কক্সবাজারে দস্যুদের অস্ত্রের কাছে অসহায় জেলেরা
০৪ মে ২০২৩, ০৭:৪১ পিএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
নজরদারির অভাবে অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলসীমা। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে গুম, খুন, লুট, অপহরণসহ নিমর্ম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ট্রলার মালিক ও জেলেদের অভিযোগ, সাগরে কে জেলে, কে দস্যু, চিনতে না পারা, প্রশাসনের দায়হীনভাব ও উপকূলে দস্যু সিন্ডিকেটের ভয়ে সবকিছু আড়ালে রয়ে যায়। তাই দাবি উঠেছে, নিরীহ জেলেদের সুরক্ষায় বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা জোরদারের।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, কক্সবাজারের নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ৫ হাজারের ১১৩টি। আর নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৬৪ হাজারের মতো। এই বাইরে আরও কোন নৌযান নেই। আর জেলে থাকলেও কয়েকজন থাকতে পারে। কিন্তু প্রতিবছরই তালিকা আপডেট হয়।
বাঁকখালী নদীতে নোঙর করা ট্রলার খাজা আজমিরে অবস্থান করছেন জেলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। দীর্ঘ ১৭ বছরের জেলে জীবনে ৪ বারের বেশি সাগরে দস্যুদের হামলায় শিকার হয়েছেন। কিন্তু সাগরে দস্যুদের অস্ত্রের কাছে অসহায়ত্ব ও ভয়ের কারণ বর্ণনা করেন তিনি।
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সবচেয়ে ডাকাতি করছে বাঁশখালী, কক্সবাজারের মহেশখালী, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ার দস্যুরা। কিছুদিন আগেও মাছ নিয়ে কক্সবাজার উপকূলে ঢুকতে ছোট ট্রলার নিয়ে দস্যুরা ধাওয়া করেছে। আমরা দস্যুদের অস্ত্রের কাছে কিছু না। এসব বিষয় বোট মালিক সমিতিকে জানালোও কিছু হয় না। কারণ ট্রলার মালিকও ঐক্যবদ্ধ নয়। তারা আমাদের জীবন নিয়ে চিন্তাও করে না।’
শুধু মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নন; একই অবস্থা কক্সবাজার উপকূলের অন্যান্য জেলেদের। জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলে সাগরে মৎস্য আহরণ। তাতে কেউ প্রাণ হারায়, কেউবা ভাগ্যের জোরে ফিরে আসেন। কিন্তু সাগরে গিয়ে জীবন বাঁচাতে দস্যুদের কাছে কিভাবে অসহায় হয়ে পড়েন তারও বর্ণনা দেন জেলেরা।
মহেশখালীর মোক্তার আহমদের মালিকানাধীন এফবি আল্লাহ দান ট্রলারের জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করি। এখানে মাছ শিকারের সময় দেখি সব জালে ট্রলার। দস্যুদের ট্রলার চেনার কোন উপায়ও নেই। দস্যু যারা রয়েছে তারা হঠাৎ করে সন্ধ্যা বা রাতে আক্রমণ করে বসে যা কোনোভাবেই বুঝার উপায় থাকে না।
এদিকে জেলেদের পাশাপাশি দস্যুদের কাছে জিম্মি ট্রলার মালিকরাও। ট্রলারের সবকিছু হারিয়ে উপকূলে দস্যু সিন্ডিকেটের ভয়ে দ্বারস্থ হন না প্রশাসনের। আবার অনেকে প্রশাসনের কাছে গেলেও পান না সহযোগিতা এমন অভিযোগ করেছেন।
ট্রলার মালিক মোহাম্মদ আবু বলেন, সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে আমার ট্রলারে জলদস্যুরা হানা দিয়ে ২২টি জাল নিয়ে মাঝিমাল্লাদের মারধর করে। এরপর ইঞ্জিনটি বিকল করে দিয়ে জলদস্যুরা চলে যায়। তারপরও আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেনি, কারণ জলদুস্যদের অনেক সিন্ডিকেট উপকূলে রয়েছে। যারা দস্যুদের মাছ ও জাল বিক্রি করে। ওই সিন্ডিকেট প্রশাসনকে আমরা অভিযোগ করেছি এসব তথ্য দ্রুত দস্যু দিয়ে দিবে। ফের আমার ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে গেলে অপহরণ, হত্যা কিংবা মারধর করবে এই ভয়ে প্রশাসনকে জানায়নি।
মো. আবু আরও বলেন, প্রশাসন যদি এগুলো নিয়ে তদন্ত করেন অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। জলদসুদের মাছ কারা বিক্রি করে, ডাকাতির মালামাল কারা সামাল দেয় সবকিছু বের হয়ে আসবে।
ফিশারিঘাটস্থ আড়তদার সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ আজাদ বলেন, দস্যুদের নিরাপদ স্থান সাগর। কারণ দস্যুরা যখন সাগরে দস্যুতা করে, তখন জেলেরা বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করে। কিন্তু পুলিশ কিংবা কোস্টগার্ড সাগরে ঘটনাস্থলে যেতে যেতে দস্যুরা লুটপাট চালিয়ে চলে যায়। আর সাগরে যেখানে মাছ বেশি ধরা পড়ে সেখানে জলদস্যুদের দৌরাত্ম বেশি থাকে।
আরেক ট্রলার মালিক শফি উল্লাহ বলেন, সাগরে মাছ শিকারের সময় জলদস্যুরা ট্রলার ও মাঝিমাল্লা নিয়ে গেছে। এরপর মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। এসব বিষয় প্রশাসনকে জানালে পাত্তায় দেয় না তারা। কারণ সাগরে ঘটনা ঘটেছে। তারা একবার বলে সোনাদিয়ায় যাও, আবার বলে মহেশখালী যাও; পাতুয়ারটেক কিংবা উখিয়া যাও। এভাবে চলে যায় কিন্তু আমরা কোন সুরাহা পায় না।
তবে নিরীহ জেলেদের সুরক্ষায় সাগরে নিরাপত্তা জোরদারের বিকল্প নেই মনে করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, সাগরে মৎস্য সম্পদের ভান্ডারে স্বভাব বশে হোক অথবা যেকোন ভাবেই বিচ্ছিন্ন কিছু জলদস্যুতার বিষয় আমাদের কানে আসে। সেই বিষয়গুলো আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী জিরো ট্রলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে। সেখানে পুলিশ, নৌ-পুলিশ, র্যাব, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।
আর প্রশাসন বলছে, সাগরে তাদের সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্তেও বহুমুখী তৎপরতায় কমেছে জলদস্যুতা। এব্যাপারে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু গভীর সাগরে পুলিশের তো সীমাবদ্ধতা আছে। নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে গিয়ে টহল দেয়া যায় না। তারপরও যারা জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িত বা সাগরে যারা অপরাধ করে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ কাজ করছে।
জেলা ফিশিং বোট মালিক জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে কক্সবাজার উপকূলে ২০০১ সালে হিমঘরে বন্দি করে হত্যা করা হয়েছিল ১৪ জেলেকে। এরপর ২০০৯ ও ১০ সালে কক্সবাজারের খুরুশকুলের ১৭ ও পেকুয়ার ১৪ জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল। তারপর ২০১৩ সালে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ৩টি ট্রলারের ৩৪ জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর গেলো ২৩ এপ্রিল ট্রলারের হিমঘর উদ্ধার হয় ১০ জনের মরদেহ। এর বাইরে গত ৫ বছরের সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে কক্সবাজারের কমপক্ষে ২০ জেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন কয়েক শত। লুট হয়েছে কয়েক হাজার ট্রলার।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এমন হারেও ইতিবাচক অনেক কিছুই দেখছেন শান্ত
বন্যা প্রতিরোধে পরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
আদিবাসী-সেটলার, পাহাড়ী-বাঙালী বিভাজন বন্ধ করুন, সকলের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করুন : এবি পার্টি
ঘোড়াঘাটে ৪ ডাকাত গ্রেপ্তার, ট্রাক সহ সরঞ্জাম জব্দ
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বোমা বিস্ফরনে যুবক নিহত
পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটিতে আলেম অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জামায়াতে ইসলামীর
বাংলাদেশে আ.লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই : মেজর হাফিজ
নদী দূষণমুক্ত করতে 'নদী আমার মা' শীর্ষক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
ইসরায়েলি গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারালেন বাংলাদেশের ১৪ বছর বয়সী মনন
এভারকেয়ার, ল্যাবএইড, কমফোর্ট, মেডিনোভা, প্রো-অ্যাকটিভ-এ ডেঙ্গু টেস্টে বিকাশ পেমেন্টে ক্যাশব্যাক ও ডিসকাউন্ট
পাহাড়ীদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ গড়ে না উঠলে সমস্যা থেকেই যাবে
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের আয়োজনে ‘ইনভেস্টমেন্ট অপারেশনস্ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ
নুন্যতম মজুরি ২৫ হাজার টাকার দাবীতে আশুলিয়ায় বিক্ষোভ, ১৯কারখানা বন্ধ
সিলেটে রাজনৈতিক মামলা থেকে বিএনপি নেতা মাহবুব চৌধুরী সহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর খালাস
ইরানের ই-কমার্স বাণিজ্যের মূল্য ২ বছরে তিনগুণ বেড়েছে
বাইডেন-মোদি বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা
কাপ্তাই অটোরিকশা চালকদের ১ম দিনের মত অবরোধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ
সাকুরা পরিবহনের চাপায় চালকসহ দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের সভা অনুষ্ঠিত
বিটিভির নতুন মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম