প্রশ্ন : হজ কী আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম?
২৪ মে ২০২৩, ০৯:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম

উত্তর : হজের সফর আল্লাহর হজ বেলায়াত তথা নৈকট্য লাভ করার বিশেষ সুযোগের মুহূর্ত। হজের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মঝে এক অপার্থিব সেতুবন্ধন তৈরি হয়। হজের অন্যতম ‘মাকছাদ’ হলো বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহতায়ালার প্রতি অন্তরের ‘ইশক’ ও ‘মুহাব্বত’ প্রকাশ করা। হজের এই মহৎ সফরে বেশি বেশি আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া চাই। বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা চাই। বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম বলেন, মক্কা মুর্কারমায় থাকা অবস্থায় বেশি বেশি লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ-এর যিকির করা। আর মদিনা মুনাওয়ারায় বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা। নবী করীম (সা.) পাঁচটি ইবাদতকে ইসলামের খুঁটি বলে অভিহিত করেছেন। তন্মধ্যে ঈমান সর্বাগ্রে, যার সম্পৃক্ততা অন্তরের সাথে। নামায ও রোযার সম্পর্ক দৈহিক ইবাদতের সাথে। যাকাত সম্পূর্ণ আর্থিক ইবাদত; নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকলে তাফরজ হয়। আরহজ নামায, রোযা ও যাকাতের মতোই এমন একটি ফরজ ইবাদত যা দৈহিকশ্রম ও আর্থিক ত্যাগ উভয়ের সমন্বয়ে আদায় করতে হয়। ফরজে আইন ইবাদত। হজ যেভাবে ফরজ হয় : নবম হিজরীতে হজ ফরজ হয়। হজ ফরজ হওয়ার বিষয়টি কুরআন, হাদীস, ইজমা এবং কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেনÑÑ ‘আর এ ঘরের (বাইতুল্লাহ) হজ করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামার্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার (তার ক্ষেত্রে)।’ (সূরা আলে ইমরান,আয়াত: ৯৭) এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা হজ ফরজ হওয়ার জন্য বাইতুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্যরে কথা উল্লেখ করেন। মুফাস্সির ও ফকীহগণ সামর্থ্যরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেন, হজ ফরজ হওয়ার জন্য দৈহিকভাবে বাইতুল্লা হপর্যন্ত পৌঁছার ও হজের বিধান পালন করার শক্তি-সামর্থ্য থাকতে হবে। আর আর্থিকভাবে এতটুকু স্বচ্ছল হলেই চলবে; যাকে আল্লাহতায়ালা এই পরিমাণ অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন যে, সে নিজ দেশ হতে প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ দিয়ে মক্কা মুকাররমা পর্যন্ত যাতায়াত করতে সক্ষম এবং সেখানে থাকা-খাওয়ার খরচ এবং তার অনুপস্থিতিতে হজ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত বাড়িতে নিজ পরিবারের আবশ্যকীয় ব্যয় বহন করার মতো সক্ষমতা রয়েছে। তবে এ অর্থের উৎস হতে হবে হালাল উপার্জন থেকে। কেননা নবী করীম (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র; তিনি কেবল পবিত্র বস্তুকেই কবুল করেন। (সহীহ্ মুসলিম : ১০১৫) শুধু হজ নয়, যাকাত-সদকাসহ যেসব ইবাদত অর্থ দিয়ে আদায় করতে হয়, সবগুলোতেই হালাল উপার্জন হতে হবে। হারাম পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। হজ ফরজ হওয়ার পর যথাশীঘ্র তা সম্পন্ন করাকর্তব্য; আদৌ বিলম্ব করাউ চিত নয়। যে ব্যক্তি আর্থিক সামর্থ্য, দৈহিক সক্ষমতা ও হজ ফরজ হওয়ার যাবতীয় শর্ত বর্তমান থাকা সত্ত্বেও হজ করে না, তার ব্যাপারে হাদীস শরিফে কঠোর শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই; মৃত্যু কখন চলে আসে তা কারো জানা নেই। তাই যাদের উপর হজ ফরজ তাদের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের উপর অর্পিত হজ আদায় করে নেয়া। নিজেকে দায়িত্ব মুক্ত করা। সাধারণত আমাদের দেশের মানুষের মাঝে একটা প্রবণতা কাজ করে যে বার্ধক্যে উপনীত হলে হজ পালন করবো। হজ ফরজ হয়ে গেলে তা আদায় করার ক্ষেত্রে কালবিলম্ব করা মোটেও উচিত নয়। আল্লাহতায়ালা যদেরকে হজ করার তাওফীক দিয়েছেন, তাদের জন্য তা অত্যন্ত বড় নিয়ামত মনে করতে হবে। হজের