চীনের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় মিয়ানমার -নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে নিজদেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা
১৬ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম
খুলতে যাচ্ছে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা সমস্যার জট। খুব শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে অত্যাবাসন। চীনের সহায়তায় মিয়ানমারের নমনীয়ভাব তারই আবাস দিচ্ছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারে সেনা নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে ১২ লাখের মত রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে ছিল বাংলাদেশে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে পাশাপাশি মানবিক সহযোগিতা দিয়ে আসছিল।
রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের নয়, পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের। আরাকান রাজ্যের নির্যাতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ায় এটি এখন বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করে আসলেও বাংলাদেশের পক্ষে অনির্দিষ্টকাল এই বোঝা বহন করা সম্ভব নয়।
তাই বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারের আরকানে প্রত্যাবাসনের কাজটিও করে আসছিল শুরু থেকেই। আর এজন্য মিয়ানমার-চীন সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করে আসছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু মিয়ানমারের অসহযোগিতা সহ নানা কারণে এই প্রত্যাবাসন হোঁচট খেয়েছে বারবার।
দেখা গেছে যখনই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সামনে এসেছে সুবিধাভোগী মহলের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন না কোন অঘটনের ঘঠনা ঘটানো হয়েছে। হয় গোলাগুলি নতুবা অগ্নিকাণ্ড অথবা অন্য কোন গোলযোগের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। পর্যবেক্ষদের মতে সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে হঠাৎ উদ্যোগী হয়েছে মিয়ানমার। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত আট দেশের কূটনীতিককে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের কূটনীতিকেরাও ছিলেন।
প্রত্যাবাসনের জন্য ইতোপূর্বে
বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই করতে গত বুধবার টেকনাফে এসেছে মিয়ানমারের ২২ সদস্যদের প্রতিনিধি দল। দলটির নেতৃত্বে আছেন দেশটির মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ। তালিকা ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার কথাও রয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার
দ্বিতীয় দিনের মতো রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে টেকনাফ সদরের স্থলবন্দরের রেস্টহাউজে সাক্ষাতকার শুরু হয়। বুধবার সকালে স্পিডবোটে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিমের ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল টেকনাফ মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে পৌঁছায়।বুধবার এই প্রক্রিয়ায় ২৯ পরিবারের ৯৩ জন রোহিঙ্গা সাক্ষাকার নেয়া হলেও বৃহস্পতিবার কয়জন সাক্ষাতকার দিয়েছেন তা এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) খালিদ হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো মিয়ানমার প্রতিনিধিদের কাছে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়েছে সকালে। দিন শেষে বলা যাবে কয়জন রোহিঙ্গা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এর আগের দিন ৯০ জনের বেশি রোহিঙ্গা সাক্ষাৎকার দেন। এ কার্যক্রম আরও কয়েকদিন চলবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে লেদা, মৌচনি ও জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বাসে করে ১৯ পরিবারের ৫২ জন রোহিঙ্গাকে স্থলবন্দরের ভেতরের রেস্টহাউসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল।
এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা বজলুল রহমান বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গার সাক্ষাতকার দেওয়ার কথা রয়েছে।’
বুধবার মিয়ানমার প্রতিনিধির কাছে সাক্ষাতকার দেওয়া মুচনী ক্যাম্পের মোহাম্মদ খালেদ জানান, ‘মিয়ানমারে আমরা যে গ্রামে বসবাস করেছি সেখানকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নাম জানতে চেয়েছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। আমাদের উত্তরগুলো তারা লিখে নিয়েছে। আমি ছাড়াও আমার পরিবারের সদস্যদের তথ্য যাচাই করেছে।’ তিনি আরো জানান, ‘আমাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানতে চাইনি তারা। তবে আমরা ফিরে যেতে চাই। নিরাপত্তা দিলে আমরা প্রত্যাবাসনে রাজি আছি।’
আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্যমতে, বৈঠকটি মূলত মিয়ানমারে পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই বাছাই নিয়ে। বাংলাদেশের পাঠানো তালিকা থেকে মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক হিসেবে যাচাই-বাছাই করে ফিরতি তালিকা দিয়েছিল তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা চলবে। এর আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৬২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দেওয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার। শুরুতে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের একশ জনের মতো রোহিঙ্গা রয়েছেন। তালিকার বিষয়টির বাইরেও পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটির রুট ম্যাপ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এই বৈঠক মানে প্রত্যাবাসন শুরু নয় বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, চীনের উদ্যোগে একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে প্রত্যাবাসনের জন্য যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়া এক হাজার রোহিঙ্গার সাথে আগামী ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে মাত্র এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে চীন মূলত মিয়ানমারের স্বার্থকে রক্ষা করবে এটাি মনে হচ্ছে। পর্যবেক্ষদের মতে যাই হউক প্রত্যাবাসন শুরু হওয়া দরকার।
এদিকে মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ফিরে যাওয়া ওইসব রোহিঙ্গাদের জন্য দু'টি আশ্রয় শিবির প্রস্তুত করা হয়েছে বলে রেডিও ফ্রি এশিয়াকে জানিয়েছেন (আরএফএ) রাখাইন রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ও রাজ্যের মুখপাত্র হ্লা থেইন।
এপ্রসঙ্গে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, “একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসিত করার একটি প্রস্তাবের বিষয়ে গত দুই-তিন বছর ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
এই পাইলট প্রকল্পে রয়েছে,
গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভার কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের প্রথমার্ধে চীনের সম্পৃক্ততায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ত্রি-পক্ষীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র চীনের মধ্যস্থতায় একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সীমিত সংখ্যক রোহিঙ্গার টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
২০২১ সালের অক্টোবরে এই প্রকল্পের অধীনে ৭১১ জন মুসলিম রোহিঙ্গা এবং ৩১৭ জন হিন্দু রোহিঙ্গার দুটি তালিকা পাঠানো হয়। দুই পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু করার সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া স্থবির হয়েছিল। তবে গত সপ্তাহ থেকে পাইলট প্রকল্পটির মাধ্যমে আরাকানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি সামনে আসে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
উগ্রবাদী সাদপন্থীদের বিচার নিশ্চিতকরণ এবং কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি
কালিয়াকৈর নিট এশিয়ায় টেক্সটাইলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ডাইং কারখানায় আগুন
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন
একনেকে দুই হাজার কোটি টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী হামলা হুথিদের, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি নিয়ে জাতীয় সেমিনার
লোহাগড়ায় কাঠ বোঝাই নসিমন উল্টে হেলপার নিহত
বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩
সাধারণ ক্ষমার বিনিময়ে দোষ স্বীকার করছেন আসাদের সৈন্যরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু
রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নি¤œমানের খাবার, গভীর রাতে রাস্তায় নেমে ছাত্রীদের বিক্ষোভ
কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত
টিকটক-এ ৭ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ওয়েব সিরিজ ‘প্রেমের বিকাশ’
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নগরীর যানজট নিরসন করা হবে: বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ
অস্তিত্ব সংকটে ট্রাম্প টাওয়ারসহ ৩৫ বিলাসবহুল ভবন
রাজশাহী সীমান্তে গভীর রাতে বিএসএফের দফায় দফায় গুলি বর্ষন