নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বরিশালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তিকৃত প্রায় ১৭ হাজার রোগীর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনেই প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নতুন ভর্তি হয়েছেন। গত ১০ দিনে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৬ জন সহ গত কয়েক মাসে বরিশাল অঞ্চলে ৫৬ জনের মৃত্যুর খবরের কথা জানাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতের এ সংখ্যার মধ্যে শুধু গত মাসেই প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার ২৯ জনই মারা গেছেন গত মাসে।
অপরদিকে, বরিশালে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ৩৩ জন ছাড়াও জেলার অন্য হাসপাতালে আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীতে ৪ জন, ভোলাতে ৭ জন, পিরোজপুর ও বরগুনাতে ৫ জন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে এবার বরিশালে ডেঙ্গুতে মৃত ৫৬ জনের মধ্যে অন্তত ৩৫ জনই নারী। এমনকি শহরের মতো গ্রামঞ্চলেও এবার বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত ও মৃতদের একটি বড় অংশই পল্লী এলাকার বলে জানা গেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি হলেও অল্প বয়সি অনেক রোগীও আক্রান্তের সাথে মৃত্যু হয়েছে ইতোমধ্যে।
গত আগস্টের পুরো মাস জুড়ে বরিশাল বিভাগের সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোর মেঝেতেও অনেক রোগীর ঠাঁই মেলেনি। তবে চলতি মাসে পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল।
এমনকি গত মাসের মধ্যভাগে একদিনে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির সংখ্যা ৪শ’ ওপরে উঠে পরে তা ৩শ’ সামান্য নিচে নামলেও গত কয়েক দিনে পরিস্থিতির আবার অবনতি ঘটেছে। ১ সেপ্টেম্বর ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৫৬ হলেও পরদিনই তা ৩০৫ জনে উন্নীত হবার পরে গত ১০ দিনেই সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা সাড়ে ৩শ’ বেশি ছিল। এমনকি গত ৭ সেপ্টেম্বর সংখ্যাটা ৪শ’ ওপরে উঠেছে। পাশাপাশি ২ সেপ্টেম্বর ১ জনের মৃত্যুর পরে ৩ সেপ্টেম্বর একদিনেই আরো ৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর। ৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় একদিনে ৪ জনে মৃত্যু হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতার সাথে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো অধিকতর সচেতন হবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এযাবত কালের সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মশাবাহী ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পরেও বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে তেমন কোনো প্রতিকার লক্ষণীয় নয়। প্রায় ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীতে মশা নিয়ন্ত্রনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নগরবাসীকে আশ্বাস্ত করতে পারছেন না। এ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১২টি ফগার মেশিনের সাথে কিছু হ্যান্ড স্প্রেয়ার দিয়ে মাঝে মধ্যে মশক নিয়ন্ত্রণের মহড়া দেয়া হলেও নগরবাসী এখনো মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ। উপরন্তু খাল, ড্রেন ও ঝোপঝাড়গুলো পরিষ্কার করার লোকবলের সঙ্কট না থাকলেও আন্তরিকতার ঘাটতিতে নগরী জুড়ে মশার দাপট অব্যাহত রয়েছে। প্রায় একই চিত্র এ অঞ্চলের সবগুলো শহর ও গ্রামঞ্চলেও।
অপরদিকে সরকারি হাসপাতালে গত প্রায় ৪ মাসে প্রায় ১৭ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও বাস্তবে এর তিন গুনেরও বেশি মানুষ মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মৃতের সংখ্যাও সরকারি হিসেবের চেয়ে আরো বেশি বলে মনে করছেন এসব চিকিৎসকগন।
তাদের মতে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রায় সবাই প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করছেন। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন, তারাই শুধু সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের মতে, জেলার ১০টি উপজেলায় রোববার পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। যারমধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ৪ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হলেও এ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। পটুয়াখালীতেও প্রায় ৪ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও মারা গেছেন ৪ জন। ভোলাতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭শ’ হলেও মারা গেছেন ৭ জন। পিরোজপুরে ভর্তিকৃত প্রায় ৩ হাজার রোগীর মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। বরগুনাতেও ভর্তিকৃত প্রায় দুই হাজার রোগীর মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বরিশাল মহানগরীর পাশের ঝালকাঠী জেলায় প্রায় ৪ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কোনো মৃত্যু নেই। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট এ জেলাটির বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগীই বরিশালে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য আসছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। এদিকে গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার দুটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল ও ৪২টি উপজেলা হাসপাতালে ১ হাজার ১০১ জন ডেঙ্গুু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। যার মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালেই ২৪৭ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানা গেছে।
গতকাল রোববার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরো ৩৭৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ১৭ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১৫ হাজার ৮১৪ জনই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল
ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা
মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা
বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস
বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা