বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড ক্রমশ নরক কুন্ডে পরিনত হচ্ছে
১৯ মার্চ ২০২৩, ০৪:১০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫০ পিএম
নানা অব্যবস্থা আর অস্বাস্থকর পরিবেশে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীরা ক্রমাগত ভিন্ন উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালটির মূল ভবনের দক্ষিন-পূর্ব কোনে বছর তিনেক আগে নির্মিত ৫তলা ভবনটিতে ২০২০-এর মার্চে করোনা ওয়ার্ড এবং গত ডিসেম্বরের শেষভাগে মেডিসেন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট চালু করা হলেও তা কোন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের উপযোগী নয়। এ দাবী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকবৃন্দ সহ চিকিৎসা কর্মীদেরও। ফলে এ ভবনে মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিট স্থানন্তরের পরে চরম অচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে হাসপাতালের মূল ভবন থেকে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটি নব নির্মিত ভবনে স্থানন্তরের আগেই চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্রÑছাত্রী সহ হাসপাতাল কর্মীদের তরফ থেকেও ভিন্নমত প্রকাশ করা হয়েছিল।
কিন্তু ভবনটির নকশা ও নির্মান পরিকল্পনাকে আমলে না নিয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট স্থানন্তরের ফলে রোগী ও স্বজনদের চরম ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে। গনপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘নতুন এ ভবনটিকে আড়াইশ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে নির্মান করা হয়েছে। সেখানে ১ হাজার রোগী রাখলে কোন সুস্থ পরিবেশ থাকার কথা নয়’। নির্মান পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০তলা ভবনটির নিচ তলায় বহির্বিভাগ, দোতালায় প্রশাসনিক ব্লক ও ব্যাংক এবং ৩য় তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত অপারেশন থিয়েটার স্থাপনের কথা ছিল। সে নকশাতেই ভবনটি নির্মিত হয়েছে। পরবর্তিতে ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়ার্ড স্থাপনের কথা।
কিন্তু ১০ বছর পরে ৫তলা ভবন নির্মানের পরে মূল পরিকল্পনাকে এড়িয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট চালু করায় সু চিকিৎসার নামে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীর ও মনের নানামুখি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলেও অভিযোগ সাধরন রোগী এবং স্বজনদের।
তবে পুরো ভবনটির নির্মান কাজ যে মানসম্মত হয়নি, সে কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতাল কতৃপক্ষও। করোনা মহামারীর শুরুতে তড়িঘরি করে ভবনটির কাজ শেষ করে সেখানেই ‘কোভিড-১৯ওয়ার্ড’ চালু করায় নির্মান প্রতিষ্ঠানকে আর কোন জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আইনগত জটিলতায় জড়িয়ে গনপূর্ত অধিদপ্তর ১০ বছরেরও বেশী সময়ে এ ভবনটি নির্মানে সময় লেগেছে মাত্র ১০ বছর। কিন্তু সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ড স্থনন্তরের পর থেকেই চিকিৎসাধীন রোগীদের সীমাহীন দূর্ভোগ ছাড়াও চিকিৎসক ও নার্স সহ সব ধরনের চিকিৎসা কর্মীদের ভোগান্তি এখন সব বর্ণনার বাইরে। এমনকি পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সুবিধা বিহীন নতুন এ ভবনে রোগীদের সাথে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদেরও দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেকেই মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটকে ‘নরক কুন্ড’ বলেও অভিহিত করেছন।
এক হাজার শয্যার অনুমোদিত শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিনিয়ত দেড় হাজারেরও বেশী রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। এমনকি হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটে অনুমোদিত বেড সংখ্যা প্রায় ৪শ হলেও প্রতিদিন চিকিৎসাধীন থাকছে এক হাজারেরও বেশী। কিন্তু অপরিসর ও ময়লা আবর্জনা আর দূর্গন্ধযুক্ত এ নতুন ভবনটির ২য় তলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বেডের চেয়ে এখন মেঝেতেই রোগীর সংখ্যা বেশী। আলো বাতাস চলাচলের অপ্রতুল সুবিধার এ ভবনটিকে হাসপাতালের জন্য উপযুক্ত নয় বলেও দাবী অনেক চিকিৎসকের। এমনকি বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হলে পাঁচতলা ভবনের ওয়ার্ড সমুহে অনেকটাই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট ঘুরে অনেকটা দুঃসহ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ লক্ষ করা গেছে। ভবনটিতে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটের অনুমোদিত সবগুলো বেড ঐ ভবনের ২য় তলা থেকে ৫ম তলায় স্থান সংকুলান হয়নি। ফলে বিপুল সংখ্যক মুমূর্ষ রোগীও মেঝেতে পড়ে আছেন।
আবার মেডিসিনের পেয়িং বেড ও পেয়িং কেবিন এখনো হাসপাতালের মূল ভবনে রয়ে গেছে। ফলে মেডিসিন ওয়ার্ডের সব রোগীদের দেখভাল করা সহ চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের দুটি ভবনে ছুটতে হচ্ছে। এমনকি মূল ভবনে পেয়িং কেবিন ও পেয়িং বেডে চিকিৎসাধীন মুমূর্ষ রোগীরা অনেক জরুরী প্রয়োজনে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠছে। নতুন ভবনের মেডিসিন ইউনিটের রোগীদের পথ্য আসছে ৩শ মিটার দুরের মূল ভবনের ৫ম তলা থেকে। ফলে খেলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলোÑবালুর রাস্তায় প্রতিদিন তিন বেলা ট্রলিতে ছোট-বড় হাড়ি চাপিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের খাবার পরিবেশন করতে গিয়েও ক্লান্ত হাসপাতাল কর্মীরা। খাবারের গুনগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
স্থানভাব সহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নতুন এ মেডিসিন ওয়ার্ডে মেডিকেল কলেজের বিপুল সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রীর ক্লাস করার মত পরিবেশ না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমও অনিশ্চয়তার কবলে। হতাশ ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয়টি কলেজ প্রিন্সিপাল ও হাসপাতাল পরিচালককে অবহিত করে গত ৩ মাসেও পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ ।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ আনোয়ার হেসেন বাবলু’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে ‘ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশেই নতুন ভবনে মেডিসিন ওয়ার্ড স্থানন্তর করা হয়েছে’ বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলামের সাথে রোববার সেল ফোনে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। তবে গত জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহেও এ ব্যাপারে তার সাথে কথা হলে ‘কিছু সমস্যা থাকলেও খুব শিঘ্রই তা অতিক্রম করা সম্ভব হবে’ বলে জানিয়েছিলেন তিনি। মূল পরিকল্পনায় ‘১ম থেকে ৫ তলা পর্যন্ত ওয়ার্ড স্থাপনের কথা ছিলনা বলে স্বীকার করে হাসপাতালের মূল ভবনে রোগীদের স্থান সংকুলন না হওয়ায় জরুরী ভিত্তিতে নতুন ভবনে মেডিসিন ওয়ার্ড স্থানন্তর করতে হয়েছে’ বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি ‘খুব শিঘ্রই এ ভবনটির ৬ষ্ঠ ও ৭ম তলার নির্মান কাজ শুরু হবে বলে জানিয়ে অদুর ভবিষ্যতেই নতুন ভবনটিতে ৫শ রোগীর সু চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব’ হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভবিষ্যত বিশ্বব্যবস্থার পরীক্ষা স্থল হয়েছে ইউক্রেন: বেলারুশের প্রেসিডেন্ট
দোয়ারাবাজারে হত্যা মামলার আসামিসহ দুই ইয়াবা কারবারি গ্রেফতার
বরগুনায় বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায়
ঝালকাঠিতে বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতেস্কার নামাজ আদায়
রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়
ভুল করে পাঁচ মাইল এলাকা হারালো ইউক্রেনীয় সেনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
শেরপুরে উপজেলা নির্বাচণে অংশ নেয়া ৬ বিএনপির প্রার্থীকে কারণ দর্শও নোটিশ!
রোনালদো নয়, মেসিকেই এগিয়ে রাখলেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচ
কালিয়াকৈরে তাপদাহে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে
হোয়াটসঅ্যাপে ইন্টারনেট ছাড়াই পাঠানো যাবে
গাজার ক্ষুধার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেটার বিথী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিট স্ট্রোকে এসএসসির ফলপ্রত্যাশীর মৃত্যু
বাংলাদেশেই থাকবে টাঙ্গাইল শাড়ি : শিল্পমন্ত্রী
কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানেসালাতুল ইস্তিস্কা আদায়
মতিঝিলে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে দিনমজুরের মৃত্যু
পটুয়াখালীতে উপকারি বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়...
নারী কর্মীদের নেকাব ও বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল
গাজার গণকবর নিয়ে তদন্তের জন্য বিশ্বজুড়ে চাপ বাড়ছে
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন তেভেস