খুলনা বিভাগে চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশুর সংখ্যা বেশি
১৭ জুন ২০২৩, ১১:৫২ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশুর সংখ্যা বেশি। কোরবানির হাটে তোলার জন্য খামারিরা এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৮ লাখ গরু, মহিষ ও ছাগল প্রস্তুত করেছেন, যা চাহিদার তুলায় সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি। তবে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকলেও গতবারের চেয়ে এবার দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খামারিরা বলছেন, গো খাদ্যের অতিরিক্ত দামসহ সার্বিকভাবে লালন পালনের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার হাটে পশুর দাম গতবারের চেয়ে বেশি হবে।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. লুৎফর রহমান জানান, প্রাথমিক হিসাবে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৮ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৮টি পশু কোরবানির সম্ভাবনা রয়েছে। খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে এই বিভাগে ১১ লাখ ৮২ হাজার ৯৯৮টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে ষাঁড় ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৫৭টি, বলদ ৪৪ হাজার ২৮৮টি, গাভী ৬৩ হাজার ১৯২টি, মহিষ ৫ হাজার ৫৬টি, ছাগল ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৮২৩টি, ভেড়া ২৮ হাজার ৯৫৭টি। ফলে কোরবানির পশুর সঙ্কট হবে না। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে আরো ৩ লাখ ৫৪ হাজার পশু দেশের অন্য বিভাগে পাঠানো হবে।
তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে আরো জানান, মোট কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে খুলনায় প্রায় ৯২ হাজার ৪০০টি, বাগেরহাটে প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৩০০টি, সাতক্ষীরায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার, যশোরে প্রায় ৮০ হাজার ১০০টি, ঝিনাইদহ জেলায় ২ লাখ ৫ হাজার, মাগুরায় ২৬ হাজার ৮৫০টি, নড়াইলে ৫৪ হাজার ৯০০টি, কুষ্টিয়ায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৫০টি, চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৫০টি, মেহেরপুরে ১ লাখ ৯০ হাজার ৫০০টি গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হবে। কারণ প্রায় দ্বিগুন দামে গোখাদ্য কিনতে হয়েছে। খামারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, সেই বিদ্যুতের দাম বেড়েছে।
এছাড়া পশু লালন পালনের জন্য যা যা লাগে, তার সবকিছুর দামই বেড়েছে। একইসাথে তারা জানান, বাজারে এখন গরুর গোশত প্রতি কেজি সাত শ’ থেকে সাড়ে সাত শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গতবার ছিল ৬শ’ টাকার মধ্যে। কাজেই সবদিক মিলিয়ে হাটে গরুর দাম বাড়বে।
খুলনার তেরখাদা উপজেলার খামারি আশিক বিল্লাহ জানান, তার খামারে ৩০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি এবার হাটে তোলা হবে। সবচেয়ে বড় গরুটির ওজন প্রায় ১৩ মন। এটি আশা করছি ৫ লাখ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারব। আরেকটি গরু আছে যান ওজন ১০ মন। সেটিও ৪ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে।
জেলার ফুলতলা উপজেলার খামারি মনোয়ার শেখ জানান, গতবার যে গরু হাটে বিক্রি হয়েছে ২ লাখ টাকা, এবার তা বিক্রি হবে আড়াই লাখ টাকায়। গতবার ছোট ছোট গরু বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। এবার তা বিক্রি হবে লাখ টাকায়। কারণ একটাই, খামারিদের ব্যয় বেড়ে গেছে।
গরু কেনাবেচা করেন এমন একজন ব্যাপারী জাহাঙ্গীর হোসেন। বিভিন্ন জেলায় জেলায় তিনি গরু বেচাকেনা করেন। তিনি জানান, এবার গরু কিনে ব্যবসা করা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিক্রেতারা বিক্রি করে লাভ করতে চান, ক্রেতারাও ক্রয় করে লাভ করতে চান। মাঝখান থেকে যারা বেচাকেনার ব্যবসা করেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবার গরুর ছাগলের দাম অনেকটাই বেশি। তবে, তিনি আশা করেন, মানুষের সামর্থ্য এখন বেড়েছে। তাই বেশি দাম হলেও হাটে বাজারে বিক্রি ভাল হবে।
জেলার ডুমুরিয়া এলাকার খামারি আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে গরু লালন-পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। তিন বছর আগে নিজের গোয়ালের একটি গাভীতে জন্ম নেয় ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের বাচ্চা। কালো কুচকুচে রংয়ের আকর্ষণীয় চেহারার সেই বাচ্চার নাম রাখেন তুফান। তুফানের বয়স বাড়ার সাথে সাথে হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের অরো দুটি ষাঁড়ের বাচ্চা ক্রয় করেন আবুল হোসেন। নাম রাখেন বাদল ও শান্ত । সমবয়সী হওয়ায় তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে সখ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। আড়াই বছর আগে ক্রয় করা হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির ওজন এখন ১ হাজার ৮০০ কেজি। পুরো শরীর কালো ও মাথায় সাদা চিতা এক অন্যরকম আকর্ষণীয় চেহারা দিয়েছে তাকে। তার পিছনের দুটি পা সাদা হলেও সামনের পায়ের বেশির ভাগ অংশ কালো। ৯ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার এই গরুর দাম আশা করা হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। পাঁচ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৯ ফুট লম্বা বাদলের ওজন এখন ১ হাজার ৭০০ কেজি। পুরো শরীর কালো সুদর্শন এই ষাঁড়ের পেটের দিকে লালচে ভাব রয়েছে। তার দাম ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হবে। ৯ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি শান্ত’র ওজন এখন ১ হাজার ৫০০ কেজি। শান্তস্বভাবের শান্ত’র দাম ২০ লাখ টাকা। কোটি টাকা মূল্যের তিন গরুর জন্য আবুল হোসেনকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার খাবার খাওয়াতে হয়। নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ঘাষ, কুটা, দেশীয় ফলমুলের পাশাপাশি প্রতিদিন দশ কেজি করে দানাদার (খৈল, ভুট্টো, ছোলা, গমসহ নানা প্রকার বীজ) খাবার খায় প্রতিটি গরু। এই তিন বছর ধরে এই গরু পালন করতে গিয়ে ঋণও করেছেন আবুল হোসেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩ জন টেটা বৃদ্ধ, আহত ১০
হাসিনাকে কি বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হবে?
জকিগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের সেবা সহজীকরণ অনুষ্ঠান
লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া
ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা
ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি ৯০ শতাংশ ভোট পাবে: ফজলুর রহমান
ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও
বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স
বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
`আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে'
সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২৬ নারী-পুরুষ ও শিশু
লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন গ্রেফতার
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ল
দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ
শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক
দৌলতদিয়ায় বড়দের আদলে ছোটদের জমজমাট নির্বাচন