ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করতে সুইস প্রেসিডেন্টকে শেখ হাসিনার অনুরোধ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার :

১৪ জুন ২০২৩, ১০:১২ পিএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

সুইজারল্যান্ডকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেটকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার জেনেভায় প্যালাইস ডেস ন্যাশন্স-এ সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে শেখ হাসিনা এ অনুরোধ করেন। এ সময় সুইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এই সাক্ষাতের পর তাদের দুই জনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ‘জ্ঞানের অংশীদারিত্ব এবং দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সফরকালীন আবাসস্থল ‘প্রেসিডেন্ট হোটেলে’ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হচ্ছে। প্রায় ১ বিলিয়নের ওপর ব্যবসা হচ্ছে। আমরা যথেষ্ট রপ্তানি করছি, মূলত গার্মেন্টস রপ্তানি করি। নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুইস প্রেসিডেন্টকে বলেছেন আমাদের দেশে আপনারা আরও বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশে যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে অতিরিক্ত তিন বছর সহায়তা করতে সুইজারল্যান্ডকে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইস প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি বাংলাদেশ আসবেন বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতিকে হত্যার পর ৬ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানো এবং পরে দেশে ফিরে গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য যে সংগ্রাম করেছেন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার পিতার যে স্বপ্ন ছিল সেটি বাস্তবায়নের কাজটাই তিনি এখন করে যাচ্ছেন।

সাক্ষাতের সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপের কথা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সুইস প্রেসিডেন্ট ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সফর এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা স্মরণ করেন। মোমেন বলেন, সুইজারল্যান্ড রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা করে যাচ্ছে। তারা সেই সহায়তা অব্যহত রাখবে।

রোহিঙ্গা বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় বলছি মিয়ানমার ঐতিহাসিক ভাবে মাঝে মধ্যে এই রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে। ৭০ সালে করেছে, ৮০ দশকে করেছে, ৯০ সালে করেছে। পরবর্তীতে মোটামুটি ভাবে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এবারও তারা ১১ লাখ রোহিঙ্গা বিতাড়িত করে যারা আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকার অঙ্গীকার করেছে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে এবং তাদের সুরক্ষা দিবে। সেখানে গিয়ে রোহিঙ্গারা যেন ভালোভাবে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থাও তারা করছে। কিন্তু ৬ বছর হলো এখনো তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যায়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। রোহিঙ্গারাও চায় তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে। আমাদের পক্ষে তাদের আর রাখা সম্ভব না। সেই জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে মোমেন বলেন, মিয়ানমার তো রাজি আছে, তাদেরকে একটু পুশ (চাপ সৃষ্টি) করেন তাহলে এটার একটা সমাধান হবে। রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করতে ওদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে।
আমেরিকার এক লক্ষ রোহিঙ্গা নেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমেরিকা বলেছিল ১ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে নিবে, এখন পর্যন্ত মাত্র ৬২ জন নিয়েছে। বলছে তারা এক লক্ষ নিবে, প্রসেসিং এ আছে। কবে প্রসেস হবে সৃষ্টিকর্তা জানে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে চায়। সম্প্রতি কিছু রোহিঙ্গা ওখানে গিয়েছিল দেখতে তারাও সন্তুষ্ট, তারা ফিরে যেতে চায়। তো প্রক্রিয়াটা শুরু হওয়া উচিত। মোমেন বলেন, ফিলিপো গ্র্যান্ডিকে বলা হয়েছে, তারা যাতে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে যাতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের মিয়ানমারে প্রবেশের সুযোগ আছে মিয়ানমারে, তবে আমাদেরও সীমাদ্ধতা আছে। এরপর পর ‘প্রেসিডেন্ট হোটেলে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রিন্স রহিম আগা খান সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের দক্ষতা প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বাড়াতে স্বাক্ষর হওয়া এই সমঝোতা স্মারকের ফলে চিকিৎসা এবং তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টর থেকে সুইজারল্যান্ডে দক্ষ জনশক্তি রফতানির সুযোগ বাড়বে। এর অধীনে সুইজারল্যান্ড প্রথমে বাংলাদেশী ইনস্টিটিউটের অধীনে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেবে, পরবর্তীতে তারা দক্ষ জনশক্তি নিয়ে আসবে।

সংশ্লিষ্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুইজারল্যান্ডের কিছু বিশেষ প্রতিষ্ঠান আছে, বিশেষ করে জুরিখে একটি ইনস্টিটিউট আছে যেটি প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে। এই ইনস্টিটিউট সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে। এখানে মূল লক্ষ্য হলো গবেষণা ও উদ্ভাবনে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য জুরিখের এই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযুক্ত করা। সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল ও আইটি খাতসহ দক্ষ জনশক্তি আমদানি করতে চায়। এ জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থল ‘প্রেসিডেন্ট হোটেলে’ সৌজন্য সাক্ষাত করেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা
কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম
ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক
সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা
আরও

আরও পড়ুন

বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার

বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার

নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত

নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত

কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০

কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০

রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার

রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার

উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের

উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে

ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন

কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা

জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক

সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা

সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা

শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ

শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ

ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক

ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক

টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস

টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস

বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র : জাতীয় নাগরিক কমিটি

বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র : জাতীয় নাগরিক কমিটি

সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন

সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন

ফেসবুকে কাকে ননসেন্স বললেন শবনম বুবলী

ফেসবুকে কাকে ননসেন্স বললেন শবনম বুবলী