মাস না পেরুতেই কোটি টাকার ফার্নিচারে ফাটল
২৬ মে ২০২৩, ১০:৪৪ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ার টেবিল গুলো মাস না পেরুতেই ফেটে যাচ্ছে। কোটি টাকা ব্যয়ে আনা এই ফার্নিচার গুলো অল্প ঘর্ষণের ফলে রং বদলে যাওয়াসহ অনিয়মের অভিযোগে উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ফাটল ধরা চেয়ার-টেবিল গুলো তড়িঘড়ি করে পরিবর্তন করে দিলেও বাকি চেয়ার-টেবিলগুলো এখনো সরায়নি তারা। এতে বাকি পণ্যগুলোও দ্রুততম সময়ের ভিতরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন ও তথ্য সূত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম্মেসি, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অনেক চেয়ার-টেবিল গুলো ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতেই ফাটল ধরছে। ফাটল ধরা চেয়ার-টেবিল গুলো পুনঃরায় পরিবর্তন করা হলেও অনেক চেয়ার-টেবিল এখনো বিভাগগুলোতে রয়ে গেছে। আবার অল্প একটু ঘর্ষণের পরে আবার রং উঠে যাওয়া অভিযোগ রয়েছে।
প্রকৌশলী অফিস সূত্রে, বিভিন্ন বিভাগের জন্য ৬ হাজার চেয়ার ও ২ হাজার টেবিলের অর্ডার করা হয়। যেখানে মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই কাজের অনুমোদন পায় আখতার ফার্নিচার। অভিযোগ রয়েছে, আখতার ফার্নিচারের পণ্যগুলো ঢাকা সাভার থেকে আনার কথা থাকলে এই পণ্যগুলো খুলনা ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন লোকাল কারখানাতে তৈরি করা হয়েছে বলে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস ও আখতার ফার্নিচার। তারা বলছে, এটি ঢাকা সাভার থেকেই তৈরীকৃত এবং এতে কোন অনিয়ম পাওয়া যায়নি। এটিই ইবির ইতিহাস সবচেয়ে মানসম্মত ফার্নিচার। অতিরিক্ত তাপের কারণে কাঠগুলো ফেটে যাচ্ছে।
তবে সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন উল্টো কথা। মাস না পেরুতেই এত মানসম্মত টেবিল চেয়ারগুলো ফেটে যাওয়ার কারণ? ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, বিভিন্ন বিভাগ শ্রেণীকক্ষ ও চেয়ার টেবিল সঙ্কটে ভুগতেছিল। নতুন চেয়ার টেবিল পেয়ে মনের মাঝে এক প্রকার প্রশান্তি অনুভব করতেছিলাম। এমন সময় দুই একদিন যেতে না যেতে দেখছি চেয়ার টেবিলগুলো ফেটে ও রং উঠে যাচ্ছে। যা দেখে আমাদের কষ্টের উদ্রেক হয়, এগুলো মেনে নেয়ার বিষয় নয়।
তারা আরো বলেন, এটি আসলেই আখতার ফার্নিচারের পণ্য কিনা আমাদের মনের মাঝে এই সন্দেহ থেকেই যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে জোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।
বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম বলেন, কিছু চেয়ার টেবিল ফাটল অবস্থায় ছিল। অভিযোগ করলে তা পরিবর্তন করে দেয়। এ বিষয়ে ফার্ম্মেসি বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অর্ঘ্য প্রসূন সরকার ইনকিলাবকে বলেন, কিছু চেয়ার টেবিলে ফাটল দেখা গিয়েছে। আমরা কারো কাছে কোন অভিযোগ করিনি তবে অন্যান্য বিভাগ অভিযোগ করলে তা পরিবর্তন করে দেয়। পরিবর্তন করলেও এখনো কিছু চেয়ার টেবিল ফাটল অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে আখতার ফার্নিচারের কুষ্টিয়া শাখায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা রেজা বলেন, আমাদের ফার্নিচারগুলো ৩৫ ডিগ্রী থেকে ৪০ ডিগ্রী সিজন করা হয়। সিজনটি বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে অটোমেটিকলি ৪০ ডিগ্রী এর উপরে পড়ার কারণে কিছু সংখ্যক প্রোডাক্টের জয়েন্ট গ্যাপ হয়েছিল। জয়েন্ট গ্যাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৌশলী অফিস থেকে আমাদের জানালে ফেটে যাওয়াগুলো পরিবর্তন করে দিয়েছি। কিছু বিভাগে পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা শেষ হলে ওখানে থাকা ফাটা প্রোডাক্টগুলো পরিবর্তন করা হবে। আখতার ফার্নিচার হলো বাংলাদেশের ব্র্যান্ড কোম্পানি। এই পণ্যগুলো ওয়ারেন্টি দেয়ার কথা ছিল। আমরা এটি ১ বছরের জন্য গ্যারান্টি করে দিয়েছি।
রং উঠে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে রং প্রথমে চেয়েছিল তা দেয়া হয়েছিল। তা হলো রোজ রং এটি তারাই পছন্দ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে অভিযোগ আসলে ওই রং আর যায়নি। পরে যে রং দেয়া হয়েছে তা উঠবেও না পানিতে ভিজিয়ে রাখলেও কিছু হবে না। আর রোজ রংটির প্রোডাক্ট শুধু ফার্মেসি বিভাগে কিছু গিয়েছিল। অন্য কোন বিভাগে এই নরমাল রংটি যায়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী মুন্সী শহিদ উদ্দীন মো. তারেক বলেন, অতিরিক্ত তাপের কারণে চেয়ার-টেবিল গুলো ফেটে গিয়েছে। তবে রং উঠার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটিই ইবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মানের চেয়ার-টেবিল। যারা এ নিয়ে অভিযোগ এনেছে তা ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি ডিল করছে প্রকৌশল অফিস। তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে চেয়ার-টেবিলগুলো প্রবলেম হয়েছে তা ফেরত নিয়ে নতুন ভাল প্রোডাক্ট দিতে। তবে নিম্নমানের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রোডাক্টগুলো নিম্নমানের কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম্মেসি বিভাগে ল্যাবের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আখতার গ্রুপের বিরুদ্ধে। আখতার গ্রুপের পণ্য দিয়ে ল্যাবটির কাজ করার কথা থাকলেও ল্যাবের কাজে ব্যবহৃত ল্যামিনেশন বোর্ড ও অন্যান্য সামগ্রীগুলোতে আখতার ফার্নিচারের কোনো নির্দিষ্ট লগো বা স্টিাকার পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বোর্ডের এডজাস্টমেন্টের কাজে ব্যবহৃত আঠাগুলোও নিম্নমানের বলে জানা গেছে। ল্যাবের কাজ সম্পাদন আখতার গ্রুপের নির্দিষ্ট কর্মীদের দ্বারা করার কথা থাকলেও কুষ্টিয়ার লোকাল মিস্ত্রি দ্বারা কাজটি করানো হয়েছিল ল্যাব স্থাপনের কাজ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া
রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন
ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি
আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান
গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন
লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব
খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার
১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান
বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে
তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের সহযোগিতা চান পরিবেশ উপদেষ্টা
গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ
সোনারগাঁওয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ
র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি শেকৃবি ভিসির
অংশীজনদের সঙ্গে আজ বসছেন অর্থ উপদেষ্টা
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর নাম্বার ক্লোন করে শিক্ষকের কাছে টাকা দাবি
সমস্যাগ্রস্ত ৬ ব্যাংকের নিরীক্ষায় ২ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত