বরিশালে মিষ্টি আলুর উৎপাদন পৌনে ৩ লাখ টন
২২ জুলাই ২০২৩, ১১:২৫ পিএম | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার অধিক ক্যালরি উৎপন্নকারী ‘গরীবের খাদ্য’ মিষ্টি আলুর উৎপাদন প্রায় পৌনে ৩ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। অনগ্রসর মানুষের স্বল্প ব্যয়ে পুষ্টির ভাল যোগানদাতা এ খাবার সাধারণের জন্য সারাদিনের পুষ্টির যোগানদাতা।
কৃষি এবং পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ ও রঙ্গিন শাঁসযুক্ত মাত্র ১৩ গ্রাম মিষ্টি আলু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন-এ’র চাহিদা পূরণে সক্ষম। যা শিশুদের রাতকানা রোগসহ যেকোন বয়সী মানুষের দৃষ্টিশক্তি স্বল্পতার আশঙ্কা থেকেও নিরাপদ রাখতে সহায়ক।
বিগত রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পৌনে ৩ লাখ টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসার অধিদফতর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার হেক্টরে সাড়ে ৮-১০ লাখ টন মিষ্টি আলু উৎপাদন হচ্ছে। যার প্রায় একÑতৃতীয়াংশই বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে বলে ডিএই’র হিসেবে বলা হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল বীজসহ মাঠ পর্যায়ে উন্নত আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পাড়লে দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি আলুর উৎপাদন প্রায় দ্বিগুনে উন্নীত করা সম্ভব বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণ। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়ে আসছে সুদূর অতীতকাল থেকে। ‘কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’র বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি উচ্চফনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদনও আমাদের সনাতন জাতগুলোর প্রায় তিন থেকে ৪ গুন। এমনকি এসব মিষ্টি আলু থেকে জেলী, জ্যাম, মিষ্টি, চিপস, হালুয়া ছাড়াও পুষ্টি সমৃদ্ধ ও উন্নত মানের সস পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব।
মিষ্টি আলুর দেশী জাতগুলো থেকে হেক্টর প্রতি ১০ টনের মতো উৎপাদন সম্ভব হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি), বারি মিষ্টি আলু-২ (কমলা), বারি মিষ্টি আলু-৩ (দৌলতপুরী), বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৫, বারি মিষ্টি আলু-৬, বারি মিষ্টি আলু-৭, বারি মিষ্টি আলু-৮ ও বারি-মিষ্টি আলু-৯’ জাতগুলোর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২০-৪০ টন পর্যন্ত। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার হেক্টর প্রতি ২০.২৩ টন মিষ্টি আলুর উৎপাদন হয়েছে বলে জনিয়েছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
উৎপাদনের দিক থেকে দেশে খাদ্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলুর অবস্থান এখন প্রায় চতুর্থ। তবে সুদূর অতীতকালের জনপ্রিয় এ খাদ্যফসলের বহুমুখী ব্যবহার এখনো সম্প্রসারণ ঘটেনি। এমনকি উৎপাদন এলাকার বাইরেও এ ফসলের তেমন প্রচলন নেই। এমনকি ‘বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ কৃষক পর্যায়ে পরিপূর্ণভাবে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি ‘বারি’ উদ্ভাবিত এসব উন্নতজাতের মিষ্টি আলুর জাতের লতা বা বীজগাছ সহ আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে ডিএই’র মাঠ কর্মীদের খুব একটা আগ্রহী ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলে জেলাগুলোতে যে পরিমাণ জমিতে সনাতন জাতের মিষ্টি আলুর আবাদ হচ্ছে, সেখানে উন্নত প্রযুক্তিতে উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে, এ অঞ্চলেই উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীগণ।
অথচ ‘বারি’ ফিলিপাইন থেকে ১৯৮১ সালে ‘টিনিরিনিং’ নামের একটি লাইন সংগ্রহ করে অন্যান্য জার্মপ্লাজামের সাথে উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে গবেষণা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি)’ নামে অনুমোদন প্রদান করে মাঠ পর্যায়ে আবাদের জন্য ছাড় করে। এ জাতে মিষ্টি আলুর কান্ড ২শ’ থেকে আড়াইশ গ্রাম। তবে কোন কোন সময়ে একটি মূল দেড় কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এ আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁসে প্রায় সাড়ে ৪শ’ আই ইউ ভিটামিন এ থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪০-৪৫ টন পর্যন্ত।
তাইওয়ানের এশীয় সবজি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ১৯৮০ সালে একটি লাইন সংগ্রহ করে জার্ম প্লাজামের সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘কমলা সুন্দরী বা বারি মিষ্টি আলু-২’ নামের জাতটি অনুমোদনের মাধ্যমে আবাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ মিষ্টি আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁষে সাড়ে ৭ হাজার আই ইউ ভিটামিন-এ রয়েছে। এসব উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলু আবাদের ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।
দোআঁশ ও বেলে মাটি মিষ্টি আলু আবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পরিমিত পরিমাণ গোবর সার ছাড়াও টিএসপি, ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগের মাধ্যমে মিষ্টি আলুর অত্যন্ত ভাল ফলন পাওয়া যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে ২-৩টি সেচ প্রদান করতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের চরাঞ্চলের বেলে দোআঁশ মাটি মিষ্টি আলু আবাদের অনুকূল। তবে চরাঞ্চলে নভেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত এ আলুর আবাদ সম্ভব।
বারি উদ্ভাবিত কমলা সুন্দরী, বারি মিষ্টি আলু-৪ ও ৫’এ প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন রয়েছে। যা ভিটামিন-এ’র একটি ভাল উৎস। এসব জাতের মিষ্টি আলু দিয়ে অতি সহজেই সস পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বারি’র বিজ্ঞানীগণ। যা গ্রামের মেয়েদের ঘরে বসে একটি বিকল্প আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে।
এবারো মার্চের শেষ থেকেই বাজারে নতুন মিষ্টি আলু উঠতে শুরু করে মে মাস-জুন পেরিয়ে বরিশালের বাজারে এখনো বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমে প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে মিষ্টি আলু বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা গড়ে ১৫ টাকার বেশি দাম পায়নি। গোল আলুর চেয়ে মিষ্টি আলুতে কৃষকরা কিছুটা ভাল দাম পেলেও এখনো লতা-বীজ সঙ্কটই দক্ষিণাঞ্চলে এ অর্থকারি ফসল আবাদে প্রধান অন্তরায়। চলতি রবি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা প্রতি কেজি গোল আলু বিক্রি করেছেন মাত্র ৭-১০ টাকা কেজি দরে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা