অনন্য আধ্যাত্মিক কর্মবীর
০৮ মে ২০২৫, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৫, ১২:১৩ এএম

আমাদের প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশধারায় শাহানশাহে সিরিকোট, আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ পেশোয়ারী, সিরিকোটি (রা) এক অনন্য সাধারণ আধ্যাত্মিক কর্মবীর। মাতৃভূমির গভীর মায়াবী বন্ধনকে ছিন্ন করে গত চৌদ্দশো বছরে যে সব মর্দে মূমিন সৈয়্যদজাদা পৃথিবীর দেশে দেশে প্রতিকূল পরিস্থিতিকে তোয়াক্কা না করে মদিনার ইসলাম কে পৌঁছে দিতে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, হযরত সিরিকোটি (জন্ম ১৮৫২-৫৬, ইন্তেকাল ১৯৬১) তাঁদের মধ্যে অন্যতম এক সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। শৈশবে কোরআন হিফয সমাপ্তি এবং ১৮৮০ তে, ‘মমতাজুল মুহাদ্দেসিন যোগ্যতা অর্জন করে তিনি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। এরপর কয়েক বছর সংসার জীবন কাটানোর পর, তিনি কলেমার দাওয়াত নিয়ে স্বদেশ ( বর্তমান-সিরিকোট, খাইবার পাখতুন খোয়া, পাকিস্তান) ছেড়ে পাড়ি জমান দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে তিনি ইসলাম প্রচারের ব্রত ছাড়াও সুন্নতি পেশা হিসেবে ব্যবসায় করে রুটি রুজি যোগাড়ের কাজও করতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বন্দর এলাকা ক্যাপ্টাউন, মোম্বাসা, জাঞ্জিবারের একটি বিশাল কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে কলেমা পড়িয়ে মুসলমান বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন। তাঁকে এতদঞ্চলের প্রথম সফল ইসলাম প্রচারক হিসেবে গণ্য করা হয়। এই অঞ্চলের নব দীক্ষিত মুসলমানদের জন্য প্রথম জামে মসজিদটি তিনি তাঁর অর্জিত সম্পদ খরচ করে নির্মাণ করে দেন (১৯১১ খ্রিস্টাব্দে) এবং তা দেখভাল করার জন্য সহোদর ভাই সৈয়্যদ ইউসূপ শাহ্ কে দায়িত্ব অর্পণ করেন। এরপর, এক পর্যায়ে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। পাকিস্তানের প্রখ্যাত গবেষক প্রফেসর ডক্টর মাসউদ আহমদ,আল্লামা সৈয়্যদ আমির শাহ্ গিলানী, আল্লামা আবদুল হাকিম সরফ কাদেরী, মুফতি আবদুল কাইউম হাজারভী, আল্লামা মমতাজ আহমদ ছদীদি আল আজহারী এবং ডক্টর ইব্রাহিম এম মাহদী সহ বহু খ্যাতিমান লেখকের কলমে এই তথ্য ওঠে এসেছে।
দেশে ফেরার কয়েক বছর পর তিনি স্বদেশের হাজারা জেলার হরিপুর বাজারে কাপড়ের ব্যবসায়, এবং নিকটস্থ চৌহর শরীফের বিখ্যাত পীর, খলিফায়ে শাহে জীলান, খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী খিজিরি (রা)›র হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। এই কামিল পীর খাজা চৌহরভী (রা) প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকা সত্বেও পৃথিবীতে অদ্বিতীয় ৩০ পারা দরুদ শরীফ গ্রন্থ ্রমজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামগ্ধ সহ বহু জরুরি কিতাব রচনা করেন শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞান ্রইলমে লাদুন্নিগ্ধ র মাধ্যমে। এমন উচ্চতর আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন পীরের সান্নিধ্যে তিনি নিজেকে এমনভাবে বিলিয়ে দিয়েছিলেন যে, পীরখানার মেহমানদের রান্নাঘরের জন্য ১৮ মাইল (২৫ কিমি) দুর থেকে নিজ কাঁধে করে প্রতিদিন লাকড়ি নিয়ে আসতেন। পরিণামে তাঁর হাতে ও কাঁধে স্থায়ী জখমের চিহ্ন সমগ্র জীবন শোভা পেয়েছিল। কেউ ওটা কীসের জখম জানতে চাওয়ায় তিনি বলেছিলেন, ্র ইয়ে বা›জি কা (পীর খাজা চৌহরভী) মোহর হ্যায়গ্ধ- মহব্বতের সিলমোহর! এক সময় তিনি সংসার ছেড়ে পাহাড় -জঙ্গলে গিয়ে একান্ত ইবাদাতে চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর পীর গাউসে দাওরাঁ, খাজা চৌহরভী (রা) তাঁকে অনুমতি না দিয়ে বলেছিলেন, ্রএভাবে পাহাড়ে জঙ্গলে গিয়ে আল্লাহর ইবাদতের চেয়ে জন সমাগমে গিয়ে মানুষ কে দ্বীনের পথে আনার কাজ করা অনেক বেশি উত্তম ্র, সুবহানাল্লাহ্। শেষ পর্যন্ত, লাহোর বাদশাহী জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব নিতেও চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুরদৃষ্টিসম্পন্ন পীরে কামেল চৌহরভী (রা) সিরিকোটি হুজুরকে সেই অনুমতিও দেন নি। বললেন, রেঙ্গুন যাও। আর, পীরের এই নির্দেশেই , দ্বীনের খেদমতে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে , অন্তত ৬৪ বছর বয়সে সিরিকোটি হুজুর চলে আসলেন রেঙ্গুনে। এখানে তিনি রেঙ্গুনস্থ বাঙালি সুন্নি জামে মসজিদের ইমাম এবং খতিব হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে শুরু করেন ইসলামের প্রচার -প্রসারের এবং মানুষের আত্মশুদ্ধির কাজ। ১৯২৪ ‹র ৪-জুলাই,জুমাবার (১ জিলহজ্জ ১৩৪২) তারিখে তাঁর পীর -মুরশিদ খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (রা.) ইন্তেকাল করেন। এর অন্তত এক বা দুইবছর আগে প্রথমে, চৌহরভী হুজুর তাঁর প্রধান খলিফা মনোনীত করে সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরিয়ার সাজ্জাদানশীন হিসেবে দায়িত্ব দেন সিরিকোটি সাহেব (রা.) কে। এরপর, অতি সংগোপনে উচ্চাঙ্গের আরবী ভাষায় পীর সাহেব কর্তৃক রচিত ত্রিশ পারা বিশিষ্ট, বিশাল দরুদ শরীফের অদ্বিতীয় গ্রন্থটি ছাপানোর দায়িত্ব অর্পণ করে বলেন, এই দরুদ শরীফের কিতাবটির ছাপার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেঙ্গুন থেকে নিজ বাড়ি সিরিকোটে আসবার কোন অনুমতি নেই। পীরের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে তিনি লাগাতার ষোলটি বছর রেঙ্গুনে কাটিয়ে দেন। এই সময়ের মধ্যেই ইন্তেকাল করেছিলেন তাঁর পীর খাজা চৌহরভী (রা), তাঁর বড় শাহজাদা মৌলানা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ সালেহ শাহ্ (১৯২৮) সহ আরো আপনজন। দরুদ গ্রন্থটি ছাপানোর কাজ শেষ হবার পর, ১৯৩৫ এর ১৬ ফেব্রুয়ারী তিনি সর্বপ্রথম রেঙ্গুন থেকে স্বজনদের দেখতে এবং পীরের জেয়ারাতের উদ্দেশ্যে স্বদেশ গমন করেন,
( রিপোর্ট, শূরা এ রহমানিয়া-রেঙ্গুন, তফাজ্জল হক সম্পাদিত)। এরিমধ্যে তাঁর পীর খাজা চৌহরভীর হাতে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের হাজারা জেলার হরিপুর বাজারে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম ইসলামিয়া রহমানিয়া কে দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের এক শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করেন, এবং একে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধতম ধারা ্রমসলকে আ›লা হযরতগ্ধ চর্চার এক মহা কেন্দ্রে পরিণত করেন। এই মাদ্রাসায় ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৮ অবিভক্ত পাকিস্তানের মন্ত্রী ও গভর্নর সর্দার আবদুর রব নিশতার এবং ২২ মার্চ ১৯৪৯ পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খাঁন এই মাদ্রাসা পরিদর্শন করে প্রকৃত আলেম তৈরিতে এর অসাধারণ অবদানের প্রশংসা করেছিলেন। (প্রফেসর ডক্টর মাসউদ আহমদ, ইফতিতাহিয়া)। ১৯২৫›র ১৫ ফেব্রুয়ারী তাঁর পীর কর্তৃক অর্পিত জিম্মাদারি সুচারুভাবে পরিচালনা করতে তিনি রেঙ্গুনেই প্রতিষ্ঠা করেন “আনজুমানে শূরায়ে রহমানিয়া” নামের একটি সংগঠন। পরবর্তীতে ১৯৩৭’র ২৯ আগষ্ট তারিখে এই আনজুমানের চট্টগ্রাম শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়, যারই পরবর্তী রুপ হলো- “আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট” (পর্যায়ক্রমে ২২ জানুয়ারী ১৯৫৪ এবং ১৮ মার্চ ১৯৫৬›র সিদ্ধান্ত অনুসারে)।
রেঙ্গুনে তাঁর হাতে যে সব ব্যক্তিত্বরা মুরীদ হয়ে ধন্য হয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রাণপ্রিয় সিরিকোটি হুজুর কে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন তাঁদের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় ছিলেন চট্টগ্রাম সংবাদ পত্র শিল্পের পথিকৃৎ আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার (১৯২০), মাস্টার আবদুল জলিল (বি এ-১৯২০), সূফী আবদুল গফুর, মাস্টার আবদুল লতিফ, ডাক্তার মোজাফফরুল ইসলাম (এম বি -১৯২০) অন্যতম।
