ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩ পৌষ ১৪৩১

সিদ্দিকবাজার : জমে ছিল গ্যাস, সিগারেটের আগুন থেকে বিস্ফোরণ

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ মার্চ ২০২৩, ১১:৫৯ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম

গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার আগে সেখানে গ্যাস জমে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল। আলো-বাতাস না ঢুকতে পারা সেই বেজমেন্টে সিগারেট জ্বালিয়েছিল কেউ। সেই আগুন থেকে প্রথমে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়, পরক্ষণেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। যার বেগ এতই বেশি ছিল যে, ভবনের ইট-কাঠ ফেটে গম্বুজের মতো ওপরের দিকে তিনতলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ, গ্রেপ্তার তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদে এবং দুই সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে এমনটা ধারণা করছেন। তবে গ্যাস তিতাসের পরিত্যক্ত লাইন থেকে বের হয়ে আসে, নাকি দীর্ঘদিন ধরে সেপটিক ট্যাঙ্কে জমা বায়ো গ্যাস ছিল, সেটা নিশ্চিত হতে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিয়ে বলছেন, বিস্ফোরণে বাংলাদেশ স্যানিটারি ও অনিকা এজেন্সি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুটি দোকানই উড়ে যায়। বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে দুদিন পর উদ্ধার করা হয় অনিকার এজেন্সির মালিক মমিন উদ্দিন সুমন ও তার কর্মচারীদের। গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, বিস্ফোরণের আগে সেদিন সুমনই সিগারেট ধরিয়েছিলেন। এসব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, এখনো বিষয়গুলো গুছিয়ে আনতে পারিনি। তদন্ত শেষ হলেই আসল ঘটনা জানা যাবে।
গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সিদ্দিকবাজারের ওই সাততলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেজমেন্ট, নিচতলা ও দোতলা অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দুই পাশে লাগোয়া দুটি ভবনের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনের সামনের সড়কে থাকা পথচারী বা যাত্রীরাও হতাহত হন। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আহত, ভবন ও দোকান মালিক এবং আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এখন পর্যন্ত তাদের পর্যবেক্ষণ, ভবনে আগের হোটেলের রান্নাঘরের গ্যাসের লাইনটি সারেন্ডার করলেও পুরো ভবনে ছিল আবাসিক গ্যাস লাইন। বেজমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলে সেখানে বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে একটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ স্কয়ার ফিটের এ আন্ডারগ্রাউন্ডটি পুরোটাই কাচে ঘেরা।
সেখানে ছিল না কোনো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। বড় দুটি এসির মাধ্যমে ঠান্ডা রাখা হতো দোকানটি। এসিগুলো ২০১০ সাল থেকে সার্ভিসিং করা হয়নি। সাততলা ভবনের কোথায় স্যুয়ারেজ সেপটিক ট্যাঙ্ক অবস্থিত সে বিষয়ে ভবনের মালিকরাও সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। ধারণা করা হয়, উত্তর পাশের ভবনের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের যে আড়াই থেকে তিন ফিট গলি আছে, সেখানে একই সঙ্গে দুটি ভবনের সেপটিক ট্যাঙ্ক অবস্থিত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেজমেন্টে কার পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকত। কোনো গ্যাস জমা হতো না। বিস্ফোরণের ঘটনাটিও ঘটত না।
আর বিস্ফোরণের সূত্রপাত সম্পর্কে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের তথ্য বলছে, তিতাসের পরিত্যক্ত লাইনের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে ভবনের বেজমেন্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ওই ভবনের বেজমেন্টে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের একটি পরিত্যক্ত লাইনের অস্তিত্ব পেয়েছেন তারা। বেজমেন্টে একসময় রান্নাঘর ছিল, আর নিচতলায় ছিল খাবারের হোটেল। এই রান্নাঘরে তিতাস গ্যাসের বাণিজ্যিক লাইন ছিল। ২০০১ সালে গ্যাস সংযোগের লাইনটি রাইজার (গ্যাস সরবরাহের সংযোগস্থল) থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে সংযোগ লাইন অপসারণ করা হয়নি। যে কারণে সেটিতে গ্যাসের সরবরাহ ছিল। ওই লাইনের ছিদ্র থেকে বেজমেন্টের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কোনো একটি কক্ষের বদ্ধ কুঠুরিতে গ্যাস জমে ছিল। সেখান থেকেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে সিটিটিসি মনে করছে।
সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেজমেন্ট শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এর কক্ষগুলো ছিল আবদ্ধ। বেজমেন্টে পাঁচটি দোকান ছিল। দোকানগুলো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সেখানে বাইরে থেকে বাতাস চলাচলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে সেখানে গ্যাস জমা হওয়ার পর কোনোভাবে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন
ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি
গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন
খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার
আরও

আরও পড়ুন

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া

রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন

রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন

ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি

ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি

আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান

আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান

গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন

গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন

লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব

লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব

খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার

পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার

১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান

হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান

বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে

বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে

তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল

তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের সহযোগিতা চান পরিবেশ উপদেষ্টা

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের সহযোগিতা চান পরিবেশ উপদেষ্টা

গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ

গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ

সোনারগাঁওয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ

সোনারগাঁওয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ

র‌্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি শেকৃবি ভিসির

র‌্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি শেকৃবি ভিসির

অংশীজনদের সঙ্গে আজ বসছেন অর্থ উপদেষ্টা

অংশীজনদের সঙ্গে আজ বসছেন অর্থ উপদেষ্টা

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর নাম্বার ক্লোন করে শিক্ষকের কাছে টাকা দাবি

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর নাম্বার ক্লোন করে শিক্ষকের কাছে টাকা দাবি

সমস্যাগ্রস্ত ৬ ব্যাংকের নিরীক্ষায় ২ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

সমস্যাগ্রস্ত ৬ ব্যাংকের নিরীক্ষায় ২ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত

অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত