অপরাধে জড়াচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যরা
০৪ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩০ পিএম | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে বিভিন্ন অপকর্মের পর চাকরিচ্যুত সদস্যরা জড়াচ্ছেন বিভিন্ন অপরাধে। এসব সদস্যের অস্ত্র চালনাসহ নানান প্রশিক্ষণ থাকে। তাই সাধারণ অপরাধীর তুলনায় এরা নিপুণভাবে অপকর্মগুলো করে। আবার অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা থাকার কারণে কীভাবে অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে, সে বিষয়েও ভালো ধারণা থাকে তাদের। বিশেষ করে ভুয়া র্যাব-ডিবির দল সাজিয়ে অবৈধ ও খেলনা অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের পর অপহরণ করে টাকা আদায় করছেন তারা। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরিচ্যুতদের নেতৃত্বে এমন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তারা ১০ থেকে ১৫ জনের গ্রুপ তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরাধে জড়াচ্ছেন।
পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নেই কোনো আলাদা সেল। চাকরিচ্যুত হলে পরবর্তী জীবনে কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন কি না অথবা সমাজে কী অবস্থায় আছেন তাদের কোনো খবর থাকে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। অপরাধ করে ধরা পড়লেই কেবল তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সিআইডির সদস্য পরিচয়ে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তিনজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন তিন পুলিশ সদস্য। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ঘটনায় মো. কামরুল ইসলাম (৩৫), রাফিজ খান (২৬) ও তুষার ইমরানের (৩১) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে গত বছরের ২১ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী কামরুল ইসলাম অর্থ সংক্রান্ত একটি মামলার জেরে পুলিশের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। রাফিজ ও তুষার নিয়োজিত ছিলেন ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পর ভুক্তভোগীদের অন্য একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দেন আসামিরা। এসময় তাদের বলা হয়, তোরা পেছন দিকে তাকাবি না, তাকালে গুলি করে দেবো।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, সমাজে যারাই অপরাধ করছে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সদস্যরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডিবি এরই মধ্যে চাকরিচ্যুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও আইনের আওতায় এনেছে। অর্থাৎ, সমাজে যারাই অপরাধ করুক তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কঠোর অবস্থানে।
গত ১৭ এপ্রিল রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে হাতকড়া পরিয়ে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় মাসুদ রানা (২৪) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কনস্টেবল মাসুদ রানা রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে প্রেষণে পঞ্চগড় পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, গত ৯ এপ্রিল দিনগত রাত ১টায় গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের চওড়াপাড়া গ্রামের নুর ইসলামের বাড়িতে ঢোকেন অজ্ঞাতপরিচয় সাতজন যুবক। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নুর ইসলামের ছেলে সোনা মিয়াকে মারধর করে বাড়ি থেকে নিয়ে যান। পরে সোনা মিয়ার প্রতিবেশী সুরুজ মিয়ার মাধ্যমে অপহরণকারীরা পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরে এক লাখ তিন হাজার ১৭০ জন পুলিশ সদস্যকে লঘুদ- দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে গুরুদ- দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৮শ জনকে।
এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার ৬১৫টি বিভাগীয় মামলা হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৪৭টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০১ জন পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত করা হয়। প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দ- দেওয়া হয় ১২শ পুলিশ সদস্যকে। ২০২১ ও ২০২২ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার ১০৬ সদস্যকে বিভিন্ন অপরাধের কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়।
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মো. ফারুক হোসেন বলেন, অপরাধী যেই হোক তাদের বিষয়ে ডিএমপি সব সময় কঠোর। অপরাধ করে ঢাকা শহরে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ডিএমপির ৫০ থানা ও ৮ গোয়েন্দা বিভাগ অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করে।
পুলিশ সদরদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পর্যন্ত ৩৮২ পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বাংলাদেশ গেজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুই ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। একটি হচ্ছে- লঘুদ- এবং আরেকটি গুরুদ-। এখানে লঘুদ- বলতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩ বিধির কয়েকটি উপবিধি এবং ৪(ক)-এর কয়েকটি উপবিধি অনুসারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লঘুদ- বা বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে- তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে বেতন বা আনুতোষিক থেকে আদায় করা অথবা বেতন গ্রেডের নি¤œতর ধাপে অবনমিতকরণ।
অন্যদিকে গুরুদ-ের মধ্যে রয়েছে- নি¤œপদ বা নি¤œ বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ এবং বরখাস্ত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এএসপি (সহকারী পুলিশ সুপার) থেকে তদূর্ধ্ব পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি, শাস্তি, বরখাস্তসহ সার্বিক বিষয় দেখভাল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া কনস্টেবল থেকে শুরু করে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্ব পুলিশ সদরদপ্তরের।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজবাড়ীর পাংশায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৩ জন গ্রেফতার
পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস সেনাপ্রধানের
সন্ত্রাসী হামলায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত, আহত ১০
ইবির আইন প্রশাসক হলেন ড. নুরুন নাহার
নাটকীয় জয়ে রংপুরের সাতে সাত
নতুন ফেসবুক পেইজের ঠিকানা দিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন
ভক্তদের হঠাৎ কি বার্তা দিলেন ঢালিউড কুইন শাবনূর?
পেকুয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান কারামুক্ত
ধ্বংস হওয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের জন্যই ৩১ দফা কার্যকর প্রয়োজন: আমিনুল হক
বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা জানাল ভারত
হাসিনার এপিএস লিকুর ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন, দুদকের ৪ মামলা
মারের কোচিংয়ে জোকোভিচের প্রথম জয়
উত্তরখানে ভূয়া পুলিশ গ্রেফতার
মাত্র ৯৫ দিনে মুহিব্বুল মুরসালিন খানের পবিত্র কুরআন হিফয সম্পন্ন
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক
হাজীগঞ্জে ননদ ভাবির ঝগড়া থামাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু
মাসরুর আরেফিন পুনরায় সিটি ব্যাংকের এমডি
নতুন বছরে টেকনোর অসাধারণ অফার
‘১৫ জানুয়ারি ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ'র ঈসালে সাওয়াব মাহফিল সফল করুন’
মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চায় বাংলাদেশ