বিদেশিদের বদলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার দাবি জামায়াতের
২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ এএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ এএম

পতিত শেখ হাসিনার এজেন্ডা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির নিকট ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে টার্মিনালটি বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার দাবি জানিয়েছে জামায়াত। সেই সাথে বন্দরের টাকায় নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে তুলে না দেওয়ার দাবি জানানো হয়। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী এই দাবি জানান। এ সময় মহানগরী নায়েবে আমির পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ নুরুল আমিন, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল মাওলানা খাইরুল বাশার, মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি ও রফতানির ৯২% কাজ হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর শুধুমাত্র অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র নয়, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সাথেও চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট। তাছাড়া, বাংলাদেশের একমাত্র সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) একটি আধুনিক টার্মিনাল হিসাবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০১ সালে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণ কাজ শুরু করে। এতে ১ হাজার মিটার দীর্ঘ বার্থ রয়েছে যেখানে একই সাথে পাঁচটি জাহাজের মালামাল উঠানামার কাজ করতে পারে এবং ব্যাকআপ ফ্যাসিলিটিজ হিসাবে রয়েছে ২৬ হেক্টর জায়গার উপর উন্নত প্রযুক্তি সম্বলিত ইয়ার্ড। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কন্টেইনার টার্মিনাল হিসেবে এনসিটি টার্মিনাল বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়া, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল আয় আসে এই এনসিটি টার্মিনাল হতে। গত অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) এনসিটি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ আয়ের পাশাপাশি রেকর্ড সংখ্যক কন্টেইনার হ্যাল্ডলিং হয়েছে যা পূর্বের বছরের তুলনায় ৭.৩৭% বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরের মোট হ্যাল্ডলিংয়ের ৫৫% এনসিটি টার্মিনালে হয়। যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসাবে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি চালু হওয়ার পর এই টার্মিনালকে আধুনিক টার্মিনালে রূপান্তরিত করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এই টার্মিনালে কোনো প্রকার বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই এবং টার্মিনালটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই টার্মিনালের মাধ্যেমে চট্টগ্রাম বন্দর বিশাল রাজস্ব আয় করছে।
আমরা জেনেছি, এনসিটি টার্মিনালের ধারণ ক্ষমতা ১.১ মিলিয়ন টিইইউএস। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দক্ষতার ফলে এই টার্মিনালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। বর্তমানে বন্দরের এই টার্মিনালে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ৪০০০-৫০০০ দক্ষ কর্মকর্তা ও দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী (২৪ ঘণ্টা ৭ দিন) কাজ করে এবং তার সাথে রয়েছে শত শত স্টেকহোল্ডার ও তাদের কর্মচারীবৃন্দ। এদের প্রত্যেকের সাথে এক একটি পরিবার জড়িত।
বর্তমানে এই চালু টার্মিনাল নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কু-নজর পড়ে এই চালুকৃত ও রাজস্ব খাতের মূল চালিকাশক্তি এনসিটি টার্মিনালের উপর। দেশের অন্যতম অর্থ পাচারকারী ও শেখ পরিবারের প্রধান অর্থ যোগানদাতা সালমান এফ রহমান ব্যাংকসহ দেশের লাভজনক সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে সর্বশেষ এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যে পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল দিয়ে দেয়া হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে এনসিটিও বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার গভীর চক্রান্ত চলছে। যদি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থান না হতো, তাহলে এতদিনে এই এনসিটি টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে চলে যেত। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও সরকারের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন, বর্তমান সরকারকে বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দেশের রাজস্ব খাত শেষ করার জন্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানার জন্য এনসিটি টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ট কিছু লোকজন সরকারের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা শেখ পরিবারের অর্থ যোগান দেয়া অব্যাহত রাখার এবং বর্তমান সরকার ও ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ধুলিসাৎ করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে যড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে কি কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম ট্যারিফ নির্ধারিত থাকায় সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা হতে বঞ্চিত হবে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে আঘাত হানবে। এছাড়া, দেশের অর্থনীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। এনসিটিতে নিযুক্ত চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং উক্ত টার্মিনালে কর্মরত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ চাকুরিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা বৈধভাবে বিদেশে চলে যাবে (বর্তমান আয়ের ৫০%)
৫০০০ কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমূহ হস্থান্তরে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষতি হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিবে। বৈদেশিক বাজারে দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হবে। বর্তমান কর্মরত দক্ষ শ্রমিকদের মাঝে হতাশা বাড়বে তাদের জীবনমান নিম্নমূখী হবে। অবসর জীবনের অনিশ্চয়তা ও দারিদ্রতা বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু ৫৫% আমদানি রফতানি এনসিটি টার্মিনাল দিয়ে হয়ে থাকে সেহেতু চট্টগ্রাম বন্দর তথা বাংলাদেশের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যে কোন সময় চ্যালেঞ্জ তৈরি হলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। সর্বোপরি এই টার্মিনালের পাশে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সামরিক ঘাঁটি অবস্থিত। যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। কিন্তু সেই বিনিয়োগ হোক গ্রিন ফিল্ডে। যেমন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনোমিক জোনগুলোতে বিদেশিরা এসে বিনিয়োগ করছে। ঠিক তেমনি আমাদের বে-টার্মিনাল হতে শুরু করে সীতাকুন্ড-মিরসরাই ও মাতারবাড়িতে প্রচুর বিনিয়োগের সুবিধা রয়েছে। সেখানেই বিনিয়োগ আসুক। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত টার্মিনাল ( যেখানে কোনো বিনিয়োগের দরকার নেই) কেন বিদেশিদের দেয়া হবে তা বোধগম্য নয়। দেশের সকল আপামর জনসাধারণের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে, চট্টগ্রাম বন্দরের চালুকৃত টার্মিনাল এনসিটি টার্মিনাল (যেটি পূর্বের ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা) বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। পাশাপাশি এই ষড়যন্ত্রের সাথে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য অনুরোধ করছি। অন্যথায়, ছাত্র-জনতা আবারও দেশ ও বন্দর রক্ষার জন্য যেকোনো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দরের ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের অলাভজনক দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করে জি টু জি এর পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্র আহবানের মাধ্যমে বন্দরের দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান অক্ষুন্ন রেখে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালনা করতে হবে। এতে করে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরি হবে এবং বন্দর প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করতে পারবে। দেশের টাকা বিদেশে যাওয়া হতে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি পতেঙ্গা টার্মিনালের দেশ বিরোধী চুক্তি দেশের জনগণের কাছে উন্মোচন করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দ্বারা চুক্তিটি পর্যালোচনা করতে হবে। অন্যথায়, শ্রমিক-ছাত্র-জনতা আবারও দেশ ও দেশের মানুষের ভবিষ্যতের জন্য যে কোনো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ব্র্যাক ব্যাংক ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ৫,০০০ কোটি টাকার নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি

