জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার কাঠামোর বাইরে রাখার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সব পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী পদে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন ও উপসচিব পুলে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর ড. রুহুল কাদির, প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল, প্রফেসর সৈয়দ মইনুল হাসান এবং প্রফেসর মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদির প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে সূচিত গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে সূচিত রাষ্ট্র-পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের যে অভূতপূর্ব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তার পক্ষে আমরা তাকে স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬ ক্যাডারের মধ্যে বিরাজিত আন্তঃ ও অন্তঃক্যাডার বৈষম্যসমূহ চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের সিভিল প্রশাসনকে অধিকতর কার্যকর, গতিশীল ও যুগোপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। প্রশাসন, পররাষ্ট্র, কৃষি, স্বাস্থ্য কিংবা পুলিশ ক্যাডারের সাথে একই সময়ে একই সাথে গঠিত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার এবার হয়তো গত ৪০ বছর ধরে জমে থাকা সংকটসমূহ থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে ক্যাডার বহির্ভূত রাখার যে পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে, তা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তাকে তীব্রভাবে আহত করেছে। এ আঘাত এতোটাই প্রকট যে, এটা শিক্ষা ক্যাডারের সকল সদস্যকে অন্তহীন উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা রাষ্ট্রকে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিতিশীল করার মত একটি পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি। তাই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা এ সুপারিশকে প্রত্যাখ্যান করছি। সংস্কারের নামে এ ধরনের আত্মঘাতী পরিকল্পনা থেকে দ্রুত সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনকে অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকে সরে আসা, সকল প্রকার কোটা-বৈষম্য তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে সরকারের উপসচিব পদে যোগদান নিশ্চিত করার জন্য তা শতভাগ উন্মুক্ত করে দেয়া, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সমান সুযোগ দেয়া, মন্ত্রণালয়সহ ক্যডার সংশ্লিষ্ট সকল পদে স্ব স্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা, সাধারণ ও মাদরাসা শিক্ষা ধারার সকল শিক্ষা স্তরে প্রশাসন ক্যাডারের অপেশাদার ও অশিক্ষক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যে সব দপ্তরের নিয়োগ বিধিমালায় অন্যায্যভাবে প্রশাসন ক্যাডারের পদস্তর উল্লেখ করে একতরফা গেজেট করা হয়েছে, তা সংশোধন করে তাতে শিক্ষা ক্যাডারের পদস্তর সংযোজন করতে হবে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদকে ৩য় গ্রেডে উন্নীত করা এবং আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১ম, ২য় ও ৩য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করতে হবে, তদারকির জন্য অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টি ও দপ্তর স্থাপন করা, কলেজ ও দপ্তর-অধিদপ্তরসমূহে বিদ্যমান প্যাটার্ন অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীদের প্রাপ্য পদ সৃজন করা, নিয়মিত রুটিনে পদোন্নতি, শিক্ষাকে নন-ভেকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করা, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের প্রাধিকারের ভিত্তিতে গাড়ি প্রদান নিশ্চিত করা, বদলি নীতিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা, ক্যাডারে পার্শ্ব প্রবেশ বন্ধ করা এবং ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এ শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দাবি মেনে না নেওয়া হলে আগামী ৩১ ডিসেম্বর তারিখে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।