তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং, উত্তরাঞ্চলের জনজীবন অতিষ্ঠিত।
১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:০০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৮ পিএম
রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ছে। ৪২ ডিগ্রী ছুঁই ছুঁই তাপমাত্রায় পুড়ছে মানুষ, সবুজ প্রকৃতি, ফসল, ইরিধান, আম, লিচুসহ শাকসবজির ক্ষেত। রুক্ষ আবহাওয়ায় গাছের পাতাও যেন নড়ছে না। সে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং।
বিদ্যুৎ যাওয়ার পর আসার নাম নেই। রোজা মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় কাহিল হয়ে পড়েছে। ২১ রমজান, ২৩ রমজান ও রমজানে রাত্রী জাগারণ করতে আশা মুসাল্লীগণ সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছেন। বিদ্যুৎ যাওয়ারপর ১ ঘন্টা/ দেড় ঘন্টা পর আসে কিছুক্ষন থাকার পর আবার চলে যায়। মানুষের জামা, পাঞ্জাবীসহ পরিধানের সকল বস্ত্র ভিজে যায়। নফল নামাজ, কুরআর পড়তে পারছেনা। গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ী মসজিদ কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বাবলু রাত্রী জাগারণ করতে এসে বিদ্যুৎ না থাকায় মসজিদ থেকে বেরিয়ে ইমামসহ কয়েকজন রাস্তায় দাঁডিয়ে ছিলেন রাত দুটার সময় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়। তিনি জানান বিদ্যুৎ আসে ফের চলে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ আসার নাম কথা নেই। অন্তত রাত জাগার দিন বিদ্যুৎ ঠিকভাবে দিলে মানুষ ভালভাবে আল্লাহর প্রার্থনা করতে করতে পারেন। তারাবি, ফরজ নামাজের সময় লোডশেডিং নিয়মে পরিনত হয়েছে। এখান থেকে মানুষ পরিত্রান পেতে চাই। এ বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারের উদ্ধোর্তন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করি। একই মন্তব্য করেন ইমাম মাও. সৈয়বুর রহমান, মুসাল্লী ইমাম আলি, নাজিমুদ্দিন ও সাদেকুল ইসলাম।
সকালের সূর্য উদয় হচ্ছে আগুনের হলকা নিয়ে। দশটার মধ্যেই উত্তপ্ত হচ্ছে আবহাওয়া। সময় যত গড়ায় তাপদাহ ততই বাড়তে থাকে। এর সাথে মরা পদ্মার বিশাল বালিচর হচ্ছে তপ্ত কড়াই। সেখান থেকে ভেসে আসছে তপ্ত বালি। যা চোখে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে।
সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে টিনের চালার ঘরের বসবাসকারী মানুষ। তাপ যেন টিন চুইয়ে নীচে নামছে। ফলে ঘরে থাকাও যেন দায় হয়ে পড়েছে। তাপদাহের কারণে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা ঘরে ফিরলেও সেখানও স্বস্তি নেই। বড় বড় দালাকোঠা ছাদের উপরের পানির ট্যাঙ্কিও ফুটন্ত পানির আধারে পরিণত হচ্ছে। রাস্তার পিচ গরমে গলে হালকা ভারী যানবাহনে চাকা পিচে দেবে যাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে হাঁসফাস করছে মানুষ, পশু পাখি। একটু স্বস্তি মিলছে না কোথাও। সবাই চেয়ে আছে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির দিকে।
এদিকে তীব্র দাবদাহের কারণে করোনার মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। বিশেষ করে হাসপাতালের তিনটি শিশু ওয়ার্ডে যেন ধাপ ফেলার যায়গা নেই। বেডে ফ্লোরে সবখানেই গরমজনিত কারণে রোগী আর রোগী। একদিকে করোনা অন্যদিকে গরমজনিত রোগীর চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
নাম না প্রকাশ না করা শর্তে একজন এমবিবিএস ডাক্তার জানান, রাজশাহীর তাপমাত্রা কেবলই বাড়ছে। এতে করোনার মধ্যে ঘরে ঘরে আবার ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোক, হিস্টিরিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে এ তীব্র গরমে। তাই এ সময় বয়বৃদ্ধ ও শিশুদের রোদে না বের হয়ে ঠান্ডা পরিবেশের মধ্যে থাকার জন্য বলেন। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, ডাব ও দেশি ফলমূল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ীর রিকশা চালক এস.কে রুবেল বলেন, রেলগেট থেকে যাত্রী নিয়ে বেলা ১১টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলা পৌঁছান তখন তার মাথা শরীর ঘেঁমে যাচ্ছিল, রোজাদার রিকশাচালক বড় টায়ার্ড । তিনি এবার গরমের কষ্টটা একেবারেই মাত্রাছাড়া, অসহনীয়। তিনি বলেন, ‘একবার খ্যাপ টানলেই গরমে কাহিল হয়ে পড়ি। গরমে রিকশা টানতে গেলেই কলিজা শুকাইয়া যায়। এত গরম আমার জন্মে দেহি নাই। আগে দিনে ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা কামাই করতে পারতাম। এখন ৫ শ থেকে ৭শ’ টাকার বেশি হয় না। ভ্যান চালক নয়ন একবার ভাড়া নিয়ে গিয়ে আর একবার খালি ভ্যান নিয়ে আসতে হয় গরমের কারনে মানুষ রাস্তায় বের হয়না।
শুধু রিকশাচালক রুবেল ভ্যানচালক নয়ন নয়, প্রচন্ড এই গরমে এমন আরো অনেকেরই আয় কমে গেছে। কৃষি শ্রমিক এনামুল হক বলেন, কাজ নেই একদিন কাজ পেলে অন্যদিন বসে থাকতে হয়। জমানো টাকাগুর ঘরবাড়ী করার জন্য রেখে ছিলাম তাও শেষ হয়ে গেল। মহিশালবাড়ী ফলের দোকান নিয়ে বসে আছেন সুমন আলী। তিনি বলেন, এই তাপদাহে লোকজন রাস্তা ঘাটে অনেক কম। বেচা-বিক্রি আগের অর্ধেকে নেমে এসেছে। রোজার দিন বলে বিকেলের দিকে কিছুটা বিক্রি হয়। গরমের মধ্যে সারাদিন বসে থেকেও সে রকম ব্যবসা হয় না।
বর্গাদার কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, জমিতে পানি দিতে সারারাত জেগে পানি না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং এর কারনে। ডিপটিউবল গুলোতে কৃষকদের লম্বা লাইন, ১০/১২ দিন পর পানি পাচ্ছি, খরার কারনে পানিও বেশী লাগছে। সেচচার্জ বৃদ্ধি পেয়েছে সে সাথে সকল সারের কেজিতে সরকার ৫ টাকা বৃদ্ধি করায় বোঝার উপর সাঁকের আঁটির অবস্থা হয়েছে আমাদের কেন ৫ টাকা বৃদ্ধি হলেও সার ডিলার পর্যায়ে তা বেড়ে ১০/১৫ টাকা হয়ে যাচ্ছে একই মন্তব্য করেন, কৃষক আলহাজ্ব আব্দুল মাতিন, ভাজনপুর এলাকার কৃষক দুলুদেব।
এই রিকশাচালক ও ফল বিক্রেতার মতো কৃষি ও নির্মাণ দিন মজুর তাদের কাজ করা শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর এমন দমবন্ধ তাপমাত্রা অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রচন্ত গরমে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শ্রমজীবি মানুষের শ্রম কমছে, কৃষিতে সেচ খরচ বাড়ছে, পোকা মাকড়ের আক্রমণ বাড়ছে। এতে উৎপাদন কমার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তার সারের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে কেজিতে ৫ টাকা এ যেন কৃষকের উপর মারার উপর খাড়ার ঘাঁ।
দেশের ৯০ শতাংশ এলাকাজুড়ে দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আপাতত গরম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। গত শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল ঢাকার তাপমাত্রা আরো বেড়েছে। এতে ১৯৬৫ সালের পর অর্থাৎ ৫৮ বছরের মধ্যে গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা কয়েকদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছিল চুয়াডাঙ্গায়। গতকালও জেলাটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় নগরিকদের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তীব্র গরমে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে রাজশাহীসহ সারাদেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মাঠ-ঘাটে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষ। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ-ব্যাধিও।
এসি লাগানো মহিশালবাড়ী জামে মসজিদের সরজমিনে দেখা গেল, তাপদাহ থেকে বাঁচার জন্য জোহরের নামাজ আদায় করে মসজিদেই অবস্থান করছেন অনেক মুসাল্লী। তারা শুয়ে, ঘুমে, বসে, কুরআন পড়ে দিন পার করছেন। কিন্তু বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে পড়ছেন মহাবিপদে। বিদ্যুৎ যাওয়ার মসজিদের পরিবেশও প্রচন্ড গরম হয়ে যাচ্চে। এচিত্র এসি লাগানো অন্য মসজিদগুলির।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সংঘর্ষ, ৫০ ছাগল পুড়ে অঙ্গার
‘ভ্যাট বাড়ানোর’ পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকি
সুদহার বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে
সুরমা নদীর তীরে জমে উঠেছে শীতকালীন সবজির হাট : প্রতিদিন প্রায় ১২ লক্ষ টাকার বেচাকেনা
মন্দিরে প্রবেশে ফ্রি টোকেন পেতে হুড়োহুড়ি, পদদলিতে নিহত ৬
লক্ষ্মীপুরে বহুতল ভবনের ফাইলিংয়ে বিধ্বস্ত সড়ক-দোকানপাট, ঝুঁকিতে ভবন
রাফির ব্যাংক লেনদেন নিয়ে যা বললেন সারজিস
পটুয়াখালী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের সাবেক সভাপতির ইন্তেকাল
আশুলিয়া থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগ দিলেন নুরে আলম সিদ্দিক
বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে আগুন দেওয়া হয়েছে
জকিগঞ্জে ক্রসফায়ারের চার বছর পর ওসির বিরুদ্ধে মামলা
আজকের মধ্যে ন্যায় বিচারের ইঙ্গিত না পেলে শাহবাগ ব্লকেডে যাবেন বিডিআর পরিবারের সদস্যরা
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস;স্বাভাবিক জনজীবন আড়ষ্ট
কুষ্টিয়ায় ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা ১২ লাখ টাকা
পদ্মা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলনের দায়ে ৯ জনকে কারাদণ্ড
মা-ছেলের মিলনে আবেগাপ্লুত ভক্ত-সমর্থক; অরুণা বিশ্বাসের তেলবাজি, কটাক্ষের শিকার
শেরপুরে শপিংমলে ভেসে উঠল ‘ছাত্রলীগ' ও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান: আটক-২
বিমানবন্দরে নরওয়ের নাগরিকদের হেনস্থা, একজনকে বেধরক মারধর
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার: বকশীবাজারে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী
এ দেশে অন্য কোনো দেশের দাদাগিরি চলবে না : হাসনাত