ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩ | ১৬ চৈত্র ১৪২৯
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

উস্তাযুল হুফ্ফাজ হাফেজ হাফিজুল্লাহ (রহ.)-এর বর্ণাঢ্য জীবন

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউল হক

০৮ মার্চ ২০২৩, ১০:০২ পিএম | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৫ পিএম

পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ : স্বাধীনতার পরবর্তী বছর ১৯৭২ সালে মরহুম হাফেজ আবুল কাসেম (রহ.) গ্রামের বাড়ি চৈতন্যা চলে আসেন। মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্বভার তাঁরই সুযোগ্য সন্তান হাফেজ হাফিজুল্লাহ-এর হাতে বুঝিয়ে দেন। সেই থেকে মৃত্যু অবধি দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় তারই হাতে মাদরাসা পরিচালিত হয়ে আসছিল। সেই পুরোন টিনের ঘর থেকে উন্নত হতে হতে মাদরাসার ক্যাম্পাস আজ সুদৃশ্য প্রাসাদে সুসজ্জিত। মাদরাসার দক্ষিণ পাশে সুরম্য তিন তলা ও পশ্চিমে দু’তলা হিফজ বিভাগের ভবনসহ দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। নতুন বিভাগ চালু, ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঈর্ষণীয় পর্যায় পৌঁছে। এ সময় তিনি দক্ষিণ মির্জানগর মাদরাসার নিষ্ঠাপূর্ণ সুষ্ঠু পরিচালনার পাশাপাশি আরও বহু মাদরাসার পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পালন করেন। মির্জানগর মাদরাসার প্রতিটি ধূলিকণা ও ইট-বালির সাথে মিশে আছে তাঁর ত্যাগ, শ্রম ও ঘামঝরা মেহনত।
নির্জন রাতের রোনাযারি : হুজুর রাতের শেষ প্রহরে ওঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে রোনাযারি করতেন। এ সময় চোখের অশ্রুতে গন্ডদেশ ভিজে যেত। আল্লাহর ‘গাইবি খাজানা’ থেকে মাদরাসার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ব্যবস্থাপনার জন্য দোয়া করতেন। দোয়ার মধ্যে ছাত্রদের নাম ধরে ধরে বলতেন হে আল্লাহ! ‘ওমুককে হাফেজ, আলেম, মুহাদ্দিস ও শাইখুল হাদিস বানিয়ে দিন।’ যাদের নাম ধরে তিনি দোয়া করেছেন, তারা আজ দেশে-বিদেশে অত্যন্ত সুনামের সাথে দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন; ইমাম, খতিব, মুফতি, মুহাদ্দিস ও শাইখুল হাদিসের পদ অলংকৃত করে আছেন। মাওলা এহসানুল্লাহ সন্দ্বীপি (রহ.)-এর হাতে বায়আত হয়েছিলেন। শেষ জীবনে তিনি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান (পীর সাহেব দেওনা)-এর কাছে বায়াত হন। বিভিন্ন দ্বীনি বিষয়ে তাঁর সাথে পরামর্শ করতেন।

কোরআনী কারামত : নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন কোরআনী অর্থাৎ কোরআনের মানুষ। কোরআন মিশে ছিল তাঁর রক্ত-কণিকায়, অস্তিমজ্জায়। কোরআন ছিল তাঁর শক্তি সঞ্চয়ের কেন্দ্র। কোরআনের প্রতিই ছিল তাঁর সকল আস্থা ও ভরসা। কোরআনই ছিল তার সকল অনুরাগের ঠিকানা ও সারা জীবনের সাধনা। ঐন্দ্রজালিক পৃথিবীর চাকচিক্য ও রূপ-রস-গন্ধ তিনি অবজ্ঞাভরে পাশ কাটিয়ে চলেছেন। দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও শোভা-সৌন্দর্য তার কাছে ছিল মূল্যহীন। হাফিজুল্লাহ রহ.-এর যবান কখনো বন্ধ থাকত না। সবসময় তার ঠোঁট নড়ত। নড়ছে তো নড়ছেই! হয় তিলাওয়াত, নয় জিকির এভাবে কোনো না কোনো আমল চলমান থাকত। ঠোঁট বন্ধ থাকা অবস্থায় মানুষ তাকে খুব কমই দেখেছে। হুজুরের দীর্ঘ দিনের খাদেম হাফেজ খুরশেদ আলম বলেন, ‘শরমিতা হাসপাতালে ২৪ দিন অজ্ঞান থাকা অবস্থায় এবং মৃত্যুর পূর্বে যখন অজ্ঞান হয়ে যেতেন তখনও মুখে কোরাআনের তেলাওয়াত জারি থাকত। এক মূহূর্তের জন্যও তেলাওয়াত বন্ধ হত না। একবার হুজুরের মেয়ে পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। এমন সময় ইচ্ছা করে এক জায়গায় ভুল পড়লেন। হুজুর অজ্ঞান অবস্থায় থেকেও হাতের ইশারায় ভুল ধরে দিলেন। হাফিজুল্লাহ রাহ.-এর ছোট ভাই আহসানুল্লাহ সাহেব বলেন, ‘একবার শরমিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দায়িত্বরত ডাক্তার চেকাপ করার জন্য আসেন। ডাক্তার চেকাপ না করে দুই হাত গুটিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। হাফেজ খুরশেদ বললেন, ‘কী ব্যাপার চেকাপ করছেন না যে? ডাক্তার বললেন, ‘টেস্টপিস যেখানেই ধরি সেখান থেকে স্টেথোস্কোপে জিকিরের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।’ রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মজলিশে ! রায়পুরা বাঁশগাড়ী গ্রামের তাবলীগের একজন প্রবীণ মুরব্বী মাওলানা তাজুল ইসলাম। যিনি আবুধাবিতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালের পূর্বের একটি ঘটনা। একবার আমি স্বপ্নযুগে দেখলাম, একই মজলিশে হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পাশে হাফিজুল্লাহ হুজুর বসে আছেন। উপস্থিতিদের মধ্যে একজকে বলা হল কোরআনের তেলাওয়াত করার জন্য’ তিনি একাধিক বার এরকম স্বপ্ন দেখেছেন।

বাংলাদেশ বেতারে কোরআন তেলাওয়াত : ১৯৬১ সালে তিনি রেডিওতে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য নির্বাচিত হন। নির্দিষ্ট সময়ের কিছুপূর্বে স্টুডিওতে উপস্থিত হলেন। যেখান থেকে কোরআন তেলাওয়াত রেকর্ড করা হবে, দেখলেন তার পাশে গানের শিল্পীরা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অনুশীলন করছে। হুজুর চিন্তা করলেন এখানে আল্লাহর কালাম পাঠ করলে কোরআনের বেহুরমতি হবে। তাই তেলাওয়াত রেকর্ড না দিয়েই সেখান থেকে চলে আসলেন। কত বড় ত্যাগী মনোভাব থাকলে রেডিওতে এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করা যায়। কোরআনের বেলায় তিনি ছিলেন আকাশচুম্বী আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী। (চলবে)


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


আরও পড়ুন

দেশের বর্তমান সংবিধানের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা জাতীয় শত্রু : আমু

দেশের বর্তমান সংবিধানের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা জাতীয় শত্রু : আমু

প্রীতি ম্যাচে কেনিয়াকে হারিয়েছে ইরান

প্রীতি ম্যাচে কেনিয়াকে হারিয়েছে ইরান

মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় কৃষক খুন

মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় কৃষক খুন

মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় কৃষক খুন

মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় কৃষক খুন

একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রথম আলোকচিত্র প্রদর্শনী

একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রথম আলোকচিত্র প্রদর্শনী

জলবায়ু ন্যায়বিচার এগিয়ে নিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত

জলবায়ু ন্যায়বিচার এগিয়ে নিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত

রোজা-ঈদ ঘিরে অপরাধ দমন কার্যক্রম জোরদার করতে আইজিপির নির্দেশ

রোজা-ঈদ ঘিরে অপরাধ দমন কার্যক্রম জোরদার করতে আইজিপির নির্দেশ

সিলেটে মা-বাবা হত্যায় ছেলের মৃত্যুদন্ডের আদেশ

সিলেটে মা-বাবা হত্যায় ছেলের মৃত্যুদন্ডের আদেশ

হবিগঞ্জে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে এক নারীর মৃত্যু

হবিগঞ্জে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে এক নারীর মৃত্যু

সাংবাদিক গ্রেফতার এবং মামলা দায়েরের ঘটনায় ইরাবের উদ্বেগ

সাংবাদিক গ্রেফতার এবং মামলা দায়েরের ঘটনায় ইরাবের উদ্বেগ

দিল্লি আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড মাস্টার্স দাবা

দিল্লি আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড মাস্টার্স দাবা

প্রথম বিভাগ হকিতে ঊষার টানা অষ্টম জয়

প্রথম বিভাগ হকিতে ঊষার টানা অষ্টম জয়

সাবিনারা কেন বঞ্চিত হবেন ?

সাবিনারা কেন বঞ্চিত হবেন ?

ভারতের মধ্যপ্রদেশে মন্দিরে পূজার সময় কূপে পড়ে ১৩ পুণ্যার্থীর মৃত্যু

ভারতের মধ্যপ্রদেশে মন্দিরে পূজার সময় কূপে পড়ে ১৩ পুণ্যার্থীর মৃত্যু

ইরানে গাড়ি উৎপাদন ৩৯ শতাংশ বেড়েছে

ইরানে গাড়ি উৎপাদন ৩৯ শতাংশ বেড়েছে

জাতীয় পরিবেশ পদকের জন্য তিন ব্যক্তি এবং দুই প্রতিষ্ঠান মনোনীত

জাতীয় পরিবেশ পদকের জন্য তিন ব্যক্তি এবং দুই প্রতিষ্ঠান মনোনীত

ধনী রাষ্ট্রগুলোকে দরিদ্র দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে আহ্বান করলো আইএমএফ

ধনী রাষ্ট্রগুলোকে দরিদ্র দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে আহ্বান করলো আইএমএফ

মসজিদের ছবির অভিনব সংগ্রহ ইউরোপে

মসজিদের ছবির অভিনব সংগ্রহ ইউরোপে

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে গোল টেবিল আলোচনা

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে গোল টেবিল আলোচনা

ইইউকে ট্রানজিশন পিরিয়ড ৬ বছর বাড়ানোর আহ্বান

ইইউকে ট্রানজিশন পিরিয়ড ৬ বছর বাড়ানোর আহ্বান