ইসলামি মূল্যবোধের শিক্ষা কেন প্রয়োজন?

Daily Inqilab মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন

০৮ মে ২০২৫, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৫, ১২:১৩ এএম

বর্তমান জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে সেকুলারিজম ভিত্তিক। ব্রিটিশ প্রদত্ত নিয়মেই চলছে এদেশের শিক্ষানীতি। কুরআন হাদীস শিক্ষা বাদ দিয়ে ইসলাম শিক্ষার বিপরীত একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পূর্নাঙ্গ ইসলামকে শিক্ষার্থীদের কাছে পেশ না করার অপচেষ্ঠা চলছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা নৈতিকতাহীন জীবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বিগত কয়েক যুগ ধরে কুরআন হাদীস শিক্ষাকে সংকুচিত ও খন্ডিত করে শিক্ষার্থীদের কাছে পেশ করা হয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীতে ইসলাম ধর্ম শিক্ষাকে ঐচ্চিক রাখা হয়েছে। ফলে আদর্শ,সৎ, চরিত্রবান নাগরিক বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে না। কবি ইকবাল বলেছেন, ধার করা শিক্ষায় আদর্শ মানুষ তৈরি হতে পারে না। আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রবান মানুষ তৈরি করতে হলে অবশ্যই ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যে ধর্ম মানুষকে ন্যায়নীতি আদর্শের শিক্ষা দিয়েছে। অন্যকোন ধর্ম মানুষকে এতগুলো ন্যায়-নীতি আদর্শের শিক্ষা দেয়নি। ইসলাম শিক্ষার অভাবে মুসলিম জাতি আজ সমগ্রবিশ্বে প্রতি পদে পদে বিপর্যস্ত ও পদদলিত। ন্যায়নীতি শিক্ষার অভাবে আজ অফিসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে বয়-বেয়ারা পর্যন্ত সর্বস্তরের কর্মচারি দূর্নীতিগ্রস্থ। ঘুষ,দূর্নীতি,ধর্ষন,কালোবাজারি,টাকা পাচারের সাথে জড়িত অধিকাংশ মানুষ প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষন, প্রতিবন্ধি শিশুকে ধর্ষন,খুনের মত নৃসংশ ও মর্মান্তিক খবর প্রতিনিয়ত গনমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছ। এসব ঘঠনা বিশ্লেষন করলে বুজা যায়, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা একান্ত অপরিহার্য। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। আর নৈতিকতা মানুষকে অপরাধ থেকে দূরে রাখে। ইসলামের মূলনীতি শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা মৃত্যুযন্ত্রনা, হাসরের ময়দানে পার্থিব জীবনের কৃতকর্মের হিসাব দান,পাপ পূন্যের বিচার,বেহেস্তের শান্তি ও দূযগের শাস্তি সম্পর্কে অধ্যায়ন করে খোদাভীরু ও উন্নত চরিত্রের অধিকারি সৎ- নিষ্ঠাবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহন করার পর নৈতিকতা ও মানবিকতা থেকে শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। এজন্য পবিত্র কোরআনে সর্বপ্রথম কুরআন হাদীসের এলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ করা হয়েছে। কুরআন হাদীস ও ইসলামি জ্ঞান অর্জন ছাড়া কোন জ্ঞানই পরিপূর্নতা লাভ করেনা। কুরআন ও হাদীস জেনারেল শিক্ষায় পরিপূর্নভাবে অর্ন্তভুক্ত না করার কারনে অধিকাংশ ছাত্ররা বিপদগামী হচ্ছে। ইসলামি জ্ঞান ও নৈতিকতার অভাবে কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মধ্য নীতি আদর্শের অভাব দিন দিন পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার কারনে জেনারেল শিক্ষিত ছাত্ররা যখন তখন বিভিন্ন খারাপ কাজে জড়িয়ে পরতেছে। কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাধকাসক্ত হয়ে পড়তেছে। তারা কলেজ ইউনিভার্সিটিতে নারীদের যৌন হয়রানি করতেছে।
তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে বিভিন্ন খারাপ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতেছে। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল কলেজে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি ভাঙ্গচুর, হল দখল,সিট বানিজ্য,মাদকদ্রব্য ক্রয় বিক্রয়ের মত অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন সময় ছাত্ররা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে কলেজ ও ইউনিভার্সিটির বহু শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করার নজির সৃষ্টি করেছে। অথচ কখনো শুনিনি কোন মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র মাদ্রাসার দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি, মাদকদ্রব্য গ্রহন কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষক ধরে পেঠাতে। মাদ্রাসা শিক্ষায় সর্বপ্রথম কুরআন হাদীস শেখানো হয় বিদায় তারা নৈতিক শিক্ষা অর্জন করে। ইসলামি নৈতিক শিক্ষা অর্জন করার মাধ্যমে একজন ছাত্র ছাত্র জীবনে মা-বাবা, আতœীয়-স্বজন, শিক্ষক ও প্রতিবেশির সাথে কিভাবে আচরন করতে হবে, তাদের কিভাবে সম্মান করতে হবে এবং কিভাবে তাদের হক আদায় করবে তার যথাযত শিক্ষা ও নির্দেশনা লাভ করে। মানুষের চরিত্র গঠনে শ্রেষ্ঠ কারখানা হচ্ছে মাদ্রাসা।

মাদ্রাসা শিক্ষা হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়মুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। সৎ চরিত্রবান এবং নৈতিক আদর্শ ভিত্তিক নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা প্রয়োজন। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় সফলতা অর্জন করার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।

মাদ্রাসা শিক্ষাকে এখন আগের মত ভিক্ষা করে দেওয়া শিক্ষা বলা যাবেনা। কারন বর্তমানে মাদ্রাসায় পড়ে অনেক ছাত্র ঢাকা ইউনিভার্সিটি ও বুয়েটে চ্যান্স পাচ্ছে।

আগেরকার যুগে মাদ্রাসায় পড়ে বড় বড় মুসলিম মনীষিরা বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও গনিত শাস্ত্রে অবদান রেখেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানে প্রায় অবদান আল কুরআন রিচার্স করে অর্জন করেছে। নানান রখম চিকিৎসা পদ্ধতির আবিস্কারের পেছনে মুসলমানদের অবদান রয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

একজন ডাক্তার ও একজন আইনজীবী মধ্য ধর্মীয় জ্ঞান না থাকার কারনে সে তার পেশাকে সেবামূলক পেশা হিসেবে নিচ্ছে না। এতএব ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে আধুনিক শিক্ষা অর্জন করে লাভটা কি হল? অথবা ধর্মীয় শিক্ষা স্কুল কলেজ থেকে সংকুচিত ও খন্ডিত করে ব্রিটিশদের চালু করা আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজন কি?

সন্তানের জন্য যে শিক্ষিটা আগে দরকার সেটা হল নৈতিক শিক্ষা। এই নৈতিক শিক্ষাটা জানার জন্য কুরআন হাদিস পড়তে হবে। এজন্য আমাদের বর্তমান জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলা, গনিত,ইংরেজি,বিজ্ঞান শিক্ষার পাশপাশি কুরআন- হাদিস শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কুরআন হাদিসের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে একজন সত্যিকারের নৈতিক চরিত্রবান ও বিবেকবান মানুষ তৈরি করতে হবে। সন্তানের জন্য বেশি সম্পদ জমা না করে, সন্তানকেই সম্পদ বানিয়ে যান। সন্তানকে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার বানানোর আগে মানুষ বানান। শুধুমাত্র শিক্ষিত নয়, সুশিক্ষিত করার জন্য জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। ইসলাম শিক্ষা মানুষকে একজন যথার্থ নৈতিক গুনসমপন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

মালেশিয়া ইরানসহ পৃথিবীর অনেক দেশে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে সব মুসলিম শিক্ষার্থীর জন্য ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাধ্যতামূলক চালু আছে। ইজরাইলের মত একটি দেশ ধর্মীয় শিক্ষাকে তাদের সিলেবাসে বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। বড় দুঃখের বিষয় বিদেশীর চাপে আমাদের দেশে তা করা হয়নি।

বিশ্ব মানবতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় নৈতিক গুনাবলিসমৃদ্ধ জাতি গড়ে তোলার একমাত্র পথ হলো সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে চলা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘’নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য একমাত্র জীবনাদর্শ’’।

পরিশেষে বলব, বাংলাদেশে জেনারেল শিক্ষায় কুরআন হাদীস বাধ্যতামূলক অর্ন্তভূক্ত করা হোক। এবং বিবর্তনবাদের মত কূ-শিক্ষা সিলেবাস থেকে তুলে দেওয়া হোক।

লেখক : সংস্কারক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসরাইলকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে : আলী খামেনি

ইসরাইলকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে : আলী খামেনি

যুক্তরাজ্য সফরে পাচারের অর্থ পুনরুদ্ধার বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে : প্রেস সচিব শফিকুল আলম

যুক্তরাজ্য সফরে পাচারের অর্থ পুনরুদ্ধার বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে : প্রেস সচিব শফিকুল আলম

ইরানের পাল্টা হামলা হতে পারে ভয়াবহ-ব্যাপক

ইরানের পাল্টা হামলা হতে পারে ভয়াবহ-ব্যাপক

প্রধান উপদেষ্টার সাথে হাউস অব কমন্সের স্পিকারের বৈঠক

প্রধান উপদেষ্টার সাথে হাউস অব কমন্সের স্পিকারের বৈঠক

ইরানে ইসরাইলি হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নেই : দাবি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ইরানে ইসরাইলি হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নেই : দাবি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

চকরিয়ায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু

চকরিয়ায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু

এবার ইরানের রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা ইসরাইলের

এবার ইরানের রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা ইসরাইলের

মাগুরার গ্রামে সংঘর্ষে হাতবোমা বিস্ফোরণ বোমাবাজসহ তিনজন গ্রেফতার, আহত ১০ জন

মাগুরার গ্রামে সংঘর্ষে হাতবোমা বিস্ফোরণ বোমাবাজসহ তিনজন গ্রেফতার, আহত ১০ জন

সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মোদিকে মমতার চিঠি

সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মোদিকে মমতার চিঠি

পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা

পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা

মারা গেছেন শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুর

মারা গেছেন শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুর

ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করলেন ট্রাম্প

ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করলেন ট্রাম্প

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ২ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ২ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

বিদেশী জিহাদী কাফেলা আখ্যা দিয়ে ‘কাফেলাতুস সুমুদকে’ প্রতিরোধের ঘোষণা ইসরাইলের

বিদেশী জিহাদী কাফেলা আখ্যা দিয়ে ‘কাফেলাতুস সুমুদকে’ প্রতিরোধের ঘোষণা ইসরাইলের

ঈদের ছুটি শেষ : সরকারি-বেসরকারি কলেজ খুলবে রোববার

ঈদের ছুটি শেষ : সরকারি-বেসরকারি কলেজ খুলবে রোববার

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান নিহত

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান নিহত

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা, পাল্টা জবাবের আশঙ্কায় ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা, পাল্টা জবাবের আশঙ্কায় ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

অবাধে চলছে রেনু পোনা শিকার, ধ্বংস হচ্ছে নদীর জীব বৈচিত্র্য

অবাধে চলছে রেনু পোনা শিকার, ধ্বংস হচ্ছে নদীর জীব বৈচিত্র্য

তেহরানের আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

তেহরানের আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

ইরানে হামলা: ট্রাম্পের সহযোগী বলল ‘খেলা শুরু’

ইরানে হামলা: ট্রাম্পের সহযোগী বলল ‘খেলা শুরু’