ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুন

Daily Inqilab মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ

০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম

ময়মনসিংহের উপজেলা গফরগাঁও অনেক কিছুর মতো বেগুনের জন্যও বিখ্যাত। শীতের মৌসুমে ট্রেনে করে যারা গফরগাঁও হয়ে যাতায়াত করেন, তাদের অনেকের কাছেই ফেরিওয়ালাদের এই সংলাপটি পরিচিত: ‘বাইগুইন নিবাইন, বাইগুইন, লাফা বাইগুইন’। অর্থাৎ বেগুন নেবেন, বেগুন, লাফা বেগুন। গফরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী লাফা বেগুন বা বড় আকারের গোল বেগুন দেশ-বিদেশের মানুষের মন কেড়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো, গুণেমানে সুস্বাদু, নয়নকাড়া মনোলোভা অনন্য এই বেগুনের জাত এখন বিস্মৃতপ্রায়।

বিশেষ জাতের এই বেগুন দেখতে গোলাকার। কিন্তু দেহ মসৃণ নয়, অনেকটা ঢেউ খেলানো খঁাঁজকাটা। বেশ বড় আকারের। এর একটি বেগুনের ওজন এক-দেড় কেজি থেকে তিন-চার কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তরকারির চেয়ে ভাজি খেতে এই বেগুনের কদর বেশি।

এক সময় গফরগাঁও উপজেলার ৩ নম্বর চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ গ্রামের কাচারী পাড়ায় চাষ হতো এই বেগুন। মাত্র ৫০-৬০ জন কৃষক এর চাষ করতেন। ওই এলাকা ছাড়া অন্য এলাকার জমিতে শত চেষ্টা করেও এর ফলন ঘটানো আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আঞ্চলিকভাবে এর নাম লাফা বেগুন। এর ফলন খুব অল্প সময়েই হয়ে থাকে।

বেগুন চাষিদের মতে, এর ফলনে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ভরা শীতের মধ্যে এর ফলন শুরু হয়। তাই প্রতিদিন হাড় কাঁপানো শীতে রাতের শেষ প্রহরে জেগে ক্ষেতের মাটি পা দিয়ে উলট-পালট করে দিতে হয়। তারপরও প্রতি সপ্তাহে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হয়। কারণ, এ বেগুন গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে রস শুষে নেয়। এই বেগুন উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে জৈব ও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন কারণে এখন কৃষকরা গরু পালন কমিয়ে দিয়েছেন। তাই গোবর ও জৈব সার এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। যান্ত্রিক চাষে বেগুনের আবাদ, প্রচুর রাসায়নিক সারের আর্থিক যোগান দেওয়া অনেক চাষির পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি অফিস ও কৃষি ব্যাংকের সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের।

কৃষকরা জানান, এখন লাফা বেগুন আর তেমন উৎপাদন না হওয়ার দুটি কারণ রয়েছে। ১. যেসব জমিতে এই বেগুন সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হতো, সেসব জমির বেশির ভাগ ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। ২. এই বেগুন চাষাবাদ করতে যে পরিমাণে অর্থ খরচ হতো, তার চেয়ে কম খরচ লাগে ইরি-বোরো ধান চাষাবাদ করতে। ফলে কৃষকরা গোলাকার এই বেগুন চাষের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।

বিশিষ্টজনদের মতে, এ বেগুনের চাষ টিকিয়ে রাখতে হলে, কৃষকদের কৃষি ব্যাংক ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলেই গফরগাঁওয়ের সেই ঐতিহ্যবাহী গোল বেগুন চাষের প্রতি কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হবেন। বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁওয়ের লাফা বা গোল বেগুন।

বর্তমানে গফরগাঁওয়ের চরাঞ্চলে বেশ কিছু চাষি লাফা বেগুন চাষ করছেন। অবশ্য এগুলোর আকৃতি আদি লাফা বেগুনের মতো বড় নয়। তবে এগুলোর ভাজি খেতেও বেশ সুস্বাদু। গফরগাঁওয়ের ৩ নং চরআলগী ইউনিয়নের চরআলগী নয়াপাড়া গ্রামে লাফা বেগুন চাষি বছির আহম্মেদ জানান, বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী লাফা বেগুন চাষ শুধুমাত্র চরআলগী নয়াপাড়া গ্রামে গোটা কয়েক কৃষক করে থাকেন। এই বেগুন চাষ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে সরকারিভাবে কৃষিবিভাগের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এ ছাড়া কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব-আল-রানা বলেন, চরআলগী নয়াপাড়া গ্রামের কৃষকরা গফরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী লাফা গোল বেগুন চাষে নতুন করে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এই বেগুন আবাদের প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ছে তাদের। চলতি মৌসুমে বেগুনের আবাদী জমির পরিমাণ ৩শ হেক্টর। আশা করা যাচ্ছে, লাফা গোল বেগুনের আবাদের পরিমাণ অদূর ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।

লেখক: উপজেলা সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আওয়ামী সিন্ডিকেট দমানো যায়নি
প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
জনশক্তি রফতানিতে কাক্সিক্ষত গতি বাড়েনি
পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেই
নাগরিক সেবায় দুই সিটির চ্যালেঞ্জ
আরও

আরও পড়ুন

রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক

পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক

লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত

লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত

বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ

বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ

ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি

ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত

লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত

এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন

এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান

শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন

শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন

ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ

ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা

ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর

ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর

আদানির দুই চুক্তি বাতিল করলো কেনিয়া

আদানির দুই চুক্তি বাতিল করলো কেনিয়া

হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ক্ষতবিক্ষত বাবুকে থাইল্যান্ড নেয়া হচ্ছে

হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ক্ষতবিক্ষত বাবুকে থাইল্যান্ড নেয়া হচ্ছে

দীর্ঘ ১৭ বছর পর মানিকগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দীর্ঘ ১৭ বছর পর মানিকগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

কলাপাড়ায় নিম্নবিত্তদের স্বস্থি দিতে স্থাপন করা হলো সরাসরি কৃষকদের সবজি বাজার

কলাপাড়ায় নিম্নবিত্তদের স্বস্থি দিতে স্থাপন করা হলো সরাসরি কৃষকদের সবজি বাজার

ঝিনাইদহে দুই ট্রাকে মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক নিহত

ঝিনাইদহে দুই ট্রাকে মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক নিহত

ফ্যাসিবাদের পতনের পরে বাংলাদেশ এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে-শামা ওবায়েদ

ফ্যাসিবাদের পতনের পরে বাংলাদেশ এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে-শামা ওবায়েদ

কানাইঘাটে দোকানের ভিতর থেকে আইসক্রিম বিক্রেতার লাশ উদ্ধার

কানাইঘাটে দোকানের ভিতর থেকে আইসক্রিম বিক্রেতার লাশ উদ্ধার