সিরিকোটি হুজুর ১৯৪০-৪১›র দিকে ঘোষণা করেন যে, রেঙ্গুনে বোমা পড়বে, এবং জান মালের বড় ক্ষতি হবে, তাই সবাই নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওগ্ধ। এরই প্রেক্ষিতে, তাঁর সব মুরীদ ভক্তদের নিয়ে তিনি নিজে ১৯৪১›র ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই রেঙ্গুন ত্যাগ করেন। তাঁর একান্ত রেঙ্গুন ঘনিষ্ঠ মুরীদ হাফেজ দাউদজী বাগিয়া পরিবারের তথ্য মতে, ৮ ডিসেম্বর ১৯৪১ তারিখেই তাঁরা রেঙ্গুন ত্যাগ করে নিজ দেশে, ভারতের সূরাটে চলে যান, এর পরপরই ২৩ ডিসেম্বর ১৯৪১ রেঙ্গুনে ভয়াবহ বোমা হামলা করে জাপান (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণতিতে) এবং জান-মালের অপূরণীয় ক্ষতির পাশাপাশি রেঙ্গুনের পতন ঘটে এই হামলায়। সেই সাথে সিরিকোটি হুজুরের রেঙ্গুন মিশনও সমাপ্ত হয়। একুশ বছরের রেঙ্গুন প্রবাসে তাঁর হাতে হাজার হাজার ভিনধর্মী ইসলাম কবুল করেন, এবং রেঙ্গুনের অন্ধকারে ডুবে থাকা অসংখ্য মানুষ আলোকিত জীবন, এমনকি বেলায়েত লাভ করেন।
তিনি আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সহ চট্টগ্রামের বিশিষ্ট মুরীদদের দাওয়াতে এবং তত্বাবধানে প্রথমে ১৯৩৫-৪১ পর্যন্ত করাচি- কলিকাতা - রেঙ্গুনের পানিপথে যাত্রা বিরতি হিসেবে কয়েকদিনের জন্য চট্টগ্রাম অবস্থান করতেন। ১৯৪২ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত লাগাতার তিনি চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করে শরিয়ত -ত্বরিকতের অসাধারণ সেবা দান করেন। তাঁর বাংলাদেশ (বর্তমান) মিশনের পুরোটাই ছিল আন্দরকিল্লা কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস তথা দৈনিক আজাদী ভবনে, যা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাহেবের নিজস্ব বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো একই সময়ে। এই সময়ে তাঁর হাতে রাউজান দারুল ইসলাম (বর্তমানে কামিল-মাস্টার্স) মাদ্রাসা সহ বহু দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং পুনর্জীবন লাভ করে। তাঁর এই সময়কার ঐতিহাসিক অবদান হলো চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা। ১৯৫৪ তে এর ভিত্তি দেওয়া হয় এবং ১৯৫৬ তে এর শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী। প্রথমে এর নাম মাদ্রাসা এ আহমদিয়া সুন্নিয়া (১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৪) রাখা হলেও, ১৯৫৬›র ২৫ জানুয়ারী এক সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বলা হয়, যেহেতু এই মাদ্রাসা কে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হবে, তাই এর নামের সাথে ্র জামেয়া ্র শব্দটি যুক্ত করে নতুন নাম, ্র জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়াগ্ধ রাখা হলো। আলহামদুলিল্লাহ, আজ এই মাদ্রাসায় অনার্স-মাস্টার্স সহ কোরআন, হাদিস, ফেকাহ্ শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা চলছে। বর্তমানে এটি দেশের সুন্নি মুসলমানদের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে, এবং জাতীয়ভাবে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিগত সত্তুর বছর ধরে এই মাদ্রাসা হাজার হাজার সাচ্চা আলেম তৈরি করে দ্বীন ইসলাম ও শরিয়ত ত্বরিকতের বিশুদ্ধতা রক্ষায় আলোক বর্তিকা হিসেবে অবদান রেখে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ১৯৫৮› পর্যন্ত সফরে এদেশে তাঁর হাজার হাজার মুরিদ ভক্ত তৈরি হয়, যাঁদের অধিকাংশই নিজেদের শরিয়ত ত্বরিকতের খেদমতে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। তাঁর বাণী ছিল - মুঝেহ দেখনা হ্যায় তু মাদ্রাসা কো দেখো- মুঝসে মোহাব্বত হ্যায় তু মাদ্রাসা কো মহব্বত কারোগ্ধ। মুরিদরা তা নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করে আসছে বলেই আজ তাঁর প্রতিষ্ঠান আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট›র হাতে শত শত মাদ্রাসার জন্ম এবং লালন পালন সম্ভবপর হয়েছে। তিনি এদেশের মানুষকে খুব বেশি ভালোবেসে বুকে টেনে নিয়েছেন। ইন্তেকালের কয়েকদিন আগে (১৯৬১›র এপ্রিলে), পাকিস্তানের সিরিকোট শরীফে সফররত তাঁর খুবই স্নেহের মুরিদ আবু মুহাম্মাদ তবিবুল আলম কে বলেছিলেন --গ্ধ আবু মিয়া! জিসিম মেরা সিরিকোট মে হ্যায় - মগর রুহ মেরা বাঙ্গাল মে পড়া হুয়া হ্যায়গ্ধ। তিনি নাকি কখনো কখনো এমনও বলেছেন যে --›বাঙালিও কা সাত মেরা হাশর হোগা›। ‹মাই ভি বাঙালি হো›। ইত্যাদি। শুধু এদেশে নয়, ভারত, পাকিস্তান, আরব সহ বিভিন্ন দেশে ছিল তাঁর বিরল খেদমতের চিহ্ন। তাঁর শতাধিক বছরের ইহজীবনের পুরোটাই ছিল দ্বীনের জন্য উৎসর্গিত। এমনকি যখন চট্টগ্রামের এই জামেয়া তিনি প্রতিষ্ঠা করছিলেন, তখন তাঁর বয়স শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছিল। তাঁর বিরল কৃতিত্বের অন্য দিকটি হলো উপযুক্ত আওলাদ রেখে যেতে পারা। মাতৃগর্ভের অলী, গাউসে জামান আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ তৈয়ব শাহ্ ছিলেন তাঁর এমন এক বুজুর্গ শাহজাদা যিনি বাংলাদেশ, রেঙ্গুনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ্রজসনে জুলুসগ্ধর রূপকার। যাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শত শত মাদ্রাসা এবং পুনর্জীবন লাভ করেছে সুন্নি জামাআত। তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ›র মতো একটি অদ্বিতীয় মানের সংগঠন, যা করোনাকালে আশ্রয়স্থল হিসেবে বাংলাদেশ দেখেছে। তাঁর বড় নাতি হলেন, লাখো লাখো মানুষের পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী, যাঁর হাতে প্রবর্তিত জসনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড়, ষাট-সত্তর লাখ মানুষের মহা শোভাযাত্রার মর্যাদা পাচ্ছে। আর, ছোট শাহজাদা হলেন, পীরে বাঙাল, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্। যাঁর জন্মের পর দাদাজি সিরিকোটি ভবিষ্যত বাণী করে বলে ছিলেন, সাবির শাহ্ পাকিস্তান কা লিডার হোগা, আউর বাঙাল কা পীর হোগাগ্ধ। আলহামদুলিল্লাহ, সত্তর বছর আগে করা মন্তব্য আজ দিনের আলোর মত সত্য হয়ে গেছে। তিনি পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে অল্প বয়সেই (১৯৯৩) মূখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। এখনো তিনি সেদেশে সিনেটর হিসেবে পরম সম্মানিত। আর, বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি বাঙালিদের পরম সম্মানিত পীর সাহেব হিসেবেও পরিচিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সমগ্র পাকিস্তান তাঁকে পীর সাবির শাহ্ নামেই চেনে জানে। পার্লামেন্টেও তিনি এই উপাধিতে সম্বোধিত হয়ে আসছেন --- কারণ এই উপাধি তাঁকে সেই বাচ্চা বয়সেই দিয়েছিলেন তাঁর বুজুর্গ দাদাজান কেবলা সিরিকোটি হুজুর।
সিরিকোটি হুজুর বলতেন, বা›ত কম, কা›ম জেয়াদাগ্ধ -কথা কম, কাজ বেশি। বলতেন, ্রফকিরি টকিরি মত করো, সাদাসিধা মুসলমান বন যাও, দ্বীন কা খেদমত কারোগ্ধ। তিনি চাইতেন, কেউ কেউ শুধু নিজে নিজে জান্নাতে যাবার জন্য সংসার, ব্যবসায়,কাজ-কর্ম ইত্যাদি ছেড়ে ইবাদাতে মশগুল হয়ে যাবে তা তিনি পছন্দ করতেন না, বরং তিনি চাইতেন তাঁরা এমন কাজ করুক যাতে তাঁর খেদমতের কারণে হাজার হাজার বান্দা জান্নাতের পথে চলতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ, তাই, এখানে তাঁর দরবারের মুরিদদের প্রধান কাজই দেখা যায় দ্বীনের সেবা-আর মানুষের সেবা। সৃষ্টির সেবাইতো ত্বরিকত।
লেখক: মুখপাত্র, আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

