বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনে বাধ্য করছে সরকার
২৫ জুলাই ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪২ পিএম
পর পর দুটি প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রকারান্তরে একদলীয় প্রহসনমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা ও দাবিকে উপেক্ষা করে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রক্ষমতা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করতে দেড় দশক ধরে শাসকদলের অব্যাহত তৎপরতার পর আরেকটি জাতীয় নির্র্বাচনকে একইভাবে পার করে দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষণার পরও বাংলাদেশের রাজনীতি এখনো জ্বালাও পোড়াও সহিংস রূপ ধারণ করেনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি অস্বাভাবিক ও অকল্পনীয়। প্রতিপক্ষকে নির্মূলের রাজনীতি এবং গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অঙ্গীকারকে নস্যাৎ করার মধ্য দিয়ে বিরোধীদল সমূহের রাজনৈতিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সব পথ ও পন্থা রুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে দেশে একটি অস্বাভাবিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার দেশের আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, প্রায় সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সরকারের এমপি-মন্ত্রী, ভূঁইফোড় রাজনীতিবিদ ও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী দেশ থেকে প্রতি বছর লক্ষকোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। দেশ এখন চরম রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত। আরেকটি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এইসব সংকটের সমাধান এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের দাবিতে স্বাভাবিকভাবেই সরকারবিরোধী রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি। উপরন্তু, নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের একদফা দাবি আদায়ের প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে ঢাকাসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ ও সরকারিদলের নেতাকর্মীদের হামলায় দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছে। তবে একদশক ধরে বিরোধীদলকে দেশের কোথাও দাঁড়াতে না দেয়ার চরম বাস্তবতা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে রাজপথে, পল্টনে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে লাখো মানুষের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পেছনে পশ্চিমা দেশগুলোর অব্যাহত চাপ এবং কয়েক ধাপের নিষেধাজ্ঞার হুমকি ও মার্কিন ভিসানীতির নেপথ্য ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। গত ২২ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (সাবেক রেসকোর্স ময়দান) ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ বিএনপি’র কয়েকটি অঙ্গ সংগঠণের তারুণ্যের সমাবেশে লাখো তরুণের অভাবনীয় সরব উপস্থিতি যেন স্বাধীনতা পূর্ব সময়ের সেই রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডায়াসের সামনের লাখো জনতার কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিল। ইতিহাসের কী পরিহাস! সেই আওয়ামীলীগের হাতেই দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সামাজিক-অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের চরম দুর্ভোগ, লাখ লাখ মানুষের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা ও মুক্তি মহামূল্য দুলর্ভ বিষয়। বিনামূল্যে তা পাওয়া যায়না। কখনো হারিয়ে গেলে বা কেউ ছিনিয়ে নিলে ফিরে পেতেও রক্তের মূল্য দিতে হয়। দেশভাগের আগে ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে যুদ্ধ করতে হয়নি বটে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ থেকে পরবর্তী ২ শতাব্দী ধরে অনবরত এ দেশের মানুষের রক্ত ঝরেছে এবং দেশের সাধারণ মানুষের সম্পদ ও অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। আমাদের সম্পদ পাচার করে বৃটিশরা ধনী হয়েছে। বৃটিশ-ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির প্রথম গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বৃটিশ পার্লামেন্টে অভিসংশন ও বিচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে যত অর্থসম্পদ বিদেশে পাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বেহাত হয়েছে, শত বছরের ঔপনিবেশিক শাসনেও এত সম্পদ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়নি। গত আড়াই দশকে একাধিকবার শেয়ার বাজার লুণ্ঠন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি থেকে শুরু করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক ডজন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষকোটি টাকার আমানত ও সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচারের সাথে অনেকের নাম উঠে আসলেও রাঘব-বোয়াল কাউকেই বিচার বা তদন্তের আওতায় আনা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভের বিলিয়ন ডলার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সময় একটি বানান ভুল এবং জুপিটার অয়েল ট্যাংকারের নামের সাথে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরানের একটি কোম্পানীর নামের অনুরূপ নাম থাকায় নিউ ইয়র্কের ব্যাংক কর্মকর্তাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের কারণে বিশাল পরিমান অর্থ বেহাত হওয়া থেকে বেঁচে যায়। ফিলিপাইনের পত্রিকায় এ সম্পর্কে সংবাদ ছাপা হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের কেউ কিছুই জানতে পারেনি। বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক হ্যাকিংয়ের ঘটনা হিসেবে এটি একটি আলোচ্য বিষয়ে পরিনত হলেও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করতে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছে ফিলিপাইন ও নিউইয়র্কের বিচারিক তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সাত বছর পেরিয়ে গেলেও বেহাত হওয়া প্রায় ৮ কোটি ডলারের তহবিল দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্রমবর্ধমান অনলাইন ব্যাংকিং ও সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা নিয়ে হলিউডের বিখ্যাত মুভি কোম্পানি ইউনিভার্সেল পিকচার্স এবং পরিচালক ড্যানিয়েল গর্ডন একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করেছেন। ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’ নামের প্রামাণ্য চিত্রটি আগামী ১৫ আগস্ট হলিউডে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। মুভির ট্রেইলারটি গত কয়েকদিনেই ইউটিউবে ভাইরাল হয়েছে। ইতিপূর্বে বিবিসি, আল জাজিরা এবং কয়েকজন ব্যক্তিগত ইউটিউবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফ্ট কোড হ্যাক করে অর্থ চুরির ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু তথ্যচিত্র ভিডিও ক্লিপিংস তৈরী করে। গত দেড় দশকে দেশের মানুষের ঘাড়ে আগের চেয়ে ২০ গুণ ঋণের বোঝা চাপানো হয়েছে। ব্যাংক জালিয়াতি, অর্থপাচার, মানব পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘণ, গণতন্ত্রহীনতা, ভোট ডাকাতি, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং পরাশক্তি সমূহের রশি টানাটানির ঘটনায় আন্তর্জাতিক শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশ।
পশ্চিমা দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের আওতায় পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতন ও ¯œায়ুযুদ্ধ অবসানের মধ্য দিয়ে যে ইউনিপোলার বিশ্বব্যবস্থাস গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, সেখানে পশ্চিমারা সমাজতন্ত্রের বিপরীতে গণতন্ত্র ও মাল্টিকালচারালিজম এবং ভিন্নমতের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিকে সমর্থন করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বৈদেশি সম্পর্কের নীতির মধ্যে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নাগরিক সাম্য এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যদিও জ্বালানি নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও কৌশলগত স্বার্থের প্রশ্নে এসব বিষয়ে আপস করতেও দেখা গেছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিভাজিত বিশ্বে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নয়নের নজিরও কম নেই। দুই কোরিয়ার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হলেও সমাজতান্ত্রিক-একনায়কতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়া কার্যত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ¯œায়ুযুদ্ধোত্তর কালে দুই জার্মানী একীভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানী সব দিক থেকে অগ্রসর ছিল। মার্কিন নিয়ন্ত্রিত জাপানের গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এশিয়ায় প্রশ্নাতীতভাবে প্রাগ্রসর ছিল। এশিয়ায় জাপান এবং মালয়েশিয়ারন আয়তন প্রায় সমান। প্রায় সাড়ে তিন লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জাপানের লোক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি, আর প্রায় সোয়া তিনলাখ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মালয়েশিয়ার লোক সংখ্যা তিন কোটির কম। জাপান বা মালয়েশিয়ায় খনিজ বা প্রাকৃতিক সম্পদের তেমন কোনো প্রাচুর্য নেই। বিদেশি কাঁচামাল ও শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে তারা যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে, এসব দেশে স্থিতিশীল সামাজিক-রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। মোট জনসংখ্যার ৬৪ ভাগ মুসলমান, ১৮ ভাগ বৌদ্ধ, ৯ ভাগ খৃষ্টান এবং ৬ ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন না থাকলে মালয়েশিয়ার এমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়তো সম্ভব ছিল না। গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে এক ধরণের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ায় জনগণের সম্পদ চুরি ও পাচারের শিকার হয়েছে। জনপ্রতিনিধিত্বহীন, জনগণের আস্থাহীন সরকার জনগণের জীবন, মর্যাদা ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষায় সব সময়ই ব্যর্থ হয়। জাপান ও মালয়েশিয়ার সম্মিলিত জনশক্তির চেয়ে বেশি জনবল নিয়ে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার কথা। বিদেশে কর্মরত প্রায় দেড়কোটি শ্রমিকের পাঠানো রেমিটেন্স, গার্মেন্টস সেক্টরের লাখ লাখ কর্মী ও হাজার হাজার বিনিয়োগকারী এবং কোটি কোটি কৃষকের শ্রম এবং নতুন প্রজন্মের কর্মীদের উদ্ভাবনী প্রতিভা ও ঘাম ঝরানো শ্রমের উপর বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল, উল্লেখযোগ্য কিছু অবকাঠামো উন্নয়নের পরিসংখ্যান বাদ দিলে গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনাচার-অবিচার, দুর্নীতি-লুটপাটের করাল গ্রাসে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। লাখ লাখ কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যুত খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন করে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের পর এখন ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস ও কয়লা কেনা কিংবা জরুরি আমদানি ব্যয় মেটানোর অর্থ সরকারের কোষাগারে নেই।
রাষ্ট্র ও জনগণের টেকসই উন্নয়ন ও সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য বৈষম্যহীন সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। গণতন্ত্র তথা জনগণের ইচ্ছাধীন নেতৃত্বই হচ্ছে সুশাসন ও নিরাপত্তার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পন্থা। যে দেশের মানুষ শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নকে সামনে রেখে লাখো জীবন ও রক্তের মূল্যে স্বধীনতা অর্জন করেছিল, সে দেশের মানুষকে স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে এসেও মানবাধিকার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য রাজপথে ঘাম ও রক্ত ঝরাতে হচ্ছে। পরপর দুটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের মানচিত্র থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের গণদাবি এবং পশ্চিমা বিশ্বের সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আলটিমেটাম এখন একটি ঐক্যসূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে। যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিল। রাজপথের আন্দোলনে শত মানুষের রক্ত এবং শত শত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করে আদায় করা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আদালতের রায়ের উছিলায় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একতরফাভাবে বাতিল করে রদয়ার মধ্য দিয়ে চলমান এ সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে দেশের অনেক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সময়মত যথাযথ ভূমিকা পালন করলে দেশ এতটা ক্ষতির সম্মুখীন হতনা। সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপণ সমঝোতায় নবম জাতীয় সংসদের ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল। সেখানেও বিএনপি’র অন্তত ৩০ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় সদস্যরা ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিরুদ্ধে সংসদে ও রাজপথে কার্যকর প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তোলতে পারলে দেশ এমন ভয়ঙ্কর স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থান পতিত হতনা। একজন স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম একতরফাভাবে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারা বদল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে একাই সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন। সে সময়ে বিরোধিদলগুলোর একযোগে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলা খুবই জরুরি ছিল। সে সময় সঠিক ভূমিকা রাখতে তাদের ব্যর্থতার কারণেই দেশ ও জাতি আজকের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইসরাইলের বর্তমান অবস্থার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সাময়িক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২২ সালের শেষদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে নির্বাচনী জোট করে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইসরাইলের যুদ্ধবাজ, দুর্নীতিবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে আইনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। এর ফলে ইসরাইলের জনগণ তুমুল বিক্ষোভে রাজপথে নেমে আসে। নেতানিয়াহু সরকার আইন পরিবর্তনের প্রক্রিয়া থেকে সরে না আসায় গত ৬ মাস ধরে ইসরাইলের বিরোধীদল ও নাগরিক সমাজ রাজপথে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ করে চলেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্র্য ও নিরপেক্ষতার উপর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থায়ীত্ব নির্ভর করে। গণতন্ত্র থেকে বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় ইসরাইলের জনগণ ৬ মাস ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে। মিডল ইস্ট আই অনলাইনে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সাবেক প্রধান, নাদভ আরগাম্যান বলেছেন, ইসরাইলের গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য নেতানিয়াহুকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত করা হয়নি। তিনি যদি জুডিসিয়াল ওভারহোলিংয়ের পদক্ষেপ এখনই বন্ধ না করেন, তাহলে ইসরাইলে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিচারপতি খায়রুল হকের আরোপিত ও বিতর্কিত রায় এবং নবম জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর পরিবর্তিত সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র কক্ষচ্যুত হয়ে গেছে। এটিকে নিজ অক্ষে ফিরিয়ে আনতে সরকার রাজনৈতিক সমঝোতায় সম্মত না হলে জনগণকে আবারো নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মত প্রবল গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
[email protected]
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত