নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের বাজার
২১ জুলাই ২০২৩, ১১:০৩ পিএম | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা দারুণ খুশি। তারা বর্তমান সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের শাসনামলে ‘ব্যবসা- বাণিজ্য বান্ধব’ পরিবেশ পাওয়ায় মহাসম্মেলন করে জানিয়েছেন ‘আমরা আবার শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই।’ কোনো কোনো ব্যবসায়ী নির্বাচনের প্রয়োজন কি এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীখে খুশি করেছেন। সি-িকেট করে মানুষের পকেট কাটা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ব্যবসায়ীরা খুশি। তারা মনে করেন সরকার দেশকে সি-িকেট করে পণ্যের দাম বৃদ্ধির চারণভুমি বানিয়ে দিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তাই সংসদে বলেছেন, ব্যবসায়ী সি-িকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকারকে বিপদে পড়তে হবে। বাণিজ্য বান্ধব সরকারের প্রতি ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা খুশি হলেও সাধারণ মানুষ চরম ক্ষুব্ধ। কারণ পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি। তাই কম খেয়ে, সংসারের নানান খরচ কমিয়ে সংসার-পরিবার টিকিয়ে রাখার চেস্টা করছেন।
রাজধানী ঢাকায় প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বসবাস করেন। হাতে গোনা কয়েক লাখ বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, ঘুষখোর, সুধখোর, ধান্দাবাজ, সরকারের সুবিধাভোগীর অর্থ সংকট না থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবী। তাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। নিত্যপণ্যের বাজারে শান্তি নেই সেই ক্রেতা মানুষগুলোর। সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজার লাগামছাড়া। যে যেভাবে পারছেন দাম বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রি করছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দুয়েকটা পণ্যের দাম কিছুটা কমলেও বাকিগুলো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। মাছ, গোশত, সবজিসহ বাজারে এ সপ্তাহেও স্বস্তি মেলেনি ক্রেতাদের। শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি, ফকিরেরপুল, ক্যাপ্তানবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমে বর্তমানে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাকি সব ধরনের মুরগির দাম এখনও চড়া।
যাত্রাবাড়ির পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কিছুদিন আগে এসব মুরগির দাম আরো বেশি ছিল। তবে দাম যেটা কমেছে তাতে এখনো সাধারণ ক্রেতারা এসব মুরগি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। সাধারণ ক্রেতাদের মতে, বাজারে ব্রয়লায় ছাড়া অন্য মুরগি কেনাই দায়।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়, সোনালী মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি ৩০০ টাকায়, লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়, কক (লাল) মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ি বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. খোরশেদ আলমের মতে, বাজারে শুধু ব্রয়লার মুরগির দাম কম। বাকি সব ধরনের মুরগির দাম অনেক বেশি। ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগি কিনে খাওয়াই কঠিন। তিনি বলেন, আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা একমাত্র ব্রয়লার মুরগি ছাড়া অন্য কোনো মুরগি কিনতে পারি না। কারণ সব ধরনের মুরগির দাম বেশি। দেশি মুরগি কেনার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না। গরুর গোশতের দামের কাছাকাছি দেশি মুরগির কেজি। এছাড়া সোনালী মুরগি যে কিনবো এটার দামও ৩০০ বা তার চেয়েও বেশি। পাশাপাশি লেয়ার, কক মুরগিরও দাম অতিরিক্ত। সব মিলিয়ে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগি কেনাই দায়। অন্যদিকে মাছের দামও বেশি। এমনকি চাষের মাছ যেগুলো সাধারণ মানুষ তাকিয়ে দেখতেন না তারা ওই সব চাষের মাছের উপর আমিষের নির্ভরতা চাপিয়ে দিয়েছেন। সেগুলোর দামও বেড়ে গেছে হুহু করে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক বাজার বেশি জমে ওঠে। সরকারি ছুটি থাকায় কর্মজীবী মানুষ এক সাপ্তাহের বাজার করেন শুক্রবার। শনির লাখড়া ও যাত্রাবাড়ি এলাকার একধিক বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি সবজির সরবরাহ প্রচুর। প্রতিটি দোকানের থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সবজি। কিন্তু প্রতিটি কাচা সবজির দাম বেশি। বাজার ভেদে ও মান ভেদে প্রতিকেজি টমেটো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, উস্তা ও করলা ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫৫ টাকা, বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে প্রতিটি মাছের দাম বেড়ে গেছে। আকারভেদে রুই-কাতলা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, তেলাপিয়ার ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের নলা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাশের ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সিলভার কাপ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, চিংড়ি ছোট আকারের ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, মাঝারি আকারের ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, বড় আকারের হলে প্রায় ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ছোট চিংড়ি কেজি ৮০০ টাকা, পুঁটি ৮০০ টাকা, টেংরা ৫০০ টাকা, কই ২৬০ টাকা, রুই কেজি ৩৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০ টাকা, টাটকিনি ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ফার্মের মুরগির লাল ডিম প্রতিটি ১২ টাকা, হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ডজন ১৪৫ টাকা, ফার্মের সাদা ডিম ১৪০ টাকা ডজন, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজার ও পাশের কাজলা বাজারের মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকারের ভারতীয় রসুনের কেজিপ্রতি ২০০ টাকা, ছোট আকারে দেশি রসুন ১৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা, আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, চিনি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ বাজারে মো কাওছার হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই বেশি। একটা দাম কমলে আরেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। শনির আখড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে সবজির মৌসুম না। তারপরও যতেষ্ট কম আছে সবজির দাম।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