ঋণ না পেলে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হবে, ছাঁটাই হবে শ্রমিক

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম

ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা কার্যকরি মূলধনের চাহিদা ২০-৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ পরস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। ফলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা। ওয়ার্কি ক্যাপিটাল বাড়াতে না পারলে ব্যবসায়ীদের উৎপাদন কমিয়ে দিতে হবে। আর এ অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চললে শ্রমিক কমাতে হবে। এমন অভিমত দিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
গতকাল মঙ্গলবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টকে অংশ নিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি এ অভিমত দেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল-রাজী কমপ্লেক্স সিএমজেএফের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি করতে চাইলে এখনকার থেকে আড়াইগুণ বড় করতে হবে। ৬ বছরে আড়াইগুণ, আপনি যদি হিসাব করেন দেখবেন সাংঘাতিক বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জটা যদি আমরা উৎরাতে চাই তাহলে, যে গ্রোথ রেট দরকার, সেটা আমরা আগে কখনো দেখিনি। আপনি যদি হঠাৎ করে গ্রোথ রেট ৬ শতাংশ থেকে ৯ বা ১০ শতাংশে নিতে চান আপনাকে অনেক কিছু করতে হবে।
তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে আমাদের অর্থনীতি অনেকগুলো অভ্যন্তরীণ মেজর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। শুধু আমরাই যে মুখোমুখ তা কিন্তু না। আপনি যদি দেখেন মুদ্রাস্ফীতির ব্যাপারটা দুনীয়াজুড়েই সবাইকে হিট করেছে। আমাদেরও করেছে।

তিনি বলেন, জাপানি ইয়েন বা ভারতীয় রূপি টাকার অংকে খুব একটা বাড়েনি। এর কারণ হলো অন্যান্য দেশেও কারেন্সি রিভ্যালুয়েশন করতে বাধ্য হয়েছে। কারেন্সি রিভ্যালুয়েশনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় সমস্যা আমরা আমদানি করতে পারছি না। ব্যাংকগুলোর কাছে যথেষ্ট ডলার লিকুইডিটি নেই। এটা গত এক বছর ধরে আমাদের ভোগাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের জন্য সমস্যা একটা দাঁড়িয়ে গেছে, আগামী বছরের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ। সহজে যদি বিষয়টি বলি গত বছর আমাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল রিকয়ারমেন্ট যেটা ছিল, ডলারের দাম বাড়ার কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের রিকয়ারমেন্ট বেড়ে যায়। ওয়ার্কি ক্যাপিটাল রিকয়ামেন্ট বেড়ে যাওয়ার পরিমাণ ২০-৪০ শতাংশ। এই অবস্থায় যদি ক্রেডিট গ্রোথ মাত্র ১০ শতাংশ হয়, তখন আমাদের জন্য খুব ডিফিকাল্ট সিচুয়েশন হয়ে যায়।

