ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৫ পৌষ ১৪৩১

মৌ চাষেই মধু মামুনের ভাগ্য পরিবর্তন

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া থেকে

০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

সরিষা খেত থেকে মধু আহরণ করে সেই মধু দেশ-বিদেশে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার গেটপাড়া গ্রামের যুবক মামুন অর রশিদ।

নিজের বেকারত্ব ঘুচিয়ে করেছেন দুই শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান। মামুন থেকে পরিচিতি পেয়েছেন মধু মামুন নামে। মৌ চাষের মাধ্যমেই তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। মধু মামুনের মধু এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে রফতানি হচ্ছে দেশের বাইরেও।

সারা দেশেই সরিষা খেতে মৌ চাষের চাষের মাধ্যমে মধু আহরণ জনপ্রিয় হচ্ছে। মধু খেতে যেমন মিষ্টি, তেমনি আছে এর ওষুধি গুণ। তাই সবসময় এর চাহিদা থাকে।

কিন্তু বাজারে যেসব মধু পাওয়া যায় তার নির্ভেজালতা নিয়ে মানুষের মনে যথেষ্ট সন্দেহ থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম কুষ্টিয়ার মিরপুরের মধু মামুন। তিনি সরিষা খেতেই মৌমাছির মৌবক্সের মাধ্যমে মধু আহরণ করেন এবং সেখান থেকেই তা বিক্রি করেন। আর এভাবেই তিনি নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন।
মামুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে তার এক বন্ধুকে সঙ্গে দিয়ে মাত্র ২ হাজার ৬০০, টাকায় ৪ টি মৌবক্স কিনে মৌমাছি পালন শুরু করেন। পরে এই বিষয়ে একটি বেসরকারি এনজিও এবং বিসিকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন মধু আহরণের কাজ। আস্তে আস্তে আয় বাড়তে থাকে। বাড়তে মামুনের মৌবক্সের সংখ্যা। সেইসঙ্গে বাড়তে থাকে মামুনের মধুর জনপ্রিয়তা। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তার খামারে কয়েকশ মৌমাছির বাক্স। গড়ে তুলেছেন মিষ্টি মৌ-খামার। এখন শুধু সরিষা খেত থেকেই নয়, লিচু ফুল, কালোজিরা ফুলেরও মধু সংগ্রহ করেন তিনি।

তার খামারে এখন ২৫ জন কর্মী কাজ করেন। এছাড়াও তার খামার থেকে মধু সংগ্রহ করে ব্যবাসা করছেন আরও শতাধিক যুবক। বছরে কয়েক টন মধু উৎপাদন হয় তার খামারে। সেই মধু দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন রফতানি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, স্পেন এবং কোরিয়ায়। আর এই কারণে এলাকায় তিনি এখন মধু মামুন নামে পরিচিত।

সরেজমিনে মিরপুর উপজেলার ধুবাইল গেটপাড়া মাঠের খামারে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃত সরিষা মাঠে চলছে মধু আহরণ। সরিষা ক্ষেতের মাঝে ফাঁকা একটু জায়গায় বেশ কিছু মৌবক্স রাখা। সেখানে পুরো মাঠেই মৌমাছির আনাগোনা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেসব বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন-অর-রশিদ বলেন, প্রথমে শখের বসে ২ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র ৪টি মধুর বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করি। এরপর আত্মকর্মসংস্থান এবং কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে মধুর বাণিজ্যিক চাষ শুরু করি।

তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও তাড়াশ কোন্দলে, চলনবিল এলাকা, ফরিদপুর ভাঙ্গা কালিয়াকোর এবার সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ করছি। বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে কালজিরা ফুলের মধু ও লিচু ফুলের মধুও সংগ্রহ করেন। এ বছর ৩০০টি বাক্স থেকে থেকে দুই হাজার কেজি মধু পাবেন বলে আশা করছেন। প্রতিকেজি মধু ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে তিনি মধু বিক্রি করে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার আয় করার সম্ভাবনা দেখছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মামুন বলেন, কৃষি অফিসার আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমাকে কুষ্টিয়া, চলনবিল, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মধু আহরণে যেতে হয়। তাদের কাছ থেকে মৌ বাক্সসহ রানী মৌমাছি এবং মধু আহরণের জন্য একটি পিকআপ পেয়েছি। এছাড়াও উন্নতমানের বাক্সসহ বিভিন্ন সময়ে নানান সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। খামারে কর্মরত জাহান আলী নামের এক শ্রমিক জানান, এই খামারে কাজ করেই তার সংসার চলে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাকে মধু সংগ্রহ করতে হয়। এই খামারে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ অ
াল মামুন বলেন, উপজেলার মডেল মৌ-খামারি মামুন মধুর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সাফল্য দেখে আরো অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষে আগ্রহী হয়েছেন। সাধারণ উপায়ে মধু সংগ্রহ করতে গেলে মান ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। আর মামুনের খামারে প্রযুক্তির ব্যবহার করায় মধুর মান অক্ষুণœœ থাকে। আবার মৌ চাষের মাধ্যমে সরিষা খেত থেকে মধু আহরণ করলে মৌমাছির মাধ্যমে ভালো পরাগায়ণ হয় এবং সরিষার আবারও বৃদ্ধি তাই। তাই সব দিক বিবেচনা করে চাকরির পেছনে না ছুটে মামুনের মতো উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

হাসিনার দুর্নীতি অনুসন্ধানে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত

হাসিনার দুর্নীতি অনুসন্ধানে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত

মুজিবনগরে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় দুর্ধর্ষ চুরি

মুজিবনগরে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় দুর্ধর্ষ চুরি

কুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা শনিবার, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

কুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা শনিবার, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

ভাসমান ডিপো স্থায়ীকরণ ও জ্বালানি তেল সরবরাহের দাবীতে মানববন্ধন

ভাসমান ডিপো স্থায়ীকরণ ও জ্বালানি তেল সরবরাহের দাবীতে মানববন্ধন

শরীয়তপুর জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে

শরীয়তপুর জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে

নোবিপ্রবিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা

নোবিপ্রবিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা

আশুলিয়ায় বাসা বাড়িতে অবৈধ তিতাস গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

আশুলিয়ায় বাসা বাড়িতে অবৈধ তিতাস গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

বরবাদ' সিনেমার দ্বিতীয় অংশের শুটিংয়ে মুম্বাইয়ের পথে শাকিব

বরবাদ' সিনেমার দ্বিতীয় অংশের শুটিংয়ে মুম্বাইয়ের পথে শাকিব

কেরানীগঞ্জে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্য র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

কেরানীগঞ্জে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্য র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

শিবালয়ে খাবারের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে গৃহকর্তার সর্বস্থ লুটে নেয়া চক্রের এক সদস্য আটক

শিবালয়ে খাবারের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে গৃহকর্তার সর্বস্থ লুটে নেয়া চক্রের এক সদস্য আটক

ইমরানের খানের বিচার পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক সংসদীয় সংস্থা

ইমরানের খানের বিচার পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক সংসদীয় সংস্থা

কুড়িগ্রামে যুবদল নেতার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ

কুড়িগ্রামে যুবদল নেতার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ

নাঙ্গলকোটে দুর্ঘটনায় পৌর স্বাস্থ্য সহকারীর মৃত্যু

নাঙ্গলকোটে দুর্ঘটনায় পৌর স্বাস্থ্য সহকারীর মৃত্যু

ইউক্রেনে সংঘাতের দ্রুত অবসান চান ট্রাম্প

ইউক্রেনে সংঘাতের দ্রুত অবসান চান ট্রাম্প

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন

নোয়াখালীতে বাসচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু,আহত ২

নোয়াখালীতে বাসচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু,আহত ২

মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে নওগাঁ

মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে নওগাঁ

নির্বাচনের রোড ম্যাপ দেন অতিসত্বর : আবুল কালাম আজাদ

নির্বাচনের রোড ম্যাপ দেন অতিসত্বর : আবুল কালাম আজাদ

উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ করা হল ‘হট ডগ’

উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ করা হল ‘হট ডগ’