প্রধান বিরোধী দল বিহীন বরিশাল সিটি নির্বাচনে সরকারী দলের মনোনয়ন নিয়ে পারিবারিক কোন্দল
১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৩৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৬ পিএম
বহু কাঙ্খিত বরিশাল সিটি করেপারেশনের আগামী ২১ জুনের নির্বাচন নিয়ে সাধারন মানুষ সহ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে কৌতুহল বাড়লেও খুব একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি এখনো। তবে সরকারী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন লাভে নানামুখি তৎপড়তার সাথে ¯œায়ুচাপও এখন তুঙ্গে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তনুযায়ী এ নির্বাচনে এখনো অংশ গ্রহনের কোন আগ্রহ ও প্রস্তুতিও নেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র। সে বিবেচনায় সরকারী দলের মনোনয়ন লাভ মানেই নগরীর চাবি হাতে পাবার আশায় আছেন কেউ কেউ। আর এ কারণেই বরিশালের আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে জনমনে এখনো তেমন কোন আগ্রহ না থাকলেও খোজ রাখছেন সবাই।
বরিশাল সিটি করপোশেনের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে নানামুখি জল্পনা শুরু হলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোন র্নিবাচনে না আসার’ সিদ্ধন্তে অবিচল রয়েছে। ফলে আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনে সরকারী দলের সম্ভাব্য প্রার্থী বাড়তি স্বস্তিতে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এমনকি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আসন্ন এ নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার প্রসঙ্গটি বাদ দিলে এ ভোট যুদ্ধে অংশ গ্রহনের মত প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে যথেষ্ঠ মতভেদ রয়েছে। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে দক্ষিণাঞ্চলে সর্ববৃহত একটি নির্বাচন নিয়ে দলটির মধ্যে নুন্যতম প্রস্তুতিও নেই।
তবে গত ৫ নভেম্বরে চরম বাঁধা ও প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে বরিশাল মহানগরীতে বিএনপি’র বিভাগীয় গনসমাবেশ শাষক জোটকে নতুন করে করে ভাবাতে শুরু করে। সীমাহীন প্রতিকুলতার মধ্যেও বিরোধী দলের সমাবেশে এত জনসমাগম কিসের ইংগিত, তা বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচন সরকারী দলকে নতুন করে সব কিছু চিন্তা করতে তাগিদ দেবে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এমনকি মহলটির মতে, এসব বিবেচনায় নিয়ে ‘বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে না আসুক’ এমন ভাবনা রয়েছে শাষক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবন্দের মাঝেও। তাদের মতে, ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও বিএনপি বাদে অন্য যে কোন প্রার্থীকে অতিক্রম করা তাদের জন্য দুঃসাধ্য হবেনা’।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন তাপসকে দেড় বছর আগেই দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করা হলেও তা এখনো জনমনে বড় প্রভাব ফেলেনি। তবে দলীয় পূর্ণ সমার্থন ও সিদ্ধান্ত নিয়েই আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন ইকবাল হোসেন। তার মতে, ‘জাতীয় পার্টি এখন অনেক সংহত ও শক্তিশালী বিরোধী দলের ভ’মিকাতে রয়েছে। আর সে আলোকেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে তার দল অংশ নিতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। আসন্ন এ নির্বাচনে ভোট গ্রহন যদি অবাধ ও সচ্ছ হয়, তবে তাপসের চেয়েও বাসদ’র মনিষা চক্রবর্তি শাষক দল ও প্রার্থীর জন্য বড় দুঃশ্চিন্তার কারণ হতে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। একই সাথে ইসলামী আন্দোলন এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষনা না দিলেও তাদের সমর্থকদের ভোট ব্যাংকে ভর করে এগুচ্ছে।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরে ঐ বছরের ১৪ নভেম্বর বরিশাল সিটি’র প্রথম সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মনুযায়ী আগামী ১৪ মে থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে পরবর্তি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ নগর পরিষদের। সে আলোকেই নির্বাচন কমিশন ২১ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে।
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মধ্যেও চরম অস্বস্তি অব্যাহত রয়েছে। দলের একটি বড় অংশ ‘আগামী নির্বচনে বর্তমান মেয়রই প্রার্থী হচ্ছেন’ বলে ধরে নেয়ার পাশাপাশি দলীয় ‘মনোনয়ন লাভ মানেই নগরীর চাবি হাতে পাওয়া’ মনে করছেন। পাশাপাশি দলের মধ্যেই একাধীক শিবিরে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নানা ভিন্নমতও রয়েছে। এমনকি বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ এবার মনোনয়ন পেতে দলের প্রভাবশালী মহলে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আপন ভাগ্নে এবং ১৫ আগষ্ট নিহত শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র। অপরদিকে সাদিক আবদুল্লাহর পিতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’র আপন ছোট ভাই। ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন খায়ের আবদুল্লাহ। সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সাড়ীর নেতৃবৃন্দ দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, সরকার ও বিরোধী দলের প্রার্থী যেই হোক না কেন, সাধারন মানুষ যদি কেন্দ্রে যাওয়া সহ অবাধে ভোট দেয়ার নিশ্চিয়তা পায়, তবে দল ও প্রার্থীদের অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নিয়েই নগর পিতা নির্বাচন করবেন।
এমনকি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কত ভাগ ভোট দলীয় প্রার্থীর পক্ষে পড়বে তাও নির্ভর করবে প্রার্থী মনোনয়নের ওপর। মহলটির মতে, বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রতি আস্থা ফেরাতে আসন্ন সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠানের কোন বিকল্প পথ খোলা নেই শাষক দল ও জোটের সামনে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আসন্ন বরিশাল সিটি মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন দেবে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে পুরো বিষয়টিই দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল বলেও মনে করছেন মহলটি।
অপরদিকে, ২০১৮ সিটি নির্বচনে সরকারী দল ও দলীয় প্রার্থীর প্রতি পুলিশ ও প্রশাসনের যে মনোভাব ছিল, তা আগামীতে কতটুকু কাজ করবে, সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। কারণ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায় হামলার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে বরিশালে সরকারী দলের শীর্ষ পর্যায়ে যথেষ্ঠ দুরত্ব তৈরী হয়েছিল। তবে সেসব পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলী করে তফসিল ঘোষনার আগেই পর্যায়ক্রমে নতুনদের এখানে বসান হয়েছে।
পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘আগের মত আজ্ঞাবহ না থেকে গাইবান্ধার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারে’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এসব বিবেচনায় সরকারী দল বরিশাল সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে এ ভোট নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আশা করছে মহলটি।
১৯৭৩ সালের জতীয় নির্বাচন পরবর্তি ভোটগুলোতে বরিশাল শহর ও সদর আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। বরিশাল মহানগরী সহ সদর আসনকে ‘বিএনপির দূর্গ’ বলা হয়ে থাকে। ১৯৯১-এর ডিসেম্বর ও ১৯৯৮-এর আগষ্টে সদর আসনের দুটি উপ নির্বাচন এবং ২০০১ ও ২০০৮ সালে সদরের সংসদীয় আসন ও ২০০৩ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি’র বিদায়ী মহানগর সভাপতি মুজিবুর রহমান সারোয়ার। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের শাষনামলে সিটি নির্বাচেনেও বিএনপি প্রার্থী আহসান হাবীব কামাল বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৩ সালে একতরফা নির্বাচনের পর থেকেই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ২০১৮-এর সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে সারোয়ার দলীয় প্রার্থী হলেও সকাল ১১টার আগেই ভোটের বাক্স ভড়ে যাওয়ায় ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। দুটি নির্বাচনেই মহাজোটের প্রার্থী বাদে সারোয়ার সহ অন্য সব দলই সকাল ১১টার পরে ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন।
তবে আগামী বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল ইতোমধ্যেই ক্ষন গণনা সাথে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা সহ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন। আসন্ন সিটি নির্বাচনে জনগনের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, তার ওপরই সব কিছু নির্ভর করছে বলেও মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগন। তবে মহলটির মতে, বরিশাল সহ আসন্ন ৪ সিটি নির্বাচনই আগামী সংসদ নির্বাচনের অনেক প্রশ্ন তৈরী সহ তার জবাবও হতে পারে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