সফরে ইবাদত ছাড়া অহেতুক কাজে মূল্যবান সময় নষ্ট করা ঠিকনা। বিশেষ করে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া, কিংবা শপিংমলে ঘুরাঘুরি করা। কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়া। দেশ থেকেই লিস্ট সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়াÑকী কী মার্কেটিং করা হবে! কার জন্য কী কিনে আনবে? এই জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টাকরা। বাইতুল্লায় যে উদ্দেশে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে আসা হয়েছে, সেটা যেন হাসিল হয় সেই দিকে মনোনিবেস করা।
হজের ফজিলত : হাজী সাহেবগণ হলেন, ‘যুয়ূফুররহমান’ তথা আল্লাহর ঘরের বিশেষ মেহমান। হজ করে কেউ দেওলিয়া হয় না। হাজী সাহেবদের অর্থ-সম্পদের মধ্যে আল্লাহতায়ালা বরকত দান করেন। হযরত রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি হজ করলো এবং কোনো অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করলো না, সে এমন শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরবে, যাকে তার মা সদ্য জন্ম দিয়েছে। (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্ মুসলিম)। অন্য এক হাদিসে রাসূল (সা.) কে প্রশ্ন করা হয়, কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। প্রশ্ন করা হয়, এরপর? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। প্রশ্ন আসে এরপর কোনটা? তিনি বলেন, মাবরুর হজ্। (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্ মুসলিম)। ‘মাবরুর হজ’ হলো সেই হজ, যার মাঝে হজ আদায়কারী কোনো গোনাহে লিপ্ত না হয়। রাসূল (সা.) অন্যত্র ইরশাদ করেনÑ‘হজে মাবরুর-এর একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত।’ (সহীহ্ বুখারি : ১৩৪৯; সহীহ্ মুসলিম : ১৭৭৩) যার হজ মাকবুল হবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের ফায়সালা করে রেখেছেন। একজন হাজী সাহেবের জন্য এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে? আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাবরুর হজ আদায় করার তাওফীক দান করুন আমিন।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহতামিম : মদীনাতুল উলুমতা’লিমুল কুরআন মাদরাসা। শ্রীরামপুর, রায়পুরা, নরসিংদী।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বিদায়ী ম্যাচ গোলে রাঙালেন বেনজেমা,গোলরক্ষক বীরত্বে হার এড়াল রিয়াল

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট রিজিওনাল কনফারেন্স (পিএমআরসি) অনুষ্ঠিত

এডিস মশা কামড় দেয়ার সময় চিনবেনা কে মেয়র-কাউন্সিলর ইমাম-খতিব: ডিএনসিসি মেয়র

প্রাচীন ধর্ম সনাতকে শুধু শ্রদ্ধা নয় এ সম্পর্কে জানতে হবে, ইসকনের অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান

সাংহাই উৎসবে লড়বে যেসব ইরানি ছবি

এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মেধাস্বত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : শাহরিয়ার

১০-১৫ দিনের মধ্যে বর্তমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চলছে : নসরুল

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে আজমত উল্লা খান

আগামীকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি দেয়া হবে

বাজেট সম্পর্কে আলোচনায় ডিব্রিফিং সেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে : স্পিকার

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য : প্রধানমন্ত্রী

দুর্বিষহ জনজীবন

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

গত অর্থবছরে বিমান লাভ করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা : বিমান প্রতিমন্ত্রী

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ইওয়ামা কিমিনোরি ও জিএম কাদেরের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক

নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন : আইনমন্ত্রী

লোডশেডিং আরো দুই সপ্তাহ

সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা ঠেকাবে