এর কারণ হিসেবে ঢাকার ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, ব্যবসা করার জন্য যখন আমি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলছি, আমি দেখছি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যদি বাড়াতে না পরি তাহেল প্রডাক্টশন (উৎপাদন) কমিয়ে দেওয়া ছাড়া, সার্ভাইভের অন্য রাস্তা নেই। আমি যদি লোন নিতে না পারি তাহলে আর কী করবো? প্রডাক্টশন কমিয়ে দিতে হবে। এটা (প্রডাক্টশন কমিয়ে দেয়া) যদি লম্বা সময় ধরে চলে, তখন শ্রমিক কমানো কিংবা খরচ কমানো ছাড়া কোনো রাস্তা নেই। বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি লোন নেওয়া খুব ডিফিকাল্ট। এটা পুঁজিবাজারে নেই। আপনি বন্ড ইস্যু করে ৫ বছর ১০ বছরের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। আপনি যখন খুশি তা বিক্রি করে দিতে পারেন। পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করাটা একটু সময়সাপেক্ষ। এটা ইমিডিয়েট কাজ করবে না। দীর্ঘমেয়াদে এটা নিয়ে কাজ করা যাবে। অডিট রিপোর্টের একটা বাধ্যবাধকতা আছে।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের বাইরে অর্থপাচার বা মানি লন্ডারিং শুধু অর্থনৈতিক কারণে হয় না। অর্থের ধর্ম হলো রিটার্ন যেখানে বেশি, সে দিকেই যাবে। দেশের বাইরে বিনিয়োগ করলে যে রিটার্ন বেশি পাওয়া যায়, এমন নয়। বরং দেশে বিনিয়োগ করলেই তার চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। সুতরাং মানি লন্ডারিং অর্থনৈতিক কারণে হয় না। অন্য কারণও থাকতে পারে। আশরাফ আহমেদ বলেন, মানি লন্ডারিং বা অন্য কোনো অনিয়মে যেসব ব্যবসায়ী জড়িত দায় শুধু তারই। তাই কোনো একজন ব্যবসায়ীর দায় সব ব্যবসায়ীর ওপর বর্তায় না। তিনি বলেন, এর বাইরে (যানজট) আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন ট্রেডলাইসেন্স, বিভিন্ন ধরনের গভর্মেন্ট লাইসেন্স অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো সহজ করার সুযোগ আছে। এ সুযোগকে বাস্তবায়ন করতে গেলে আইনের পরিবর্তন করতে হবে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সিরিজ নিশ্চিতের অভিযানে শান্ত-হৃদয়রা

সিরিজ নিশ্চিতের অভিযানে শান্ত-হৃদয়রা

গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দেশে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার

দেশে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার

১ আগস্ট থেকে সরাসরি জেদ্দায় ফ্লাইট শুরু ইউএস-বাংলা’র

১ আগস্ট থেকে সরাসরি জেদ্দায় ফ্লাইট শুরু ইউএস-বাংলা’র

বিজয়ের সেঞ্চুরিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

বিজয়ের সেঞ্চুরিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

পিকে হালদারসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

পিকে হালদারসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বড় জয়ে ডিপিএল অভিযান শেষ মোহামেডানের

বড় জয়ে ডিপিএল অভিযান শেষ মোহামেডানের

গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ

গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ

ঝড়ে ১০ তলা থেকে দেয়াল ভেঙে পড়লো টিনশেড ঘরে, নারীর মৃত্যু আহত ৮

ঝড়ে ১০ তলা থেকে দেয়াল ভেঙে পড়লো টিনশেড ঘরে, নারীর মৃত্যু আহত ৮

টাঙ্গাইলে ধানক্ষেত থেকে মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার

টাঙ্গাইলে ধানক্ষেত থেকে মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার

গণতন্ত্রকে ম্যাচুরিটি দেওয়ার জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে: ওবায়দুল কাদের

গণতন্ত্রকে ম্যাচুরিটি দেওয়ার জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে: ওবায়দুল কাদের

মির্জাপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আ.লীগ নেতাসহ আহত ৩

মির্জাপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আ.লীগ নেতাসহ আহত ৩

সাকিবের মাইলফলকের দিনে রাজার রেকর্ড বোলিং

সাকিবের মাইলফলকের দিনে রাজার রেকর্ড বোলিং

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে: ফায়ার সার্ভিস

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে: ফায়ার সার্ভিস

মির্জাগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মনিরুল, সম্পাদক প্রিন্স

মির্জাগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মনিরুল, সম্পাদক প্রিন্স

খুলনায় ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ছাত্রলীগের মিছিল

খুলনায় ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ছাত্রলীগের মিছিল

কুয়াকাটায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে সংঘর্ষ আহত- ১১,আটক ২

কুয়াকাটায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে সংঘর্ষ আহত- ১১,আটক ২

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির সাক্ষাৎ

সিটি ব্যাংক ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর

সিটি ব্যাংক ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর