রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:০৬ এএম | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২৩ এএম
শুরুর ধাক্কা দুর্দান্তভাবে সামাল দিল ভারত। প্রথমে বল হাতে, পরে ব্যাটিংয়ে। দারুণ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলল সূর্যকুমার যাদবের দল।
এশিয়া কাপের ১৭তম আসরের গ্র্যান্ড ফাইনালে রোববার পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা উল্লাস শুরু করে ভারত। ১৪৭ রানের লক্ষ্য তারা পূরণ করে ২ বল হাতে রেখে।
আসরে তিনবারের দেখায় তিনবারই পাকিস্তানকে হারিয়ে নবমবারের মতো এশিয়া কাপ জিতল প্রতিযোগিতাটির সফলতম দল ভারত।
দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ফাইনালের নায়ক তিলাক ভার্মা। ৫৩ বলে ৩টি চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংসে শিরোপা নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন এই মিডল অর্ডার। ৩০ রানে ৪ উইকেট নেওয়া কুলদিপ ইয়াদাভের অবদানও কম নয়।
অল্প পুঁজি নিয়েও দারুণ লড়াই করে পাকিস্তান। তারা হেরে গেছে মূলত হারিস রউফের খরুচে বোলিংয়ে। ৩.৪ ওভারে ৫০ রান দেন এই পেসার। ওভারের পর ওভার রান বিলোলেও অদ্ভুদভাবে তাকে দিয়েই বোলিং করিয়ে গেছেন পাক অধিনায়ক সালমান আলি আগা।
দুবাইয়ে রোববার ত্রয়োদশ ওভারে ১ উইকেটে ১১৩ রানের ভালো অবস্থানে থেকে অন্তত ১৮০ রানে চোখ রাখছিল পাকিস্তান। কিন্তু ৩৩ রানের মধ্যে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় তারা পাঁচ বল বাকি থাকতে।
জবাবে ২০ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। ১৪ ওভার পরও তাদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৮৩। ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ১৭ রান দেন রউফ। নিজের তৃতীয় ও দলীয় ১৮তম ওভারে দেন ১৩ রান। ম্যাচ তখনই অনেকটাই চলে যায় ভারতের মুঠোয়।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ১০ রান। হারিস রউফের প্রথম বলে দুই রান নেওয়ার পর ছক্কায় ওড়ান তিলাক। পরের বলে এক রান নিয়ে স্কোর সমান করেন তিনি। চতুর্থ বল মিড-অফ ফিল্ডারের ওপর দিয়ে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন রিঙ্কু সিং, আসরে প্রথমবার খেলতে নামা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান খেলেছেন কেবল এই একটি বলই!
প্রবল চাপের মুখেও টালমাটাল হননি তিলাক। প্রথমে সান্জু স্যামসানকে নিয়ে গড়েন ৫০ বলে ৫৭ রানের জুটি। স্যামসানের (২১ বলে ২৪) বিদায়ে জুটি ভাঙার পর শিভাম দুবেকে নিয়ে গড়েন ম্যাচের গতিপথ বদলে দেওয়া ৪০ বলে ৬০ রানের জুটি। দুবে (২২ বলে ৩৩) যখন পেরেন জয় তখন নাগালে।

দুবাইয়ে টস জিতে প্রথমে পাকিস্তানকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায় ভারত। ব্যাট হাতে নেমে পাকিস্তানকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার শাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান। পাওয়ার প্লেতে ৪৫ রান তুলেন তারা। পরের ওভারের দলের রান ৫০ পূর্ণ করেন ফারহান ও জামান। ইনিংসের নবম ওভারে টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ফারহান।
৩৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করার পর ইনিংস বড় করতে পারেননি ফারহান। পরের ওভারে ভারতের স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীর বলে তিলক ভার্মাকে ক্যাচ দেন তিনি। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৫৭ রান করেন ফারহান। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৮ বলে ৮৪ রান তুলেন ফারহান-জামান।
প্রথম উইকেট পতনে পর ক্রিজে আসেন সাইম আইয়ুব। জামানের সাথে ১৯ বলে ২৯ রানের জুটিতে দলের রান ১শ পার করেন সাইম। ১৩তম ওভারে দলীয় ১১২ রানে জামান-সাইম জুটি ভাঙেন স্পিনার কুলদীপ যাদব।
এরপর কুলদীপ ও অক্ষর প্যাটেলের সাথে পেসার জসপ্রিত বুমরাহর তোপে তাসের ঘরের মতে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন-আপ। ৪৪ বল ও ৩৩ রানে শেষ ৯ উইকেট পতনে ১৯ দশমিক ১ ওভারে ১৪৬ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ১৭তম ওভারেই ৩ উইকেট নেন কুলদীপ। এসময় পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আঘা ৮, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও ফাহিম খালি হাতে কুলদীপের শিকার হন। ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৫ বলে ৪৬ রান করা জামানকে আউট করেন বরুন।

এছাড়া মোহাম্মদ হারিসকে শূন্য ও হুসেন তালাতকে ১ রানে শিকার করেন প্যাটেল। পাকিস্তানের শেষ দুই উইকেট নেন বুমরাহ। সমান ৬ রান করে বুমরাহর বলে সাজঘরে ফিরেন হারিস রউফ ও মোহাম্মদ নাওয়াজ।
টপ অর্ডারে ফারহান-জামান ও সাইম ছাড়া পাকিস্তানের পরের আট ব্যাটারের কেউই দুই অংকে পা রাখতে পারেননি।
৪ ওভারে ৩০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের সফল বোলার কুলদীপ। ২টি করে উইকেট নেন বুমরাহ-বরুন ও প্যাটেল।
জয়ের জন্য ১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে ২০ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ৫ ও শুভমান গিল ১২ রানে পাকিস্তানের পেসার ফাহিমের বলে বিদায় নেন। অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে ১ রানে থামান পেসার আফ্রিদি।
শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করে সফল হন তিলক ভার্মা ও উইকেটরক্ষক সঞ্জু স্যামসন। উইকেটে সেট হয়ে রানের চাকা সচল করে হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন তারা। ১৩তম ওভারে তিলক-স্যামসন জুটি ভেঙ্গে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার আবরার আহমেদ। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২১ বলে ২৪ রান করেন স্যামসন।
দলীয় ৭৭ রানে স্যামসন ফেরার সময় ৪৬ বলে ৭০ রান দরকার ছিল ভারতের। পঞ্চম উইকেটে ৪০ বলে ৬০ রানের জুটি গড়ে ভারতের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন তিলক ও শিবম দুবে। ১৯তম ওভারের শেষ বলে সাজঘরে ফিরেন দুবে। তখন শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১০ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের।
রউফের সেই ওভারে হেসেখেলেই জয় নিশ্চিত করে তারা ২ বল হাতে রেখেই।
দুবে ২টি করে চার-ছক্কায় ২২ বলে ৩৩, ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৩ বলে অপরাজিত ৬৯ রান করেন তিলক। ৪ রানে অপরাজিত থাকেন রিঙ্কু। পাকিস্তানের ফাহিম ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ১৯.১ ওভারে ১৪৬ (ফারহান ৫৭, ফাখার ৪৬, সাইম ১৪, হারিস ০, সালমান ৮, তালাত ১, নাওয়াজ ৬, আফ্রিদি ০, ফাহিম ০, রউফ ৬, আবরার ১*; দুবে ৩-০-২৩-০, বুমরাহ ৩.১-০-২৫-২, ভারুন ৪-০-৩০-২, আকসার ৪-০-২৬-২, কুলদিপ ৪-০-৩০-৪, তিলাক ১-০-৯-০)
ভারত: ১৯.৪ ওভারে ১৫০/৫ (আভিশেক ৫, গিল ১২, সুরিয়াকুমার ১, তিলাক ৬৯*, স্যামসন ২৪, দুবে ৩৩, রিঙ্কু ৪*; আফ্রিদি ৪-০-২০-১, ফাহিম ৪-০-২৯-৩, নাওয়াজ ১-০-৬-০, রউফ ৩.৪-০-৫০-০, আবরার ৪-০-২৯-১, সাইম ৩-০-১৬-০)
ফল: ভারত ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন
দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা
ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস
চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার
পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি
কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা
বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু
ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক
মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি
দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার
দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ
জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান
চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু
তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা
মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা
গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল