বিরোধী দল নিধনে আদালত আরেকটি ‘আয়না ঘরে’ পরিণত হয়েছে : রিজভী
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৬ পিএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বাংলাদেশের আদালত সারাবিশ্বের মধ্যে ‘আজব আদালত’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিরোধী দল নিধনে বাংলাদেশের আদালত আরেকটি ‘আয়না ঘরে’ পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এক অদ্ভুত শাসন বিরাজমান। এটি এমন এক দুঃশাসন যেখানে এক ব্যক্তির ইচ্ছায় আদালতের কার্যক্রম চলে। এখানে ন্যায়বিচার, বিধিবদ্ধ আইনী প্রক্রিয়ায় কোন কাজ হয় না। সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও এবং আর কোন মামলা দায়ের না করার উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। ইতোপূর্বে নানাভাবে তাকে আটকিয়ে রাখার যে বেআইনী কার্যক্রম দেশব্যাপী প্রত্যক্ষ করা হয়েছে তা নজীরবিহীন। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে ব্যাক ডেট দিয়ে পেন্ডিং মামলায় মুন্নাকে আটকিয়ে রাখার পর আবারও উচ্চ আদালতে রীট করলে তাকে মুক্তির নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জেল কতৃর্পক্ষ সম্পূর্ণরূপে নীরব। আব্দুল মোনায়েম মুন্না এ মূহুর্তে সকল মামলা থেকে জামিনপ্রাপ্ত। অথচ তাকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না জেল কতৃর্পক্ষ। তারা বলছে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট এর কাছ থেকে মুক্তির নির্দেশনা না পেলে মুন্নাকে ছাড়বে না। এই ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ দেশে মানুষের নির্বিঘেœ চলাচলের স্বাধীনতা, কন্ঠের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক স্বাধীনতা এখন শেখ হাসিনার আঁচলবন্দী।
তিনি বলেন, পুলিশ ও আদালত এ ক্ষেত্রে আইনের শাসনের বদলে শেখ হাসিনার চোখ রাঙানিকেই আমলে নিচ্ছে। শেখ হাসিনার চেতনার স্তরে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করা ছাড়া আর কিছু নেই। সুবিচারকে তিনি করেছেন দেশছাড়া। রিজভী আব্দুল মোনায়েম মুন্নাসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ সকল মানবাধিকার সংগঠনকে উদ্দাত্ত আহবান জানান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে তরুণদের যে ঢল নেমেছে তাতে স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়ায় বিহব্বল শেখ হাসিনা। এতে তিনি স্বৈরতন্ত্রের ক্রমোন্নতির ক্রমাগত বিকাশ ঘটাতে আরও মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এখন চলছে নানা রকমের উদ্দেশ্য ও অভিসন্ধি। অবৈধ আওয়ামী সরকারের আদালত তাই উঠেপড়ে লেগেছে বিএনপি নেতাদের সাজা দিতে। নতুন নতুন মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের প্রবাহ আটকে নেই। কারাবন্দী নেতাদেরকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকিয়ে রাখার জন্য প্রহসনের আইনী প্রক্রিয়াও তারা আর অবলম্বন করছেন না। এখন গায়ের জোরেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদেরকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। গ্রেফতারসহ রিমান্ডের নামে উৎপীড়ণ এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের কপালের লিখন হয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও নীতিকে সমাধিস্থ করে নব্য বাকশালী কতৃর্ত্ববাদের নতুন আদর্শ, নতুন ভাবধারা, নতুন রুচি ও নীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা প্রতি মূহুর্তেই অবলোকন করছি। যেমন উচ্চ আদালতের বিচারপতি বলেন, ‘আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’। গণতন্ত্রের মহান আদর্শ, জীবনের মহান সত্যের পদধ্বণি ওরা শুনতে পাচ্ছে না। ওরা শুধুই পচা, গলিত একদলীয় নব্য বাকশালের কদর্যতা, তুচ্ছতা, হীনতা ও নীচতার হিং¯্র দুঃশাসন কায়েম রেখে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। তাই বর্তমানে দেশব্যাপী চলছে আবারও একতরফা নির্বাচন করতে পুলিশের পাশাপাশি আদালতকে করা হয়েছে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসকের পৈশাচিক প্রবৃত্তির লীলাকেন্দ্র।
রিজভী বলেন, এখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় থাকার দিগন্তবিস্তৃত লালসা পূরণের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছেন আদালতের বিচারকরা। তাই শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচন নিয়ে দাম্ভিক স্বার্থপরতার পক্ষে বিচারকরা কাজ করছেন এবং সেজন্য তারা অত্যন্ত আন্তরিকতা সহকারে জোরেসোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু নেতাকর্মীকে সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। সাক্ষীদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তাদের জবানবন্দী নেয়া হচ্ছে। সাক্ষীরা সাক্ষী দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাদেরকে পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে এনে জোর করে সাক্ষী দেয়া হচ্ছে। দেশের অরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার বিচারকার্য শুরু করে ৩/৪ দিন পর পর মামলার তারিখ দেয়া হচ্ছে এবং রাতেও আদালতের কার্যক্রম চলছে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জনগণ কিন্তু গভীর নিদ্রায় অচেতন নয়। গণতন্ত্রের নবজাগরণের স্বরুপ ইতোমধ্যেই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। গণতন্ত্রের নতুন যুগের জয়যাত্রার পথে ফ্যাসিবাদের ব্যারিকেড ভেঙেচুরে প্রতিষ্ঠিত হবে জনগণের মালিকানা। গণতন্ত্র মুক্তি পাবে, গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত হবে এবং তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন।
রুহুল কবির রিজভী অবিলম্বে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ, হাবিবুল ইসলামা হাবিব, সাইফুল আলম নীরব, রফিকুল আলম মজনু, শেখ রবিউল আলম রবি, তানভীর আহমেদ রবিন, এস এম জাহাঙ্গীর, আলী আকবর চুন্নু, গোলাম মাওলা শাহীন, ইউসুফ বিন জলিল কালু, মুসাব্বির আহমেদসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