পাকিস্তান থেকে বেড়েছে কমেছে ভারত থেকে
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পলায়নের পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমে থেকে শুরু করে সরকার নানা ষড়যন্ত্র করে চলছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে এখন সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের। কিছুদিন আগে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আক্রমণের ঘটনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উত্তেজনাও তৈরি হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়নি। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাতায়াতকারী পর্যটকের সংখ্যাও কমেছে ব্যাপক হারে। যার প্রভাব পড়েছে দেশটির আমদানি-রফতানিতেও। ভারত আমদানি-রফতানি নিয়ে নানা তালবাহানা করায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। এই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পাকিস্তান থেকে দেশে পণ্য আমদানি বেড়েছে ২৭ শতাংশের বেশি। একই সময়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পাকিস্তান থেকে দেশে পণ্য আমদানি বেড়েছে ২৭ শতাংশের বেশি। একই সময়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে বাংলাদেশের। একই সঙ্গে সম্পর্কে কিছুটা শীতল ভাব দেখা যাচ্ছে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে। এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দুই দেশ থেকে পণ্য আমদানির পরিসংখ্যানে।
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় মূলত পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও রাসায়নিক, কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ, প্লাস্টিক ও রাবার শিল্পের কাঁচামাল, খনিজ পদার্থ ও পেঁয়াজ-আলুসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পাকিস্তান থেকে দেশে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৭৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন (১৭ কোটি ৯৪ লাখ) ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে দেশটি থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪১ মিলিয়ন (১৪ কোটি ১০ লাখ) ডলারের। এ হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে এক প্রান্তিকে পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। একই সময় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে ভারত থেকে পণ্য আমদানি। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫২ দশমিক ১ মিলিয়ন (২০৫ কোটি ২১ লাখ) ডলারের। যদিও আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৬৭ দশমিক ২ মিলিয়ন (২২৬ কোটি ৭২ লাখ) ডলারের। সে অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তুলনায় আমদানি কমেছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
তবে এখনো দেশে পণ্য আমদানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস ভারত। চীনের পরই দেশটি থেকে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পরিমাণে পণ্য আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও দেশের শীর্ষ ২০ আমদানির উৎস দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। তখন ভারত থেকে ৯ বিলিয়ন (৯০০ কোটি) ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছিল, যা মোট আমদানির ১৪ শতাংশের বেশি। আর সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি হয়েছিল চীন থেকে, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি ছিল মোট আমদানির ২৬ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরে আমদানি পণ্যের উৎস হিসেবে পাকিস্তানের অবস্থান ছিল তালিকার ২০তম। দেশটি থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৬২৭ মিলিয়ন (৬২ কোটি ৭০ লাখ) ডলার। মোট আমদানিতে দেশটির অবদান ছিল মাত্র ১ শতাংশ। তবে সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু করায় দেশটি থেকে আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। গতকাল শনিবারও একটি জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
পাকিস্তান থেকে বাণিজ্য আগেও বাড়তে পারত বলে মনে করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, পাকিস্তানের অনেক রফতানি করার মতো সুবিধাজনক পণ্য রয়েছে। তবে এতদিন তা আসতে পারেনি, এখন আসছে। দুই দেশের মধ্যে ভিসা বন্ধ থাকায় হয়তো ভারত থেকে আমদানি কমেছে। আর এখন পাকিস্তান থেকে বাড়লেও পরিমাণের দিক থেকে ভারত থেকেই আমদানি বেশি থাকবে। আর ভবিষ্যতেও বাণিজ্যিক সম্পর্কগুলোর মূল নিয়ামক থাকবে চাহিদা ও সরবরাহ। ব্যবসায়ী নেতারা অবশ্য বলছেন, ভারত থেকে আমদানি কমাটা রাজনৈতিক কারণের চেয়ে বিনিয়োগ পরিবেশের সঙ্গে বেশি সম্পর্কযুক্ত। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) বর্তমান সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ব্যাপকভাবে জোরদার হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য অনেকাংশে হ্রাস পাওয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে জাহাজ ও সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে সাধারণত টেক্সটাইল ও খাদ্যসামগ্রী আমদানি করে। এছাড়া পাকিস্তান থেকে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। তাছাড়া দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা হলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রমও বড় হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি