হালাল উপার্জন ও হালাল আহার
০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
হালাল আহারের প্রয়োজনীয়তা: ইসলাম হালাল আহারের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। একজন মুসলমানের অর্জিত সম্পদ যেন হালাল হয়, হারাম যেন না হয়, আমরা কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফ থেকে সে শিক্ষা পেয়ে থাকি। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন: ‘হে, মানব সকল! জমিনের মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র, তা থেকে ভক্ষণ কর’। (আল-বাকারা-১৬৮)
অন্যত্র আল্লাহ পাক এরশাদ করেন: ‘আল্লাহ তোমাদের হালাল ও পবিত্র রিজিক দান করেছেন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের কৃজ্ঞতা আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করো’’। (সূরা: নাহল, আয়াত : ১৪৪) পবিত্র কোরআনে হালাল ও পবিত্র রিজিক গ্রহণে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে)।
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য যাবতীয় খরচ নিখুঁত পবিত্র, সৎ অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হতে হবে। ওলি-আউলিয়া, পীর-মাশায়েখসহ সব মানুষকে হালাল খাবার গ্রহণ এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি প্রত্যেক নবীর প্রতিও বৈধভাবে উপার্জনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো এবং নেক কাজ করো। (সূরা: মুমিনুন, আয়াত-৫১)
মহানবী (সা:) এরশাদ করেন: ওই গোশত জান্নাতে যাবে না যা হারাম থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী। (ইবনে হিব্বান-১৭২৩, তিরমিজি-৬১৪) হালাল ও সৎ উপার্জনের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি স্বহস্তে উপার্জিত হালাল রিজিক আহার করল সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে”। (জামিউল আখবার-৩৯০)
এ হালাল ও পবিত্র এবং হারাম ও অপবিত্র সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসীর কারকগণ মনোজ্ঞ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তারা বলেন: ১। হালাল হচ্ছে ঐ বস্তু যা শরীয়ত হালাল করেছে।
(তাফসীর মা’আলেমুত তানজীল!)
২। হালাল হারামের বিপরীত শব্দ এবং ঐ বস্তু যাকে শরীয়ত নিষিদ্ধ করেনি। (মাজহারী-১৫৩)
৩। পবিত্র ঐ বস্তু যার সঙ্গে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত নয়। (তাফসীর কাবীরা) মূল কথা হলো বস্তু হালাল ও পবিত্র হতে হবে। এবং মৌলিকভাবে হারাম হবে না যেমন: মদ, রক্ত, মৃত বস্তু ইত্যাদি। অথবা অন্য কোন কারণে এটা হারাম হয়েছে। যেমন : ঘুষ, সুদ, দখলকারীত্ব, চৌর্য বৃত্তির সম্পদ ইত্যাদি। অর্থাৎ হালাল হচ্ছে ঐ বস্তু যার অর্জনও পবিত্র পন্থায় হয়ে থাকে এবং যার সঙ্গে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত না থাকে।
হালাল রুজির বরকত মানব জাতির চারিত্রিক উৎকর্ষতা অর্জনে এবং কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে হালাল উপার্জনের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পানাহার দ্বারা মানুষের দৈহিক স্বাস্থ্য অটুট থাকে। এবং শারীরিক শ্রী বৃদ্ধি ঘটে। পক্ষান্তরে অপরিচ্ছন্ন ও পঁচা-বাসী খাদ্যের কারণে শারীরিক রোগ-শোকের সৃষ্টি করে। এমনিভাবে হালাল ও পবিত্র বস্তু আহারের কারণে মানুষের নৈতিক ও আত্মিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও শ্রী বৃদ্ধি ঘটে এবং তার অন্তর আলোকিত হয়। ইবাদত বন্দেগীতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। প্রার্র্থিব সব কিছুর বিনিময়ে হলেও তার নিকট আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠে, পরকালে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হওয়ার আশা অন্কুরিত হয় তার পবিত্র হৃদয়ে পাপ কর্মে তার অন্তর কেপে উঠে এবং হালাল রুজির বরকতে তার দোয়া কবুল হয়। এবং সে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। হালাল রুজির বরকত সম্পর্কিত নিম্ন বর্ণিত হাদীসগুলো খুবই প্রণিধানযোগ্য।
১। ফারাজদাক (রা:) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সা:) এরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি পবিত্র আহার করে ও সুন্নতের ওপর আমল করে এবং জনগণ তার অনিষ্ঠ থেকে নিরাপদ থাকে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাব কেরামগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা:) এ ধরণের লোক তো বর্তমানে আপনার উম্মতের মধ্যে যথেষ্ট রয়েছে। তিনি বললেন, আমার পরবর্তী যগেও থাকবে।
২। রাসুল (সা:) এরশাদ করেছেন, ‘চারটি গুণ এমন যা তোমার মধ্যে যদি থাকে, তাহলে তুমি দুনিয়ার অন্য কিছু থেকে বঞ্চিত হলেও তোমার ক্ষতির কোনো আশংকা নেই। আর এগুলো হচ্ছে আমানত রক্ষা করা, সত্য কথা বলা, সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হওয়া এবং খাদ্যের ব্যাপারে বেচে চলা বা সতর্ক থাকা। (ইমাম আহমদ ও তাবরানী)
৩। যে ব্যক্তি লাগাতার চল্লিশটি সকাল হালাল খাদ্য গ্রহণ করে আল্লাহ তার অন্তরকে আলোকিত করেন এবং তার মুখ থেকে জ্ঞান বিজ্ঞানের ফল্গুধারা প্রবাহিত করেন। যে ব্যক্তি হালাল রুজি দ্বারা নিজ পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণের চেষ্টা করেন সে আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ হিসেবে পরিগণিত হবে।
(শরহে আরবাঈন লিসারাখসি)
আল্লামা ইকবাল বলেন: অর্থাৎ ধর্মের রহস্য হচ্ছে সত্য কথা, হালাল খাবার, আল্লাহর সঙ্গে একাকীত্ত ও তার প্রকাশিত রুপ ও সৌন্দর্যের তামাসা উপভোগ। হালাল রুজি দ্বারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধি পায়। হালাল রুজি দ্বারা আল্লাহর প্রেম লাভ হয় এবং অন্তর বিগলিত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হলো যে, আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও রাসুল (সা:) এর প্রিয় উম্মত হতে হলে হালাল রুজি ভক্ষণ করা ছাড়া বিকল্প কোনো পন্থা নেই। সুতরাং আল্লাহ পাক আমাদেরকে হালাল রুজি অর্জণ ও ভক্ষণ করার তৌফিক দান করুণ, আমিন। (সমাপ্ত)
লেখক: অধ্যক্ষ, মাদারীপুর আহমাদিয়া কামিল মাদ্রাসা, কুকরাইল, মাদারীপুর।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
থিনেস্ট স্বাস্থ্যের