সবুজ আবাসনের উন্নয়নে আইএফসির সাথে ডিবিএইচের চুক্তি

অপরাধী ও অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না - সচিব কামরুজ্জামান চৌধুরী

কর্মযজ্ঞে নারীর সমতায়ন নিশ্চিতে কাজ করতে হবে আমাদের : খন্দকার মুক্তাদির

ছুটিতে আনন্দ ভ্রমণে সিলেটে পর্যটকদের ভীড়

কিশোরগঞ্জে আল্লাহ ও নবী (সা:) নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি, গ্রেফতার যুবক কারাগারে

বিডিআর কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমানের মন্তব্য একান্ত ব্যক্তিগত : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

কর্ণফুলীতে জুলধা বদুপন্ডিতের বাড়ির সড়ক পরিদর্শনে জামায়াত নেতৃবৃন্দ

সীতাকুণ্ডের শিল্প-কারখানায় স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে : আলাউদ্দিন সিকদার

বায়ার্ন ছাড়ছেন ডায়ার

সড়কে ধান মাড়াই ও খড়ের স্তুপে বাড়ছে দুর্ঘটনা

সিলেটে থেকে মদিনার পথে সরাসরি হজ ফ্লাইট শুরু ১৪ মে

বিশ্ববাজারে দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন সোনার দাম

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না : আখতার

দৌলতপুরে পৃথক অভিযানে ইউপি সদস্য সহ গ্রেপ্তার-৭

গাজীপুরে বিএনপি নেতার চাঁদাবাজির প্রতিবাদে গ্রামবাসীর মানববন্ধন

আ. লীগ নিষিদ্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শহীদ পরিবার : হান্নান মাসউদ

মানবিক করিডোরের নামে সেনাবাহিনীকে প্রক্সি ওয়ারে জড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: ফরহাদ মজহার

বাস থামিয়ে নামাজ আদায়, সাসপেন্ড করা হল সেই চালককে!
দলে ফিরলেন স্টোকস