নতুন করে বাড়ি-গাড়ি করতে পারবেন না ঋণ খেলাপিরা
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ১১ দফা পথনকশা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো গ্রাহক ঋণ নিয়মিত পরিশোধ না করলে তাকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এসব খেলাপিদের বিভিন্নি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। তারা নতুন করে জমি বাড়ি গাড়ি কিনতে পারবেন না, এমনকি নতুন ব্যবসাও খুলতে পারবেন না। এর মাধ্যমে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সীমার বাইরে দেওয়া ঋণ, বেনামি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ এবং জালিয়াতি/প্রতারণার মাধ্যমে দেওয়া ঋণ কমিয়ে শূন্যে আনতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সভা শেষে এসব তথ্য জানান ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন পথনকশায় খেলাপি ঋণ অবলোপন, অবলোপন ঋণ আদায় জোরদার, খেলাপিদের আর ছাড় না দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি শেয়ারধারী পরিচালকদের যোগ্যতা নির্ধারণ, যোগ্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, সীমার বেশি ঋণ না দেওয়া, দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য ২০২৬ সালের ৩০ জুনের পরে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, এখন তা বেড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা হয়েছে, যা বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। খেলাপি ঋণ কমাতে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে কোনো ব্যাংকের কোনো ঋণ একাধারে দুই বছর মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে তথা খেলাপি থাকলে (যা বর্তমানে তিন বছর) সেসব ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে অবলোপন করতে হবে। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ব্যাংকের কোনো ঝুঁকি তৈরি হবে না।
অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট গঠনের কথা বলা হয়েছে পথনকশায়। এই ঋণ আদায়ের লক্ষ্য অর্জন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পারদর্শিতায় যুক্ত করা হবে। বেসরকারি খাতে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়নের কথাও বলা হয় পরিকল্পনায়। এতে মন্দ ঋণ এবং অবলোপনকৃত সম্পদ সেই কোম্পানির কাছে বিক্রয় করে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক স্থিতিপত্র পরিষ্কার করতে পারবে এবং প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংকের আয় হিসেবে যুক্ত হবে। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের জন্য দেওয়া বাড়তি মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হবে না বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মনে করে, এতে ব্যাংকের তারল্য সংকট কমবে। ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কথাও বলা হয়েছে পথনকশায়। এ জন্য খেলাপি ঋণ আদায় করা কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ভাতা চালুর কথাও বলা হয়। ঋণের জামানত বাধ্যতামূলকভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে দিয়ে মূল্যায়ন করাতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংকের শেয়ারধারী পরিচালকদের যোগ্যতা ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা সংশোধন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয় পথনকশায়। তাতে ব্যাংকের সামগ্রিক ঋণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, তাদের সম্মানী নির্ধারণ এবং দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এতে স্বতন্ত্র পরিচালকেরা আমানতকারী ও শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে। এখন দুই-তিনটি ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকেরা শেয়ারধারী পরিচালকদের অনুগত। ফলে তাঁরা পরিচালনা পরিষদের স্বার্থই বেশি দেখছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি নিয়োগ ও পুনঃ নিয়োগে বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। পারদর্শিতার সূচকের ভিত্তিতে এমডিদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। এখন একাধিক ব্যাংকের এমডিদের শিক্ষাগত সনদ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে অনেকের অনিয়ম ধরা পড়লেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা এখন একজন গ্রাহক যে ঋণ নিতে পারে, তার বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে। এতে একীভূত হওয়ার তিন বছর পর্যন্ত কাউকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ শক্তিশালী হবে, মূলধন ঘাটতি দূর হবে ও খরচ কমে আসবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে মৌলিক প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক
শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত
এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা
নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন
বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
‘প্রতি বছরই সম্পদের হিসাব দিতে হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের’
গোয়ালন্দে চরমপন্থি দলের সদস্যকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা
দিসানায়েক : দিনমজুরের ছেলে থেকে শ্রলীঙ্কার প্রেসিডেন্ট
ভারতে মহাসংকটে ভোডাফোন-আইডিয়ার ভবিষ্যৎ
পর্তুগালে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বেজা বিএনপির সভা
‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু’ বলায় গরম পানিতে ঝলসে দেওয়া হলো কিশোরীকে
বিএনপির সমাবেশে হামলা-ভাঙচুরের দুই বছর পর আ.লীগের ১০৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন তার ভাবি শরীফা আক্তার
চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে জার্মানিতে
ইসরাইলি বর্বরতা থামছে না, গাজায় আরও ৪০ জনকে হত্যা
নতুন মামলায় সাবেক আইজিপি মামুন দুটি এবং আনিসুল একটিতে গ্রেপ্তার
কমলার সঙ্গে আর বিতর্ক করবেন না ট্রাম্প
নার্সিং কাউন্সিলের নতুন রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার
নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা