রেকর্ড টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
২৩ জুলাই ২০২৩, ১০:০৬ পিএম | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বাংলাদেশে চলতি অর্থ বছরের শুরুতেই রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি বছরে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেয়ার ক্ষেত্রে আরো বড় রেকর্ড করার শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা প্রকারান্তরে মূল্যস্ফীতিকেই আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এর আগে সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকেই সরকার বেশী টাকা ধার করতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু ধার করলেও তার পরিমাণ ছিলো তুলনামূলক কম। কিন্তু এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সেই অর্থে সক্ষমতা না থাকার কারণে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ধার দেয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরের প্রথম আঠার দিনেই সরকারকে সহায়তা করতে ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে দশ হাজার আটশ কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ গত অর্থবছরের পুরো সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার মোট ধার করেছিলো ৭৮ হাজার কোটি টাকার সামান্য বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া মানেই হচ্ছে নতুন করে ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা বাজারে গেলে পরবর্তীতে এই টাকার পরিমাণ পাঁচগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। আর এই নতুন টাকা সরবরাহের বিপরীতে নতুন করে চাহিদা তৈরি করবে, যা মূলত দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেবে।
টাকা ছাপালে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে : চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে সেখানে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এ বছরের বাজেটে ঘাটতি পূরণের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি ব্যাংক খাত থেকে নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলো সরকার।
অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা যে এ ঘাটতি পূরণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অন্তত এক লাখ কোটি টাকা এভাবে ধার করতে হবে সরকারকে। কারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সরকারকে ঋণ দেয়ার মতো সামর্থ্য খুব একটা নেই। ‘এর ফলে মূল্যস্ফীতিই বাড়বে - কারণ টাকা ছাপাচ্ছেন। এ বছর টাকা ছাপানোর দরকারও বেশি হবে। তাই অবস্থাও অনেক বেশি খারাপ হবে’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অর্থ বছরের মনিটরি টার্গেট ঠিক রেখেই তারা সরকারকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে এবং এর ফলে বাজারে কোনো ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করেন তারা। ‘প্রথমত আমরা অনেক ডলার বিক্রি করছি। ডলার বিক্রি করা হলে বাজার থেকে টাকা উঠে আসে। সেই পরিমাণ টাকা আবার বাজারে দিতে হয়। আর বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ায় বেশীরভাগ পণ্যই উচ্চ দামে সরকারকে আনতে হচ্ছে। সেখানে সাপোর্ট তো দিতেই হবে’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।
তবে এভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেয়ার প্রভাব ঠিক এখনি না হলেও ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে মূল্যস্ফীতি অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।
সহজ পন্থা বেছে নিয়েছে সরকার : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যেই ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি কমে আসলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া শ্রীলংকাও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে পেরেছে, যা বাংলাদেশ পারেনি। এ অবস্থায় রেকর্ড পরিমাণ নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে দিলে তার প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক হওয়াটাই স্বাভাবিক বলে বলছেন আহসান এইচ মনসুর। তার মতে সরকার এবার অর্থবছরের শুরুতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ যে পরিমাণ টাকা নিয়েছে সেটি গত ৫০ বছরে মোট মিলিয়েও নেয়নি।
অবশ্য এভাবে নতুন টাকা ছাপিয়ে নেয়ার মাধ্যমে সরকার দু ভাবে সহায়তা পাবে। একটি হলো ঘাটতি মোকাবেলায় কম সুদের লোন। আবার সরকারকে ধার দিয়ে যে সুদ বা লাভ কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাবে সেটি আবার প্রফিট হিসেবে সরকারকেই দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘সরকার সবচেয়ে সহজ পন্থা বেছে নিয়েছে। কারণ এবার রাজস্ব ঘাটতি অনেক বেড়েছে। কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকে যথেষ্ট সহায়তার দেয়ার সক্ষমতা নেই,’ বলছিলেন মি. মনসুর।
আবার সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে সরকার টাকা ধার করলে সেখানেও টাকার সংকট বা তারল্য সংকট তৈরি হবে এবং এর ফলে বেসরকারি খাত প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সংকটে পড়তে পারে, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
এসব বিবেচনাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করার সহজ পথ সরকার বেছে নিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থা তৈরি হয়েছে মূলত টাকা পাচার, ব্যাংকের অর্থ লুটপাট ও দুর্নীতিসহ নানা কারণে ব্যাংক খাত দুর্বল হয়ে পড়ায়।
আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা ব্যাংক থেকে এভাবে ঋণ নেয়াটা কমাতে হলে সরকারকে রাজস্ব খরচ অন্তত এক লাখ কোটি টাকা কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু নির্বাচনের বছরে সেটিই বা কতটা সম্ভব হবে- তাও হবে দেখার বিষয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে চলতি বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ফলে ধারণা করা হচ্ছে সরকার জনতুষ্টির নানা প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় করবে।
যদিও এভাবে টাকা ছাপিয়ে বাজারে দেয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সেটি প্রকারান্তরে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে মানুষের জীবনকেই আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি ইচ্ছেমতো টাকা ছাপাতে পারে: মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার বিশ্লেষণ করে কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন টাকা ছাপানোর কাজ করে থাকে। যদিও এমন কোনো বিধিনিষেধ বা ধরাবাঁধা নিয়ম নেই যে এতো টাকা ছাপানো যাবে বা এর বাইরে ছাপানো যাবে না। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করে দেশের অর্থনীতির ওপর। বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়লে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দ্রব্যমূল্য বাড়তে পারে যা মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়িয়ে দেয়। সে কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপানোর ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যের নীতি অনুসরণ করে থাকে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