উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রনে দক্ষিণের নদ-নদীর নাব্যতা সংকট ও লবনাক্ততা বৃদ্ধির সাথে ভয়াবহ ভাঙন
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৪৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৫১ পিএম
উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রন সহ যথাযথ সংরক্ষন ও উন্নয়নের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী সমুহের ধারন ক্ষমতা হ্রাসের ফলে শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট আর বর্ষাকালে ভাঙনের তীব্রতাও ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। এমনকি যথাযথ ড্রেজিং ও ভাঙন রোধে সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে নিকট অতীতে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের আশির্বাদ এসব নদ-নদী ক্রমাগত দুঃখে পরিনত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩২টি নদ-নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ‘সকাল বেলার আমীর সন্ধায় ফকির’এ পরিনত হলেও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে নৌ যোগাযোগও বিপর্যস্ত হচ্ছে। অথচ সারা দেশের নদ-নদী সুমহের যে পানি সাগরে পতিত হয়, তার ৭৮%-ই মেঘনা, তেতুলিয়া ও বলেশ^র সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩২টি নদ-নদী বহন করে থাকে। এ অভিমত একাধিক নদী গবেষনা প্রতিষ্ঠানের।
কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে সীমান্তের ওপারে বিবেকহীনভাবে প্রবাহ নিয়ন্ত্রনে নদ-নদী বহুল দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার নৌপথে নাব্যতা সংকট ক্রমগত ঝুকি বৃদ্ধি করছে। একই সাথে সাগরের লবানাক্ত পানি ১শ কিলোমিটার উজানে বরিশাল ছাড়িয়ে আরো ৫০ কিলোমিটার উজানে চাঁদপুরের ভাটিতে হিজলার মেঘানা পর্যন্ত পৌছে গেছে গত কয়েকটি বছর। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১ কোটি মানুষের জন্য এসব নদ-নদী অতীতে আশির্বাদ হলেও শুষ্ক মৌসুমে নব্যতা সংকট সহ বর্ষা মৌসুমে ভাঙন রোধে সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে অভিশাপ হয়ে উঠছে। তবে গত দুই দশকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও নদী ভাঙন প্রতিরোধে কিছু প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। বর্তমানে ঝালকাঠী বাদে দক্ষিণাঞ্চলের অপর ৫টি জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ১৩টি নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তবে আরো ৩০টি প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রনালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনে ঝুলছে।
এমনকি গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার নৌপথের প্রায় ৫শ কিলোমিটারে নাব্যতা সংকট ভয়াবহ ঝুকি সৃষ্টি করছে। ভয়াবহ সংকটে নৌপথ নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের নৌ যোগাযোগ।
২০২০ সালে ‘সেন্টার ফর এনভায়রমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস-সিইজিআইএস’ দক্ষিনাঞ্চলের ৩১টি নৌপথের প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এলাকায় সমিক্ষা পরিচালনার করে। যেখানে নদীসমুহের নব্যতা বৃদ্ধি, প্রধান নৌপথের সাথে ঘাটসমুহের সংযোগ স্থাপন, সেচ ও পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলজ সম্পদ বৃদ্ধি এবং নদী ভাঙন রোধের বিষয়গুলোও অন্তভর্’ক্ত ছিল। সমিক্ষাকৃত ৩১টি নৌপথের মধ্যে ৪৭০ কিলোমিটারে ৪২ মিলিয়ন ঘন মিটার পলি অপসারনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তি ৭ বছরে সংরক্ষন ড্রেজিং-এর মাধ্যমেও আরো ১৭০ মিলিয়ান ঘন মিটার পলি অপসারনের কথা বলা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পথের নদ-নদীর নাব্যতা উন্নয়ন এবং সংরক্ষন সহ লঞ্চ ঘাট সমুহের উন্নয়নে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশী প্রয়োজন হবে বলে জানা গেছে। তবে আরো বেশ কিছু বিষয় প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে অন্তভর্’ক্ত করতে হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। সে আলোকে ডিপিপি সংশোধন করে দাখিল করতে বলেছে বিআইডব্লিউটিএ। সরকারী সিদ্ধান্তের আলোকে শিঘ্রই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এমনকি নাব্যতা সংকটে প্রায় ৩ লাখ টন মাছ উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল মৎস্য সম্পদের ভবিষ্যতও ঝুকির মুখে। অথচ সারা দেশের আহরিত ইলিশের ৭০ ভাগই উৎপাদন ও আহরন হয়ে থাকে দক্ষিণাঞ্চলে ।
দক্ষিণাঞ্চলের নদÑনদীর ওপরই দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দর সহ সারা দেশের সাথে নৌ যোগাযোগ নির্ভরশীল। কিন্তু মেঘনা সহ বড় কয়েকটি নদ-নদীর নাব্যতা সংকটে পায়রা ও মোংলা বন্দর সহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে চাঁদপুর হয়ে ঢাকা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের এবং চট্টগ্রামের নৌ যোগাযোগ শুষ্ক মৌসুমে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার প্রসস্ত ভাটি মেঘনায়ও ডুবো চরে ফেরি সহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। অথচ এ নৌপথটির ওপরই চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সারা দেশেরই নৌ যোগাযোগ নির্ভরশীল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্রের মতে ২০০৬ সালের জানুয়ারীতে বরিশালের কির্তনখোলা নদীতে লবনাক্ততার মাত্রা ছিল ৬১০-৬৩০ পিপিএম। সেখানে ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে তা ৯১০ পিপিএম-এ পৌছে। ২০১৮ সালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ’১৯ সালে একই নদীতে লবনাক্ততার মাত্রা আবার ৯শ পিপিএম-এ বৃদ্ধি পায়। ২০২০-এর জানুয়ারীতেও লবনাক্ততার মাত্রা ছিল প্রায় ৯শ পিপিএম-এর কাছে। তবে এছর এখনো লবনাক্ততার মাত্রা বিপদ সীমার নিচেই রয়েছে। এবার মার্চ মাসে গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশী বৃষ্টি হওয়ায় শুষ্ক মৌসুম শেষ হবার আগেই নদ-নদী সমুহে প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহেই ফুস ওঠা সাগরের জোয়ারের পানিতে উপক’লের বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সাগরের লানাক্ত পানি অনেকটাই উজানে উঠে এসছে।
এমনকি ২০২১-এর এপ্রিলের শুরু থেকে বরিশালে কির্তনখেলায় লবনাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করে বলেও একাধীক সূত্র জানিয়েছে। উজানে প্রবাহ নিয়নস্ত্রন সহ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে সাগরের লবনাক্ত পানি বরিশাল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উজানে চাঁদপুরের ভাটিতে হিজলা পর্যন্ত পৌছে যায়। অপরদিকে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীতে ২০২১-এর শুষ্ক মৌসুমে সর্বকালের সর্বোচ্চ ২১শ পিপিএম লবনাক্ততা সনাক্ত হয়। যা ২০১৬ সালে ছিল ১২শ পিপিএম। আমাদের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ সহ মানব দেহের জন্য সহনীয় লবনাক্ততার মাত্রা ৬শ পিপিএম।
উজানে বিবেকহীন প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনে বিগত দুটি বছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে নদী বহুল দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী সমুহ ক্রমাগত তার চরিত্র হারাচ্ছে। যা কৃষি ও মৎস্য সম্পদ সহ সুস্থ মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলেও দাবী পরিবেশবীদদের। ৫-৪-২০২৩.
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?
বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯
কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা
এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন
৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!
জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব
আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি চরমোনাই পীরের