মেঘা প্রকল্প নকশায় ত্রুটি থাকায় কাজে স্থবিরতা
১৭ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৭ পিএম | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৮ এএম
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ শুরুর পর জানা গেল নকশায় ভুল। এই ভুল নকশায় কাজ করলে একসময় ভেঙে ফেলতে হবে নবনির্মিত টার্মিনাল ভবন। তাই থমকে দাঁড়ায় বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ মেগা প্রকল্পের কাজ। সময় বাড়িয়ে তিন বছরেও শেষ করা সম্ভব হয়নি প্রকল্পের সিকি ভাগ কাজ। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক নতুন টার্মিনাল নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও কার্গো স্টেশন স্থাপনের জন্য হাতে নেয়া হয় মেগা প্রকল্প। কিন্তু কাজ শুরুর পর নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ে। কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো ভুল নকশায় কাজ হলে বিমানবন্দরটির সক্ষমতা কমবে। পণ্য পরিবহনেও দীর্ঘদিনের জটিলতাসহ পোহাতে হবে নানা ভোগান্তি। তাই নতুন নকশা পরিকল্পনা করাচ্ছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ফলে অন্তত দুই বছর পিছিয়ে যেতে পারে প্রকল্পটি। অথচ এ বছরই এর উদ্বোধনের কথা ছিল।
এদিকে, সিলেটের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে গত ২০ জুলাই ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সভা আহ্বান করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ওই সভায় তিনি বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজে ধীরগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এর আগে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. মাহবুব আলী বিমানবন্দর পরিদর্শন করে কাজের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নকশা সংশোধন করে কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরো অন্তত দুইবছর বৃদ্ধি করতে হবে। আর এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাড়বে সিলেটের সরাসরি ফ্লাইট। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সেভেন সিস্টারখ্যাত সাতটি রাজ্যের যাত্রীরাও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে আগ্রহী হবে।
সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ মেগা প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর। এরপর নকশা প্রণয়ন করে যৌথভাবে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘ইয়োশিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’ ও ‘হিরিম আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স’। ওই নকশার উপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ২ হাজার ৩০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকার ওই প্রকল্পের কাজ পায় চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কন্সট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি)। প্রকল্পটির চুক্তি স্বাক্ষর হয় ১১ মে ২০২০ সালে। মেগা প্রকল্পটির মধ্যে ছিল- ৩৪ হাজার ৯১৯ বর্গমিটারের দ্বিতল বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন, ৬টি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, কনভেয়ার বেল্টসহ ৩৬টি চেক ইন কাউন্টার, ২৪টি পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, ৬টি এস্কেলেটর, ৯টি লিফট, ৩টি লাগেজ কনভেয়ার বেল্ট, ৬ হাজার ৮৯২ বর্গমিটারের কার্গো ভবন, জেট ফুয়েল ডিপো ও কন্ট্রোল টাওয়ারসহ আনুষাঙ্গিক আরো কিছু অবকাঠামো নির্মাণ। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী। চলতি বছরের মে মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর বেবিচক প্রকল্পের মেয়াদ আগামি ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে। কিন্তু এর মধ্যে শেষ হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ কাজ। এর মূল কারণ নকশা ত্রুটি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানবন্দরের পুরো টার্মিনাল ভবনের নকশাটি ভুলভাবে তৈরি করা হয়েছে। নকশা অনুযায়ী নির্মিত হলে আন্তর্জাতিক রুটে উড়োজাহাজ চলাচল করতে হলে ভবিষ্যতে ভাঙতে হবে টার্মিনালটি। এছাড়া পরিবর্তন আনতে হবে বোডিং ব্রিজেও। প্রকল্প পরিচালক শাহ জুলফিকার হায়দার জানান, টার্মিনাল ভবনের ১ হাজার ৪৪৩টি পাইলের মধ্যে অধিকাংশেরই নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কার্গো টার্মিনাল ভবনের ২৭২টি ও প্রশাসনিক ভবনের ১২৯টি পাইলের মধ্যে সবকটির কাজ শেষ হয়েছে। নতুন নকশায় এই পাইলগুলো ভাঙার প্রয়োজন পড়বে না।
বেবিচক সূত্র জানায়, নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরটি দিয়ে বছরে ২০ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। বর্তমানে ওই বিমানবন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। এছাড়া অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলী ও সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত দৃষ্টিনন্দন টার্মিনালটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। বর্তমানে এই বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সরাসরি ফ্লাইট চালু রয়েছে। মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেলস এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেটের সাবেক সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবি জানিয়ে বলেন, বার বার সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়াটা দুঃখজনক।
বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শাহ জুলফিকার হায়দার জানান, নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ায় সম্প্রসারণ কাজে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। সংশোধিত নকশার ড্রাফট জমা হয়েছে, যাচাই-বাছাই চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ২২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। মেয়াদ আরো অন্তত দুই বছর বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে বলে তার অভিমত।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা
সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা
ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে
দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন
কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম
জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা
ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক
সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা
শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ
ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক
টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস
বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র : জাতীয় নাগরিক কমিটি
সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন
ফেসবুকে কাকে ননসেন্স বললেন শবনম বুবলী
বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় আবারো প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যাপক সাইদুর
পানির ট্যাংকে লুকিয়ে ছিলেন আ. লীগের ‘ভাইরাল নেত্রী’ কাবেরী
সাঁথিয়ায় করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন কৃষিশ্রমিক নিহত, আহত ৫
ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না নয়াদিল্লি: দ্য হিন্দু
যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক সামুদ্রিক ঢেউ ও টর্নেডোর আঘাত, এক জনের মৃত্যু