চকরিয়ায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু

এবার ইরানের রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা ইসরাইলের

মাগুরার গ্রামে সংঘর্ষে হাতবোমা বিস্ফোরণ বোমাবাজসহ তিনজন গ্রেফতার, আহত ১০ জন

সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মোদিকে মমতার চিঠি

পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা

মারা গেছেন শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুর

ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করলেন ট্রাম্প

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ২ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

বিদেশী জিহাদী কাফেলা আখ্যা দিয়ে ‘কাফেলাতুস সুমুদকে’ প্রতিরোধের ঘোষণা ইসরাইলের

ঈদের ছুটি শেষ : সরকারি-বেসরকারি কলেজ খুলবে রোববার

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান নিহত

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা, পাল্টা জবাবের আশঙ্কায় ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

অবাধে চলছে রেনু পোনা শিকার, ধ্বংস হচ্ছে নদীর জীব বৈচিত্র্য

তেহরানের আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

ইরানে হামলা: ট্রাম্পের সহযোগী বলল ‘খেলা শুরু’

পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, বিএনপি অফিস ভাংচুর

মধ্যরাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে

উইম্বলডনের প্রাইজমানি বাড়ল ৭ শতাংশ

ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপির কর্মী সম্মেলনে মানুষের ঢল

যশোর রেলস্টেশনে ভারতীয় কসমেটিকসহ আটক ৩