ড্যাপ সংশোধন ঢাকার বাসযোগ্যতা নষ্ট করবে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১১ পিএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। ড্যাপ সংশোধনের ক্ষেত্রে সব অংশীজনের পরামর্শ না নিয়ে কেবল আবাসন ব্যবসায়ী এবং ইমারত নকশাকারী ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের আগ্রহকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরও নষ্ট করায় ভূমিকা রাখবে।
গতকাল শনিবার ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ: আইপিডির পর্যবেক্ষণ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন। আইপিডি এ সভার আয়োজন করে। অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্যাপ সংশোধনের প্রস্তাবনায় কী আছে। প্রথমত, অন্তত তিন বছরের জন্য সরকারি ও বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবনের উচ্চতার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি আসছে। দ্বিতীয়ত, আগামী তিন বছরের জন্য সরকারি আবাসন, বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণে আগ্রহীদের নাগরিক সুবিধা নির্ধারিত স্থান সংরক্ষণের কারণে প্রণোদনা হিসেবে অতিরিক্ত দশমিক ৫ এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) দেওয়া হবে। অথচ সরকারি ও বেসরকারি পরিকল্পিত আবাসিক প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে ড্যাপে দেওয়া আছে। বৈশ্বিক মানের চেয়ে বেশি এফএআর দেওয়া আছে ড্যাপে। আমরা বলছিলাম, এফএআর আরও কমানোর জন্য। এখন বলা হচ্ছে সেখানেও বাড়ানো হবে।
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, ড্যাপ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে ভবন নির্মাণে ফারের সুবিধা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন নেই। সংশোধিত ড্যাপ পুরোটাই যুগোপযোগী। এখন এ ড্যাপ আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়ে চলে এসেছে। রাজউকের সঙ্গে সভা করে চূড়ান্ত করা হবে। এ মাসের মধ্যেই গেজেট হয়ে যাবে।
আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যে কোনো পরিকল্পনার সফলতা কিংবা ব্যর্থতা নির্ভর করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তরিক সদিচ্ছা, যথাযথ প্রয়োগ, প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ, আইনের শাসন ও জনস্বার্থ-জনকল্যাণ রক্ষায় পরিকল্পনা এবং নীতি-নির্দেশনার নির্মোহ ও যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর। ইতোপূর্বে প্রণীত ঢাকা মহানগরীর জন্য কাঠামোগত পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা কিংবা ড্যাপ দলিলগুলো সঠিক ও পূর্ণ বাস্তবায়নের অভাবেই ঢাকা ক্রমান্বয়ে বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়নের পর বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল বারবারই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উপর চাপ প্রয়োগ করেছে। ফলে ড্যাপের কার্যকর বাস্তবায়ন ক্রমাগত বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, যা বাসযোগ্য ও টেকসই ঢাকা গড়ার অন্তরায়। সাম্প্রতিক ড্যাপ সংশোধনের উদ্যোগ এরই ধারাবাহিকতা মাত্র। বাস্তবিকই ড্যাপকে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার প্রধান পরিকল্পনা দলিল হিসবে কার্যকর করতে গেলে পরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বাস্তবতায় যদি কোনো পরিমার্জন ও সংশোধন করার প্রয়োজন হয়, তার জন্য পেশাজীবী ও অংশীজনদের যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, যার কোনো বিকল্প নেই। এর অন্যথা হলে এ ধরনের সংশোধন ন্যায্যতা হারাবে; রাষ্ট্র ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং সর্বোপরি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসই ও বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়ার অঙ্গীকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
জানা গেছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) যুগোপযোগী করে সংশোধন হচ্ছে। এ ড্যাপে বেশকিছু বিষয় সংশোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি আবাসন, অপরিকল্পিত এলাকা, ব্লকভিত্তিক আবাসন, একত্রীভূত প্লটের মালিকদের কিছুটা ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এতে আগের চেয়ে ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে সংশোধিত ড্যাপের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। চলতি মাসেই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ড্যাপ গেজেট হওয়ার পর পেশাজীবী ও স্টেকহোল্ডাররা ফ্লোর এরিয়া রেশিওর বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সভাপতিত্বে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ১৮ মে রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে ড্যাপ বাস্তবায়নসংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ জুলাই অনুমোদন দেন। এই সংশোধিত ড্যাপে ১১টি সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়। সংশোধিত ড্যাপের প্রস্তাবে বলা হয়. আগামী তিন বছরের জন্য সরকারি ও রাজউক অনুমোদিত বেসরকারি আবাসন প্রকল্পগুলোয় ভবন নির্মাণে আগ্রহী আবেদনকারীদের দশমিক ৫ ফার প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়েছে। এসব আবাসিক এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। একই সঙ্গে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার চেয়ে নাগরিক সুবিধা বেশি থাকায় প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত এলাকা অর্থাৎ বাড্ডা, ডেমরা, খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান, রায়েরবাজার, সাভার, কেরানীগঞ্জে ফারের সুবিধা দশমিক ৫ বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একইভাবে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৬ বিঘা পর্যন্ত আয়তনের ব্লকে ২০ শতাংশ আর ১৫ বিঘার বেশি আয়তনের ব্লকে ৩০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন ভূমিমালিকরা। এতে আগের তুলনায় নতুন ভবনের উচ্চতা বা প্রশস্ততা বাড়বে। ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় রাখা হয়েছে সংশোধিত ড্যাপে। যেমন- ব্লকের মোট জমির ৪০ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান (পার্ক, খেলার মাঠ, সবুজ ভূমি) হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষিত জমির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ একত্রে থাকতে হবে। এ ছাড়া ব্লকের মোট আয়তনের ৮০ শতাংশ জমির ওপর সর্বোচ্চ ভূমি আচ্ছাদন হিসাব করতে হবে। একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক ডুয়েলিং ইউনিট (ফ্ল্যাট সংখ্যা) প্রদানসংক্রান্ত প্রস্তাবে ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) অনুযায়ী একক বা যৌথ প্লটভিত্তিক আবাসনের ক্ষেত্রে প্রাপ্য ডুয়েলিং ইউনিটকে ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা যেতে পারে। এ ছাড়া ৬ কাঠার বেশি আয়তনের প্লটের ক্ষেত্রে দশমিক ২৫ ফার এবং ১০ কাঠার বেশি প্লটে দশমিক ৫০ ফার প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
এ বিষয়ে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপ গেজেট হওয়ার পরে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনসহ অংশীজনদের কাছ থেকে যে মতামত এসেছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা হয়। সে সভার সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এই সংশোধিত ড্যাপে কোনো ব্যক্তিবিশেষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি, সমগ্র ঢাকা শহরের ভিতরে একটা সাম্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিবেশগত দিক বিবেচনায় নিয়ে ড্যাপটি সংশোধন করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতি তিন বছর পর পর ড্যাপ রিভিউ করা হবে। আগামি রিভিউর সময় প্রেক্ষাপট ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে সংশোধন হবে।
১৯৯২ সালে সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৯৫ সালে ঢাকা মহানগরী উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে ড্যাপ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২২ জুলাই গেজেট আকারে ড্যাপ প্রকাশ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৩ সালে আবার ড্যাপ রিভিউ কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে (২০২২-২০৩৫) ১৩ বছরের জন্য নতুন করে ড্যাপ গেজেট হয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল
ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা
মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা
বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস
বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা