ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
ভোল পাল্টানোর নিরন্তর চেষ্টায় এতদিনের ক্ষমতা ভোগকারীদের

নগর ভবনের নির্যাতিত কর্মীদের পরিবারে ঈদের খুশির আমেজ

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা

০৩ মে ২০২৩, ১২:৫৯ পিএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৩, ১২:৫৯ পিএম

বরিশাল সিটি নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহর দলীয় মনোনয়ন লাভের বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নাকচ হবার ফলে এতদিন যেসব কাউন্সিলর ও নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী বর্তমান মেয়রকে নানাভাবে প্রভাবিত করে বিধি বহির্ভূত সুবিধা আদায় করছিলেন,তাদের অনেকের মুখে ইতোমধ্যে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে নিজেদের প্রভাব বহাল রাখা সহ নগর ভবনকে নগরবাসী ও নিরিহ কর্মচারীদের জন্য ভীতিকর স্থানে পরিনত করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি নুন্যতম বিধি বিধান অনুসরন না করেই চাকুরিচ্যুত এবং বছরের পর বছর ধরে ওএসডি’র নামে বেতন-ভাতা বঞ্চিতদের মুখে হাসি ফুটেছে দীর্ঘ কয়েক বছর পরে। এমনকি এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার পরিজনের মুখেও এখন খুশির আমেজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথিত ওএসডি’র শাস্তি ভোগরত একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘ইতোমধ্যে আমাদের পরিবারে ভিন্ন ধরনের ঈদের আমেজ শুরু হয়ে গেছে’।

গত পাঁচ বছরে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোন ধরনের নোটিশ বা যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরন না করেই চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো অন্তত ২৫ জনকে ওএসডি করা হয়েছে। যাদের বেশীরভাগের বেতন-ভাতা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে বিধি বহিভর্’তভাবে। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন সরকারীÑআধা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৬ মাসের বেশী ওএসডি রাখা যাবে না। আরো বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু বরিশাল সিটি করপোরেশনে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখার পাশাপাশি বেতন-ভাতা প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে অঘোষিতভাবে। আবার কিছু কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে ওএসডি না করে বেতন-ভাতা প্রদান করা হলেও অফিসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা।

তবে সব মিলিয়ে নগর ভবনের শতাধিক কর্মকতাÑকর্মচারী বছরের পর বছর ধরে নানা অনৈতিক ও বিধি বহিভর্’ত কথিত শাস্তি ভোগ করছেন। ফলে ঐসব কর্মীর পরিবার অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ফলে গোটা নগর ভবন চরম বিশৃংখল পরিবেশের মধ্যে দিয়ে চলছিল। এমনকি জনসেবা মূলক এ প্রতিষ্ঠানটির (?) নামের সাথে গত কয়েক বছর কাজের কোন মিল ছিলনা বলেও অভিযোগ সাধারন নগরবাসীরও। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সহ সামান্য কোন কাজে নগর ভবনে পা রাখলেই এখানের কতিপয় কর্মীর কাছ থেকে প্রজাসুলভ আচরনের তিক্ত অভিজ্ঞতারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। স্থাপনার নকশা অনুমোদন সহ যে কোন কাজে নগর ভবনে পা রাখলেই নানামুখি বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরিক সুবিধা বৃদ্ধি না করে স্থাপনা সমুহের হোল্ডিং ট্যাক্সের অযৌক্তিক বোঝা বাড়িয়ে নগরবাসীর দূর্ভোগ বৃদ্ধিরও অভিযোগ সবার মুখে। এমনকি যেকোন স্থাপনার নকশা অনুমোদনের আগেই নানামুখি ফি আদায় সহ বিভিন্নস্তরে হয়রানী নিয়েও নগরবাসীর অভিযোগ বিস্তর।

আর গত কয়েক বছরে নগর ভবনে এ ধরনের নানামুখি অনিয়মের সাথে দুজন কর্মকর্তার নামই সবার মুখে উচ্চরিত হচ্ছে। যারা তাদের বৈধ অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে যে কেউ দ্বিমত পোষন করলেই নানামুখি দুঃশাষন চাপিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নগর ভবনের উচ্চ পর্যায়ে প্রভাবিত করে চাকুরিচ্যুত বা ওএসডি’র নামে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে বেতন-ভাতাও বন্ধ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা করেছেন। বেশ কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে নগর ভবনের জবাবও চাওয়া হয়েছে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নগর ভবন থেকে কোন জবাব এখনো আদালতে পৌছেনি বলেও জানা গেছে। ফলে এসব প্রশাসনিক মামলার কোনটিরই পরিপূর্ণ বিচার এখনো শুরু হয়নি। কবে এসব প্রশাসনিক মামলা নিস্পত্তি হবে, সে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নগর ভবনের চাকুরিচ্যুত কর্মীরা।

তবে আগামী ১২ জুনের বরিশাল সিটি নির্বাচনে শাষক দলের প্রার্থী পরিবর্তনে খুশি নগর ভবনের নিপীড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীগন। তাদের দাবী অন্যায়ভাবে ও যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরন না করেই চাকুরিচ্যুত বা ওএসডি করে রাখার বিচার হোক। উপরন্তু ওএসডি করার পরে বিনা কারণেই তাদের বেতনÑভাতা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোঃ ফারুকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য না করে ‘যা কিছু করা হয়েছে তা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই হয়েছে’ বলে জানান।
এদিকে নগর ভবনের নিশ্চিত পটপরিবর্তন আসন্ন হয়ে ওঠার মধ্যেই নগরীর দুটি বাস টার্মিনাল, নদী বন্দরের বিভিন্ন ঘাট সহ বিভিন্ন সরকারী স্থাপনা থেকে বর্তমান মেয়রের অনুসারীদের উচ্ছেদে বিভিন্ন মহলের তৎপড়তাও চলছে। তবে এসব স্থাপনায় কতৃত্বকারী সহ বর্তমান মেয়রের অনেক অনুসারীগন ইতোমধ্যে পথ পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভকারী আবুল খায়েরের অনুসারী হবারও চেষ্টা শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষনার পর থেকেই নতুন প্রার্থীর পক্ষে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেসব আনন্দ মিছিল বের হয়েছে, তার অনেকগুলোতেই বর্তমান মেয়রের কঠোর অনুসারীদের মুখও দেখা গেছে। মিছিলকারীদের মধ্যে অনেকেই এতদিন নগর ভবনের ক্ষমতার অংশিদার ছিলেন। অবস্থার পরিবর্তনের সাথে এরাও নতুন অবস্থান গ্রহনে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন ইতোমধ্যে।

তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুল সেরনিয়াবাদ-এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সাদিক আবদুল্লাহ’র ঘনিষ্ঠজন সহ অনুসারীদের আপতত কোন স্থান হয়নি। আগামীতে তার আসে পাশে ভোল পাল্টানো ও অবস্থান বদলানোদের ভীড় কতটা বাড়ে তা দেখায় প্রতিক্ষায় রয়েছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজনদের মতে, ‘সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা তাদের নির্বাচনী কর্মকান্ডে যুক্ত না হলেই ভাল, তাতে বরং ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রীয়ার সৃষ্টি হতে পারে’ বলেও শংকার কথা জানান তারা।

এদিকে ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাউন্সিলর ও মেয়র পদ প্রত্যাশী শতাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জমা দেয়ার শেষ দিন ১৬ মে । বাছাই ১৮ মে এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ জুন। এরপর প্রতিক বরাদ্বের পরেই প্রার্থীগন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারনা শুরু করার কথা। কিন্তু বরিশাল মহানগরী যুড়ে আরো সপ্তাহখানেক আগেই আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রচারনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি প্রার্থীরা নানা উপলক্ষে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গনসংযোগও করছেন। নগরীর বেশীরভাগ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোষ্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।
তবে অনেক কালক্ষেপনের পরে নির্বাচন কমিশনের ঘুম কিছুটা ভেঙেছে। এসব পোষ্টার ব্যানার অপসারনে গত দুদিন নগরীতে মাইক যোগে প্রচারনাও চালান হলেও এখন পর্যন্ত তা কেউ আমলে নেননি বলেই মনে হচ্ছে।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিতর্কিত ভোট গ্রহনের পরে ঐ বছরের ১৪ নভেম্বর বরিশাল সিটি’র প্রথম সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মনুযায়ী আগামী ১৪ মে থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে পরবর্তি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতার মুখেই নির্বাচন কমিশন ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে।
এবার বরিশাল সিটির ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ২৬৭। যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬০ এবং মহিলা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৭ জন। ২০১৮ সারের তুলনায় এবার ভোটার সংখ্যা ৩৩ হাজার ১০১ জন বেশী।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জে নিখোঁজের ৩৩ ঘণ্টা পর গাছের নিচে মিললো যুবকের মরদেহ

সুনামগঞ্জে নিখোঁজের ৩৩ ঘণ্টা পর গাছের নিচে মিললো যুবকের মরদেহ

নগরকান্দায় সড়কে প্রাণ গেল দুই কলেজ শিক্ষার্থীর

নগরকান্দায় সড়কে প্রাণ গেল দুই কলেজ শিক্ষার্থীর

মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৩ রোহিঙ্গাসহ ১০ জন আটক

মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৩ রোহিঙ্গাসহ ১০ জন আটক

বগুড়ার দুই সাংবাদিক গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

বগুড়ার দুই সাংবাদিক গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর এবার মজুরি ২৫,০০০ টাকা দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর এবার মজুরি ২৫,০০০ টাকা দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এমডি শূন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো হ য ব র ল

এমডি শূন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো হ য ব র ল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলি, নিহত ৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলি, নিহত ৪

হাসিনা সরকারের ৬ মাসে মেট্রেরেলে ১৮ কোটি, বর্তমানে ১৮ দিনে সাড়ে ২০ কোটি টাকা আয়

হাসিনা সরকারের ৬ মাসে মেট্রেরেলে ১৮ কোটি, বর্তমানে ১৮ দিনে সাড়ে ২০ কোটি টাকা আয়

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলেন কুমারা দিসানায়েকে, শপথ আগামীকাল

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলেন কুমারা দিসানায়েকে, শপথ আগামীকাল

রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক

রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক

রিমান্ড শেষে দীপু, ইনু, মেনন, পলকসহ ৭ জন কারাগারে

রিমান্ড শেষে দীপু, ইনু, মেনন, পলকসহ ৭ জন কারাগারে

ইলিশ যাচ্ছে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’: উপদেষ্টা

ইলিশ যাচ্ছে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’: উপদেষ্টা

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দুই বন্ধুর

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দুই বন্ধুর

ইরানের কয়লা খনিতে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ, নিহত ৩০, আহত ১৭

ইরানের কয়লা খনিতে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ, নিহত ৩০, আহত ১৭

'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু

৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা

৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা

ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ

ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ

অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য

অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য