বেতাগী শহররক্ষা বাঁধের ফাটল: ঘূর্ণিঝড় বার্তায় দুশ্চিন্তায় বাসিন্দারা
০৭ মে ২০২৩, ০৮:০২ পিএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ০৮:০২ পিএম
বরগুনার বেতাগীতে পৌরশহরের মূল রক্ষা বাঁধের প্রধান সড়টি বিষখালী নদীর ভাঙনে প্রকট আকারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে কাটছে শহরের হাজারো ব্যবসায়ী ও সাধারণ বাসিন্দাদের সময়।
বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র বার্তা রীতিমতো দেশের উপকূলীয় এ উপজেলাবাসীকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এ আভাসে ভারি বর্ষন আর জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে এই শহর রক্ষা বাঁধের এ সড়কটি কতটা টিকে থাকবে তা নিয়ে সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে।
এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেতাগী পৌর শহর। প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছাস থেকে পৌরবাসীকে আগলে রাখে ও রক্ষা করে এ বাঁধটি। কিন্ত ভাঙনরোধ প্রকল্পের ধীর গতির কারণে বর্ষার আগে কাজ শুরু না হওয়ায় নতুনভাবে লঞ্চঘাটের পশ্চিম দিকে শহর রক্ষা বাঁধের উপর নির্মিত পাকা সড়কের একাধিক স্থানে ভযাবহ আকারে ফাটল দেখা দেওয়ায় যে কোন সময় সড়কের দেবে যাওয়া অংশসহ সড়কের দুই পাশের স-মিল, আসবাবপত্রও কাঠের দোকান, বাজার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশর্প ও ছোট-বড় মিলিয়ে চায়ের দোকান এবং লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা রক্ষায়েই এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বাঁধটিতে ফাটল দেখা দেয়ার ফলে নদীর তীরবর্তী বসবাসরত বাসিন্দাদের কাটছে নির্ঘুম রাত। ভাঙন যেভাবে ধেয়ে আসছে তাতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করা না হলে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে চরম সংকটে পড়তে হবে এবং ভাঙন আরও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকাসহ আশ-পাশের কয়েক এলাকার মানুষ। পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তি। জোয়ার ভাটার সময় এখানকার বেশিভাগ মানুষকে সতর্ক থাকতে হয়।
ইতোপূর্বে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লঞ্চঘাট,বন্দর, ছোট ছোট কলকারখানা, শত শত দোকান পাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে গেছে ভেড়িবাঁধ, ধানের ক্ষেত, মসজিদ ও মাদ্রাসা। আর এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নব নির্মিত মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লঞ্চ ঘাটের যাত্রী ছাউনি,শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী কালি মন্দির, ভেড়িবাঁধ ও শহরের অন্যান্য এলাকা।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিব আব্দুল মালেক একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পের দৃশ্যমান যে টুকু রয়েছে তা শুধূ ভিত্তি প্রস্তর ফলক। যা এখন ভাঙনের মুখে পড়ে নদীগর্ভ বিলীন হতে আর সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সর্বশেষ গত বছরের ২২ ফ্রেরুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ১১তম সভায় বরগুনা জেলাধীন পোল্ডার নং ৪১/৭ এ বেতাগী শহর রক্ষা সহ বিষখালী নদীর অন্যান্য ঝুকিপূর্ণ অংশের প্রতিরক্ষা কল্পে ৪০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্ধ দেওয়া হয়। কিন্ত দিন দিন নদীর ভাঙন তীব্রতর হলেও অদ্যোবধি ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ শুরু করেনি। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তাও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তবে বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করেন, বিষখালী নদীর ভাঙন রোধে শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
শহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা মো: শাহআলম রুবেল বলেন, ‘ভাঙনের কবলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি, বাপ-দাদার বসতভিটাও চলে যাচ্ছে। এখনো ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ শুরু না করে এভাবে চলতে থাকলে আমদের মাথা গোজার ঠাই থাকবে না।’
নদীর পাড়ের বাসিন্দা শ্রমজীবী আব্দুর রব বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম চলছে, জানি না এবার আমাদের কপালে কী আছে। বিষখালী এখনই যেভাবে ভাঙছে, বর্ষা ও ঘূর্নিঝড় ‘মোখা’ ধেয়ে আসলে কী অবস্থা হবে ভেবেই বুক কাঁপছে।’
সড়কের পাশে ঝালকাঠী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশর্পের মালিক মো: সোহেল হাওলাদার বলেন, গত কয়েক মাস ধরে তাঁর দোকান এলাকায় ভাঙন বেড়েছে। বর্তমানে পাকা সড়কে ফাটলে তার প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে আসায় নদী গর্ভে বিলীন হতে তা আর সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কাঠ বাজারের করাত কলের মালিক আব্দুল হালিম বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম যত এগিয়ে আসছে। তত ভাঙন আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করবে। এভাবে অব্যাহত থাকলে ভাঙনের কারণে তাদের নি:স্ব হয়ে পড়তে হবে। স্থানীয়দের বিকল্প অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হবে। বহুদিন ধরে শুধূই শুনে আসছি কাজ শুরু হচ্ছে, কাজ শুরু হবে। কিন্ত কোন অগ্রগতি দেখছিনা।
বেতাগী পৌর সভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির জানান,‘ নানা জটিলতায় বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি আটকে ছিলো। তবে আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা কার্যালয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাকিব বলেন, সেখানে অনেক জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ঐ এলাকায় সরজমিনে গিয়ে রক্ষা বাঁধের সড়কের ভাঙনের অবস্থা পর্যক্ষেন ও পরিদর্শন করে এসেছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং জরুরি মেরামতের জন্য দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, বিষখালী নদীর ভাঙনরোধে শহররক্ষা বাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রেট কোড বেশি হওয়ায় ঠিকাদার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবুও খুব শীঘ্রই পুন:রায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৫৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও বিকাশের ডিএসও ইমরান গ্রেপ্তার
কোন সুদী সরকারই আর চাই না-নায়েবে আমীর অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান
টিকটক নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের আবেদন
কুষ্টিয়ায় বিএনপির কর্মীসভায় দলীয় নেতার মতো বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল ওসি
পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্কে শীতলতা,ইতিহাস থেকে বর্তমান
কটিয়াদীতে অপহরণের ৫ দিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার
বিকিনি নয় মনোকিনি পরে অভিনেত্রীর স্কাই ড্রাইভিং
বিমানবন্দর থানায় যোগ দিলেন নারী ওসি
চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : নাহিদ ইসলাম
সোমালিয়ায় নতুন মিশন অনুমোদন ইউএন-এর
জাসদ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম মিন্টু অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার
নতুন বছরের বন্দি বিনিময়ের আশায় ইউক্রেন
রামগতি-কমলনগরে চলছে ৫৮ টি অবৈধ ইটভাটা সংবাদ প্রকাশের পরও টনক নড়েনি প্রশাসনের
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে যা জানালো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
সদরপুরে হেরোইনসহ দুই যুবক আটক
নিউইয়র্কে কারাগারে বন্দি হত্যার ভিডিও প্রকাশ, তদন্ত শুরু
জামায়াতে ইসলামী ন্যায় ও ইনসাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়-হারুনুর রশিদ
সড়ক দুর্ঘটনায় পবিপ্রবির উপপরিচালকের মৃত্যু
'মলম' ময়ূখ বিধ্বস্ত তারেকের যুক্তির কাছে: অতঃপর পলায়ন!
হাসিনাকে ফেরাতে ঢাকার অনুরোধকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত?