রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না :সিজিএস সংলাপে বক্তারা
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ত্রুটি সুশানের অভাব মন্তব্য করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা বলেছেন, পুলিশকে আমরা হেনস্তাকারী সংস্থা হিসেবে তৈরি করেছি। পুলিশের পদন্নতি উপর দিকে দেওয়া হয়েছে। বিচার সব জায়গায় থাকতে হবে কেবল পুলিশের ক্ষেত্রেই নয়। পুলিশ ও জনগণের মাঝে একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে জুলাই-আগস্ট গনঅভ্যুত্থানে। পুলিশ তার ভুল স্বীকার করেছে। কিন্তু দোষীদের বিচারেরে আওতায় আনতে হবে। ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ হয়েছে। এটার বিকেন্দ্রিকরণ করতে হবে কমিউনিটি পর্যায় থেকে। চেক এন্ড ব্যালেন্স কমিউনিটি পর্যায় থেকে শুরু করলে অন্য কেউ জুলাই-আগস্টের মত কিছু করতে চাইলেও পারবে না। তবে সবকিছুই নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর। এটি ছাড়া পুলিশের সংস্কার সম্ভব নয়। গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ : আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপের শুরুতে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার শব্দটি অনেক ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এটি ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। আমরা সাধারণ মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না। সাধারণ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারছে না, পুলিশ মনোবল হারিয়ে ফেলেছে এবং প্রতিনিয়ত মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, সার্বিকভাবে কিভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ঠিক করা যায় তার উপর নজর দিতে হবে। কেবল পুলিশের উপর নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলে কমিশনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যা করা হচ্ছে না। পুলিশকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যে ঘাটতি আছে। বর্তমান প্রযুক্তিগুলো পুলিশকে শিখাতে হবে। জনগণেরও পুলিশকে সাহায্য করতে হবে। পুলিশের কাজের তদারকি করার ব্যবস্থা করতে হবে। পার্লামেন্টে পুলিশের কোড অফ কন্ডাক্ট তৈরি করতে হবে। অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোকে সাহায্য করতে হবে যেন ওয়াচ ডগ হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বিগত সরকার এমন আভাষ দিয়েছে যে তারা ক্ষমতায় না থাকলে অনেক মানুষ মারা যাবে। পুলিশের সেবা নাকি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ দরকার? এখানে কাজ করতে হবে। পুলিশের উপর নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কার করতে হবে যেন ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ না হয়। পুলিশের কাজ সেবা করা, এটি সব রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে।
সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, বিচার সব জায়গায় থাকতে হবে কেবল পুলিশের ক্ষেত্রেই নয়। ক্ষমা সবার চাইতে হবে। যারা নির্দেশ দিয়েছে ও অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তাদেরকেও ক্ষমা চাইতে হবে ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। অতিরিক্ত জোর প্রয়োগ যেন কেউ আর না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
কাজী রাকিব হোসেন বলেন, জুলাইয়ে পুলিশ জনগণের বন্ধু ছিল না। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। স্বাধীন কমিশন তৈরি করা যেতে পারে। কমিশনের ভিতর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। আস্থা পুলিশের অপর থাকবে কিনা তা জনগণ নির্ধারণ করবে। পুলিশের অনেক দায়িত্ব নিতে হয়। একজন একটি কাজ সামাল দিবে। বর্তমানে যেসব পুলিশের আইন আছে তার প্রতি অনুগত থাকতে হবে। র্যাবের দরকার নেই বাংলাদেশে। র্যাবকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সাইমি ওয়াদুদ বলেন, স্বাধীন কমিশন করলেই সমাধান হবে এমন না। এর সাথে আন্তঃদলীয় সংস্কার করতে হবে। আমাদের নিরাপত্তার জন্য কিছু ভাল নিতিমালা আছে তা মেনে চলতে হবে।
অধিকারের পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলান বলেন, পুলিশ গত ১৫ বছর অনেক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। তারা দায়মুক্ত ছিল যা বিগত সরকার দিয়েছে। জুলাই-আগস্টের পর পুলিশের মনোবল কমে গেছে। আমরা যেই সংস্কারের দিকে যেতে চাচ্ছি সেদিকে যেতে পারছি না। এরপর যেই সরকার আসবে তারা যদি সংস্কার না করতে পারে তবে আমরা আবার ফ্যাসিজম দেখতে পাব।
গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, পুলিশকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য মানবাধিকার সনদ মানতে হবে এবং আমাদের যা নিয়ম আছে তা অনুসরণ করতে হবে। পুলিশের কাঠামো ঠিক করতে হবে। রাজনীতির সংস্কার করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলো এখানে কাজ করতে পারে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার যে পচন ধরেছে তার সংস্কার করতে হবে। রাজনীতি দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা ও বিকাশের মনোভাব আনতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) গবেষণা ফেলো সাফকাত মুনির বলেন, গত ১৬ বছর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে একটি রাজনৈতিক দল ব্যবহার করেছে। এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। সেনাবাহিনী থাকবে সেনাবাহিনীর জায়গায় এবং পুলিশ থাকবে পুলিশের জায়গায়। এখানে তুলনা হবে না। পুলিশের যেই অস্ত্র লাগবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এত স্পেশালাইজড ইউনিট লাগবে না। এতে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। পুলিশের কাঠামোর দিকে নজর দিতে হবে। পুলিশেরও ন্যায্য দাবি দেখতে হবে।
ব্যবসায়ী নেতা একে আজাদ বলেন, ৫২ থেকে এই পর্যন্ত পুলিশের তুলনা করে দেখেন তার উন্নতি হয়েছে নাকি অবনতি? পুলিশকে এই পর্যায়ে কে নিয়ে গেল? এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো করে থাকে। পুলিশকে অমানবিক কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। র্যাবকে বিলুপ্ত করতে হবে। এগুলো না করলে এটি চলতেই থাকবে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কোটি কোটি বাহিনী আছে। স্বৈরাচারীরা এদের উপরেই টিকে থাকে। গোয়েন্দা সংস্থাতে কাকে কে উঠিয়ে নিল, গুম করল বা মেরে ফেলল সেখানে কো-অরডিনেশন থাকে। বাইরের দেশের গোয়েন্দা কি করে আমাদের দেশে অপরাধ করতে পারে? তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যরিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠাতারা রাষ্ট্র কি তা তারা বুঝতে পারে নি। রাজনৈতিক দলগুলো আর্টিকেল ৭ এর মধ্যে আটকিয়ে আছে। এই রাষ্ট্রতে জমিদারি অবস্থা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এখনও চলছে। এখান থেকে বের হতে হবে। আমাদেরকে এদেশের নাগরিক হতে হবে, বাসিন্দা নয়।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আমাদের দেশে একজন ভাল রাজনীতিবিদ দরকার। ভাল মানুষদেরকে সংসদে আসতে হবে, দেশ শাসনে আসতে হবে। খারাপ ভোটার খারাপ মানুষদেরকে ক্ষমতায় আনবে।
এতে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন- সাবেক আইজিপি এম এনামুল হক, সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান, সাবেক জজ ইকতেদার আহমেদ, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, সাবেক এমপি উষাতন তালুকদার, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে