‘রিজার্ভের ডলার নিজেদের জন্য খরচ করা উচিত নয়’
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৫ পিএম | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, রিজার্ভের ডলার নিজেদের জন্য খরচ করা উচিত না। এই ডলার দেখিয়ে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারি। তাই দেখানোর জন্যই রিজার্ভ সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। গতকাল অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) আয়োজিত আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি মানব সম্পদে অনেক দুর্বল। অবকাঠামোর জন্য অর্থনীতি আটকে থাকবে না। এখানের মেধাবী মানবসম্পদ বিদেশে চলে যাচ্ছে। ভারত থেকেও অনেক মানবসম্পদ বাহিরে চলে গিয়েছিলো। তারা পরবর্তীতে ফিরিয়ে এনে কাজে লাগিয়েছে। তবে আমরা সেরকমভাবে ফিরিয়ে এনে কাজে লাগাতে পারছি না। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আমরা কিছুই করছি না। তাই এদিক থেকে আমাদের অর্থনীতি পিছিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কম খরচের প্রযুক্তি দিয়ে শিক্ষাখাত পরিচালনা করা যাবে না। বিশ্বের বহু দেশ শিক্ষা খাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে গিয়েছে। তাই আমাদের দেশের শিক্ষা খাতে এখন দরকার উন্নত প্রযুক্তি। যদিও অনেক সময় আমরা কম খরচের প্রযুক্তি দিয়ে অনেক কিছু করতে পারি। তারপরেও এগুলো পর্যাপ্ত না। তাই শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এসব কাজ করতে দরকার অনেক বরাদ্দ। এজন্য রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে হবে বলেও জানান এই অর্থনীতিবিদ।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। এগুলো তো ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়া হয়নি। কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ে গেছে। কোনো অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। বেনামে গেলেও অ্যাকাউন্টের তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছে আছে। ১০ লাখ টাকার ওপরে লেনদেন হলে রেকর্ড থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে। তারা চাইলেই টাকা কোথায় গেছে এটা জানা সম্ভব। কারণ ব্যাংকিং সিস্টেমে সব তথ্যই রেকর্ড থাকে। টাকা কোথায় গেছে, কার কাছে সবই জানা যায়। হলমার্কের কেলেঙ্কারি সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের সমালোচনা করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, হলমার্কের কেলেঙ্কারি হয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় জেলগেটে গিয়ে। এটা তো অনেক পুরোনো একটি সিস্টেম। সে কোথায় টাকা নিয়ে গেছে এটা জেলগেটে গিয়ে কেন জিজ্ঞাসা করতে হবে। তাহলে ডিজিটাল সিস্টেম করে লাভ কী? ব্যাংক চাইলে তার লেনদেনের সব তথ্যই বের করতে পারবেÑসে কোন কোন জায়গায় টাকা পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, কানাডার বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের তথ্য আমরা শুনি। যেখানে আমরা শুনি-জানি সেখানে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলো অবশ্যই জানে কিন্তু বলে না।
অর্থপাচার অর্থনীতির জন্য ক্ষতি জানিয়ে প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, যে কোনোভাবে অর্থপাচার হোক না কেন তা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতি অর্থাৎ অর্থপাচার হলে ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, আগে শুধু আমদানি-রফতানিতে দাম কমবেশি দেখিয়ে অর্থপাচার হতো। এখন অর্থপাচারের অনেকগুলো মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে। যে যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পায় সে সেভাবেই পাচার করে। অর্থপাচার বাড়লে রেমিট্যান্স কমে যাবে।
দুর্নীতি অর্থপাচারের বড় কারণ জানিয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, যারা দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করছে তারা যদি মনে করে দেশে এ অর্থ রাখা নিরাপদ নয়, তারা যেকোনো কৌশলে অর্থপাচার করবে। এখন অনেকে দ্বৈত নাগরিক হওয়ার জন্য বিদেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অর্থপাচারের আরেকটি সহজ মাধ্যম অফশোর ব্যাংকিং। এখন অনেক ব্যাংক বিদেশে অফশোর ব্যাংকিং চালু করেছে, যার মাধ্যমে চাইলে অর্থপাচার করা যায়। কারণ অফশোর ব্যাংকিংয়ের শাখায় কত অর্থ সংগ্রহ করছে তার কোনো হিসাব নেই। নিজেদের মতো অর্থ সংগ্রহ করে ইচ্ছে মতো রেখে দিচ্ছে। আর ব্যাংকের মালিকরা চাইলে তার কোনো হিসাবই থাকে না।
প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানো সম্ভব নয় জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসছে না। আর আসবেও না। রেট বাড়িয়ে রেমিট্যান্স আনা যাবে না। কারণ বিদেশে অর্থের চাহিদা যদি না কমে তাহলে কোনোভাবেই পাচার রোধ করা যাবে না। যাদের অর্থ নেয়ার প্রয়োজন হবে তারা যেকোনো উপায়ে অর্থপাচার করে নিয়ে যাবেই।
অর্থনীতি অনেক ভালো ছিল বলেই এখন বেশি খারাপ মন্তব্য করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছিল। আমরা যত ইচ্ছা প্রকল্প নিচ্ছিলাম। আমাদের তো যথেষ্ট রিজার্ভ আছে, কোনো অসুবিধা নেই। ভবিষ্যতে যে হঠাৎ করে কোনো চাপ আসতে পারে, সেটা চিন্তায় ছিল না। যার কারণে আমরা সময় মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারিনি। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রতি বছর কিন্তু দীর্ঘদিন ডলার রেট ধরে রেখেছে, বাড়তে দেয়নি। যার কারণে এখন বেশি সমস্যায় পড়েছে। কারণ হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছে অর্থনীতি। আগে থেকে যদি আস্তে আস্তে দাম বাড়ত তাহলে এখন দাম বেড়ে এমন সমস্যায় পড়তে হতো না। তিনি বলেন, রিজার্ভ অনেকে আছে বলে আমরা একের পর এক বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প করছি। এগুলো ঋণের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকগুলো আছে প্রয়োজনীয়। অনেকগুলো আবার এসময়ে প্রয়োজন ছিল না।
এই অর্থনীতিবিদ জানান, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে বিদেশি ঋণ ফেরত দিতে হবে, বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। যদি ভবিষ্যতে আরও ঋণ নেই তাহলে পরিশোধের পরিমাণ আরও বাড়বে। এজন্য লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে আমাদের বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প নিতে হবে বলে জানান বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ। সভায় ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রাজশাহীতে তেলের ট্রাকে বিস্ফোরণ: ৪শ’ ব্যারেল তেল ও ৮ দোকান ভস্মীভূত
স্ত্রী পর্দা করতে না চাইলে করণীয় প্রসঙ্গে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন
১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
সংস্কার কমিশনের কাছে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান
মানিকগঞ্জে প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করলেন ইয়াছমিন খাতুন
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পিতৃবিয়োগ বিভিন্ন মহলের শোক জ্ঞাপন
মির্জাপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পরও খোঁজ মিলেনি
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম