বরিশালে বিদ্যুৎ নিয়ে চরম দুর্ভোগে সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

গত পনের বছরে দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও কর্তৃপক্ষের বিবেকহীন উদাসীনতা ও ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থায় বরিশাল অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের দুর্ভোগের শেষ নেই। এমনকি প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই দশক পরেও ‘আকাশে মেঘ জমলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়’ এ প্রবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করতে সচেষ্ট হতে পারেনি ‘ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু গ্রাহক সেবা (?) ক্রমাগত তলানীতে ঠেকলেও বিতরণ কোম্পানীটির তরফ থেকে বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য আরো বৃদ্ধির ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের ওপর। পরিস্থিতি এমনই যে, সাধারণ গ্রাহকগণ নিজেদের জিম্মি মনে করছেন বিতরণ কোম্পানীটির কতিপয় দায়িত্বশীল মহলের কাছে। এমনকি বরিশাল অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও এক হাজার মেগাওয়াটের বিতরণ ব্যবস্থা টেকসই করতে না পারায় উদ্যোক্তাগণ এ অঞ্চলে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার ঝুঁকি নিতেও উৎসাহ বোধ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
পিডিবি’র কাছ থেকে পাইকারী মূল্যে কিনে বরিশাল মহানগরীসহ সন্নিহিত এলাকার ৭টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে ওজোপাডিকো। দুজন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ৭ জন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ প্রতিটি বিতরণ বিভাগে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী ছাড়াও প্রতিটি ফিডারের জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ মর্যাদার ফিডার ইনচার্জগণ বিতরণ ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছেন। পিডিবি’র তত্বাবধানে থাকাকালীন বরিশালে একজন প্রধান প্রকৌশলীও ছিলেন।
কিন্তু ২০০৫ সালে পিডিবি থেকে বিক্রয় ও বিতরণ ব্যবস্থা কোম্পানীর হাতে ন্যস্ত হবার পরে এ অঞ্চলে গ্রাহক সেবার তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। এ অভিযোগ বরিশাল অঞ্চলে ওজোপাডিকো’র প্রায় সব গ্রাহকের। লো-টেনশন ও ১১ কেভি হাই টেনশন লাইন এবং সবগুলো ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনসহ ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনগুলোতে গোলযোগ দুর্ঘটনায় বারবারই এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এর সাথে রয়েছে ১১ কেভি ও .০৪ বিতরণ লাইনগুলোর লাগাতর ত্রুটি। এমন কোনো ফিডার নেই যেখানে প্রতিদিন ২-১০ বার পর্যন্ত লাইন বন্ধ হচ্ছে না।
ফলে ঘাটতি না থাকলেও বরিশাল অঞ্চলে ওজোপাডিকো’র গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া এখনো সৌভাগ্যের ব্যপার। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে পুরো বরিশাল অঞ্চল জুড়ে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। কিন্তু কোনো ঝড়ো হাওয়া বা বজ্রপাত না থাকলেও পুরো মহানগরীসহ বরিশাল অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ল-ভ- হয়ে গেছে। ১৩ সেপ্টেম্বর রাতভর এ অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক গ্রহণ অন্ধকারে কাটাবার পরে রোববার দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক এলাকাই ছিল অন্ধকারে। গত শুক্রবার রাত ১০টার পরে বরিশাল মহানগরীর ওপর দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো অস্থায়ী দমকা হাওয়াতেও নগরীর হাতেম আলী কলেজ ফিডারে এলটি লাইন ছিড়ে পরায় দীর্ঘক্ষণ অন্ধকারে ছিল নগরীর একটি বড় এলাকা।
এমনকি খোদ বরিশাল মহানগরীতে দুটি বিতরণ ও বিক্রয় বিভাগের দেড়লাখ গ্রাহকের জন্য রাত ১০টার পরে মাত্র দুটি কথিত ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’এ লাইনম্যান ও হেলপারদের একটি করে ব্যাচ কাজ করে। গত ২০ বছরেও বরিশাল অঞ্চলে গ্রাহক সেবার জন্য ওজোপাডিকো’র কথিত গ্রাহক সেবা কেন্দ্রগুলোতে কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারেনি। খোদ বরিশাল মহানগরীর এলটি ও এইচটি বিতরণ ও সরবরাহ লাইনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা বলতে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই বলে অভিযোগ ওয়াকিবহাল মহল সহ গ্রাহকদের। এ অঞ্চলের কয়েক হাজার ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মারগুলোতে আজ পর্যন্ত কোনো টেকসই ও নির্ভরযোগ্য ড্রপ আউট নেই। ফলে যেকোনো ট্রান্সফর্মারের ১টি ফিউজ পুড়ে গেলে পুরো ফিডার বন্ধ করে তা সংযোগ দিতে হয়। খোদ বরিশাল মহানগরীতে ৪০-৫০টি ট্রান্সফর্মার নিয়েও একটি ফিডার রয়েছে। এসব ফিডারের ট্রান্সফর্মারগুলোতে সপ্তাহে ১টি ফিউজ পুড়লেও প্রতিদিন গড়ে ৭ বার লাইন বন্ধ করতে হচ্ছে। ট্রান্সফর্মারগুলো রক্ষায় কোনো এমসিপি পর্যন্ত নেই।
উপরন্তু দীর্ঘ দিনের পুরনো এইচটি ও এলটি লাইনগুলো এবং তার ইনসুলেটরসহ প্রতিটি যন্ত্রাংশ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং তার রক্ষণাবেক্ষণে কোনো রুটিন ব্যবস্থাও গত দুই দশকে গড়ে তুলতে পারেনি ওজোপাডিকো। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পনীটির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগগুলোর নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীগণ মাঠ পর্যায়ে বিতরণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে দফতরে বসে ‘ডেস্ক ওয়ার্ক’ করতেই সাচ্ছন্দ বোধ করেন বেশি।
দীর্ঘদিন ধরে ওজোপাডিকো’র বিভিন্ন প্রকল্পে সংগৃহীত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ ১১ কেভি ট্রান্সফর্মারের ড্রপ আউটগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। বরিশাল মহানগরীর ‘হাতেম আলী কলেজ ফিডার’এ যেসব আইসোলেটর লাগান হয়েছে, তা বন্ধ ও চালু করতে পুরো ফিডারটিই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।
মহানগরীর ৩৩/১১ কেভি কন্টোল রুমে যেসব স্পর্ষকাতর বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে তাও অত্যন্ত নিম্নমানের বলে অভিযোগ এখন সুস্পষ্ট। গত ১ এপ্রিল রূপাতলী সাব-স্টেশনের ‘কারেন্ট ট্রান্সর্মরের বি¯েফারণ থেকে অগ্নিকা-ে এ নগরীসহ ঝালকাঠী জেলায় তিন থেকে ৭ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। গত ১৭ আগস্ট গভীর রাতে সাব- স্টেশনটির একটি ৩৩/১১ কেভি ট্রান্সফর্মারের ‘ট্রিপিং কয়েল’ পুড়ে গিয়ে বরিশাল মহানগরীর বিশাল এলাকাসহ ঝালকাঠীর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মাত্র ১৭ দিনের মাথাই একই দুর্ঘটনায় নগরবাসীকে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ দুটি দুর্ঘটনার পরেই পুড়ে যাওয়া ট্রিপিং কয়েল খুলনা থেকে সংগ্রহসহ তা সংযোজন করতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে। এসময়ে বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে একটি ট্রান্সফর্মারে সব লোড চাপাতে গিয়ে লোডসেড করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কেন বিকল্প ছিল না। অথচ প্রথম দুর্ঘটনার পরে তার কারণ উদ্ঘাটন করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিলে পরের দুর্ঘটনাটি নাও ঘটতে পারত বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন।
এভাবে জোড়াতালী দিয়েই চলছে বরিশাল অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা। অথচ সদ্যবিদায়ী সরকার সারা দেশের মতো বরিশালেও শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে বাহবা নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে এখনো বরিশাল বিভাগীয় সদরসহ সন্নিহিত এলাকায় সাধারণ গ্রাহকের ঘরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছছে না। দুর্ভাগের কোনো সীমা নেই বলেও অভিযোগ সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের।
এ ব্যাপরে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বরিশাল মহানগরীসহ পুরো অঞ্চলেই গাছের কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটার অন্যতম কারণ বলে দাবি করেন। পাশাপাশি পুরনো লাইনসহ অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি বলেও মন্তব্য করেন। কোম্পানীটির প্রধান নির্বাহী বিদ্যুতের টেরিফ মূল্যের কারণে তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতায় বিতরণ লাইনসহ অনেক জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজে অন্তরায় সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়ে তার পরেও প্রয়োজনে সম্ভব সবকিছু করা হচ্ছে বলেও জানান। পাশাপাশি গ্রাহক সেবায় যেকোনো অবহেলা ও উদাসীনতায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান তিনি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

স্ত্রী-ছেলেসহ রনজিত ৭৯ বিঘা জমি জব্দ, ১৩৭ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মার্কিন বিচারকরা

মাদক মামলায় নারীসহ একই পরিবারের ৩ পলাতক আসামি গ্রেফতার

এবার মার্কিন শিক্ষা বিভাগই তুলে দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নতুন নির্দেশনা জার্মানির

ঈদযাত্রায় রেলে বাড়বে কোচ

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের শাস্তি সাত বছর কারাদণ্ড

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় জামায়াতের বিক্ষোভ

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে : আমীর খসরু

শাহতলী পীর সাহেব মাওলানা আবুল বাশারের দাফন সম্পন্ন

ঐকমত্য কমিশনের ৪২ প্রস্তাবে একমত নয় এলডিপি

৯৬টি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিলে চূড়ান্ত অনুমোদন

পরিবেশগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করবে বাংলাদেশ-নেপাল

সাবেক সেনা কর্মকর্তা-আমলাদের নিয়ে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে জামায়াতের মত

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ

জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

শেখ হাসিনা-জয়-পুতুল-রেহানাসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন

ধর্ষণের শিকার অভিযোগে শিশু-কিশোরীসহ ৫ জন ঢামেকে ভর্তি