেছেনÑ
০১ : ১৩ : রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক বিবেচনায় ‘মুফতিগণ’ ও তাঁদের সই-স্বাক্ষরের মূল্যায়ন “উপরিউক্ত চার শ্রেণীর মুফতীর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর মুফতীর ফাতওয়াসমূহের অবস্থান হচ্ছে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান ও তাঁদের প্রতিনিধিত্বকারী আলেমদের স্বাক্ষরিত সমশ্রেণীভুক্ত ফাতওয়া বা ফরমানের। দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন মুফতীর ফাতওয়ার অবস্থান হচ্ছে, রাষ্ট্রপ্রধানদের স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধিদের (উপ-প্রধান/মন্ত্রী) স্বাক্ষরিত ফরমানের সমপর্যায়ের। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কোনো মুফতীর ফাতওয়ার অবস্থান হচ্ছে, রাষ্ট্রপ্রধানদের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে নিযুক্তদের প্রতিনিধিদের (প্রতিমন্ত্রী) স্বাক্ষরিত ফরমানের সমপর্যায়ের। তার বাইরে যেসব মুফতী আছেন, তাঁরা হচ্ছেন সাজগোজকারী, পরিপাটি কৃত্রিম মুফতী যাদেরকে কোনো তুলনার মধ্যে ফেলা যায় না”।
উল্লেখ্য-১. গ্রন্থকার এখানে “সাজগোজকারী বা পরিপাটি মুফতী ..” -বলে মূলত বোঝাতে চাচ্ছেন, রাষ্ট্রীয় পরিসরে বা আইন-আদালতের কাছে আলোচিত চার শ্রেণির মুফতী এবং তাঁদের স্বাক্ষরিত ফাতওয়া বা ফরমানের যে তিনটি স্তর/স্ট্যাটাস্ এর ধর্তব্য ও গৃহীত মূল্যায়ন রয়েছে; তেমনটি অপরাপর মুফতী যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন বা অনুমোদনপ্রাপ্ত নন Ñতাঁদের ফাতওয়ার এমন ধর্তব্য ও আইনগত মূল্যায়ন নেই। যদিও যথাযথ যোগ্যতা সাপেক্ষে ব্যক্তিগত পর্যায়ে থেকে অথবা প্রাইভেট কোন এদারা বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে থেকে তাঁরাও ফাতাওয়া-ফারাইয দিতে পারেন এবং সাধারণ জনগণ তাঁদের দেয়া সহীহ ফাতওয়া মোতাবেক আমল করতে পারেন, উপকৃতও হতে পারেন। উল্লেখ্য-২. গ্র্যান্ড মুফতী অধ্যক্ষ ড. ইয়াহইয়া আল-বাতূশের উক্ত আলোচনা থেকে (তাঁদের দেশে চলমান বা অনুসৃত রীতি অনুযায়ী) আরও বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি এবং তাঁর অনুরূপ আরও যারা ‘গ্র্যান্ড মুফতী’ হিসাবে নিয়োজিত ও কর্মরত আছেন তাঁরা উক্ত চার শ্রেণির কোন এক শ্রেণিভুক্ত হয়ে থাকবেন; যদিও বাস্তবে কিতাবী আলোচনায় সাধারণত মুফতিদের ছয়টি বা সাতটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়।
০১ : ১৪ : আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি কিভাবে?
জর্ডান তথা আরব দেশগুলোর উক্ত উচ্চ মূল্যায়ন এবং আমাদের এ অঞ্চলের সাধারণ মূল্যায়ন -যাই হোক; এটিকে আমরা সহজবোধ্য ও আমাদের মত করে এভাবে বুঝে নিতে পারি, এ যেন বাংলাদেশের বিধিবদ্ধ একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ‘সহকারী পরিচালক’, ‘উপ-পরিচালক’, ‘পরিচালক’ ও ‘মহাপরিচালক’ মোট চার স্তরভুক্ত কর্মকর্তাবৃন্দ। এটি ভিন্ন কথা যে, আমাদের এসব প্রতিষ্ঠানের একজন মহাপরিচালকের স্বাক্ষর বা ফরমানের প্রশাসনিক মূল্যায়ন কোন্ পর্যায়ের এবং একজন অতিরিক্ত সচিব/সচিবের, প্রতিমন্ত্রী/মন্ত্রী/প্রধানমন্ত্রীর বা রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের প্রশাসনিক মূল্যায়ন আরও কত ঊর্ধ্বে! অর্থাৎ অনেক তফাৎ। অথচ উক্ত গ্রন্থকারের বাস্তব ও প্রামাণ্য আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে, প্রথমশ্রেণির ও একজন প্রধান মুফতির সই-স্বাক্ষরের স্ট্যাটাস ও মূল্যায়ন হচ্ছে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের সই-স্বাক্ষরের সমপর্যায়ভুক্ত; যেমনটি আমরা তাঁর উপরের আলোচনা থেকে পেলাম।
০১ : ১৫ : দ্বিতীয় অংশ এ পর্যায়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের জবাবগুলো লক্ষ করা যেতে পারে :
১৫ : ০১ : একজন মুফতী হিসাবে যিনি বা যাঁর নিয়োগ রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদত্ত হয় অথবা যাঁর ফাতওয়াদান কর্মে সরকারের অনুমোদন রয়েছে Ñ‘গ্র্যান্ড মুফতী’ বলতে মূলত তাঁর এই অনুমোদনকেই বোঝানো হয়।
১৫ : ০২ : যিনি বা যাঁরা উক্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত বা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়োজিত থেকে ফাতওয়াদান কর্মের দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদেরকেই ‘গ্র্যান্ড মুফতী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। যাঁদেরকে ড. ইয়াহইয়া আল-বাতূশ উপরের আলোচনায় ৪টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন।
১৫ : ০৩ : গ্র্যান্ড মুফতী আপনার-আমার মত একজন মানুষই হয়ে থাকেন। তাঁদেরকে চেনার জন্য শুধু এটুকু জানাই যথেষ্ট যে, তাঁর নিয়োগ রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়েছে কি না? কিংবা তাঁর ফাতওয়াদান কর্মের পিছনে সরকারের অনুমোদন আছে কি না? ব্যাস! আর লক্ষণ বলতে, তাঁর যথাযথ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আছে কি না? Ñএ টুকুই।
১৫ : ০৪ : বিধি মোতাবেক একজন যথাযোগ্য মুফতির যেসব মৌলিক ও প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ও গুণাবলী থাকতে হয়; তার পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞ মুফতির অধীনে থেকে ফাতওয়াদান কর্মের হাতে-কলমে শেখা বাস্তব অনুশীলন তাঁর থাকা চাই; এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি পাঁচ থেকে দশ বছর ফাতওয়াদানের দায়িত্ব পালন করেছেন Ñএমন হওয়া চাই। এ ছাড়া, উপরে আলোচিত ড. ইয়াহইয়া আল-বাতূশের ‘গ্র্যান্ড মুফতী’ বা নিয়োগপ্রাপ্ত মুফতির শ্রেণিবিন্যাস আলোচনায়ও অনেকটা যোগ্যতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
১৫ : ০৫ : ৫নং প্রশ্ন মোতাবেক ‘বিস্তারিত আলোচনা’ অনেকটা উপরে আলোচিত হয়েছে।
০১ : ১৬ : গবেষণা’র ফলাফল :
১৬ : ০১ : মাসআলা-বিধান বা ফাতওয়াদান বা শরীয়া বিষয়ে যে-কোন প্রকার সিদ্ধান্তদান কাজটি একান্তই বিশেষজ্ঞ মুফতির কাজ। এ কাজটি ইসলামী জ্ঞান-বিদ্যার অপরাপর বিষয়-বিশেষজ্ঞ কোন ইসলামী স্কলারের নয় বিধায় তেমন কারো এ দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া যেমন ঠিক নয়; তেমনি সরকারী পর্যায়ে হোক বা প্রাইভেট সেক্টরে হোকÑ ‘মুফতী’ ব্যতীত অন্য কাউকে এ কাজে বা পদে নিয়োগদান বা দায়িত্ব প্রদান মোটেও ঠিক নয়। (চলবে)
লেখক: মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
থিনেস্ট স্বাস্থ্যের