রপ্তানী হচ্ছে ২৬টি দেশে পাচ্ছে প্রতিবন্ধীরা কাজের সুযোগ
১৪ মে ২০২৩, ১২:০২ পিএম | আপডেট: ১৪ মে ২০২৩, ১২:০২ পিএম
নজরুল ইসলাম, ॥
প্রতিবন্ধী রেহেনা পারভীন। পায়ের সমস্যা থাকলেও হাত দুটো ভালো। তার স্বামীও একজন প্রতিবন্ধী। তাদের ঘরে ৪টি সন্তান। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে কেউ কোন কাজ করাতে চাইতো না। অনেক সময় মন খারাপ করে বসে থাকতে হতো। আর মনের মাঝে স্বপ্ন বুনতে থাকেন, ছেলে-মেয়েদের কি মানুষ করতে পারবেন। এরই মাঝে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়ায় গড়ে উঠা গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ডাকে সেখানে কাজ শুরু করেন। আজ তার আয়ের উপরই সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চলছে। তার চোঁখে মুখে এখন হাঁসির ঝলক। কথাগুলো বলছিলেন আর তার দু’চোঁখ বেয়ে পানি পড়ছিল। তারমতো প্রতিবন্ধী সোহেল রানা, রুপালী সহ শ্রবণ ও অন্যান্য ধরণের প্রতিবন্ধীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ১২জন প্রতিবন্ধী কাজ করছেন। সবার চোঁখে-মুখে এখন রঙিন স্বপ্ন।
এখানে ধানের খড়, পাট, হোগলা ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ম্যাট, পাপস, টুপি, ফুলের টপ, ব্যাগসহ শতাধিক ধরণের পন্য। এসব পন্য রপ্তানি হচ্ছে জাপান, কানাডা, আমেরিকা, চিন, জাপান অস্টেলিয়া, সৌদি আরবসহ অন্তত ২৬ টি দেশে। ফেলনা নয় ধানের খড়, পাট, হোগলা, কচুরিপানা তার প্রমাণ দিয়েছে গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট নামের এ প্রতিষ্ঠান। এসকল পন্য বিদেশে রপ্তানি করে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হওয়ায় দুই হাজারের বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে ।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের কার্যালয় সুত্রে জানাযায়, ২০১৪ সালে রাজবাড়ী শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোঃ হাকিম আলী সরদার নিজের এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এমন কিছুর করার চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নিজের তিন একর জমি, জমানো কিছু টাকা ও ইসলামি ব্যাংকের সহযোতিায় গড়ে তোলেন গ্লোবাল গোল্ডেন জুট এন্ড ক্রাফট লিমিটেড। বর্তমানে এখানে নিয়মিত কাজ করছেন ৮০০ শ্রমিক। আর চুক্তি ভিত্তিতে বাহিরে কাজ করছেন আরো ১২০০ শত’র বেশি শ্রমিক। যারা বেশির ভাগই সর্বনাশা পদ্মায় ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টে গিয়ে দেখাযায়, এখানে পুরুষ শ্রমিকের সাথে তালমিলিয়ে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা।
এ সময় শ্রমিক কালাম মিয়া বলেন, তিনি এক সময় ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। ঢাকায় কাজ করে যে বেতন পেতেন, রাজবাড়ীতেও সেই বেতন পাচ্ছেন। সুবিধা হয়েছে ঢাকায় বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ করে সংসার চালাতে হিমসিম খেয়েছি। আর এখানে নিজের বাড়ীতে থেকে প্রতিষ্ঠানের পরিবহনে এসে কাজ করতে পারছি। এখন অনেক ভালোভাবে কাটছে দিন।
প্রতিবন্ধী শ্রমিক সোহেল রানা বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার কারণে আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী দুবেলা দু-মুঠো ভাত খেতে পারছি। আগে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে কেউ কাজে নিতো না। ধুর ধুর করে তাড়িয়ে দিতো। আজ কাজ করে পরিবারের খরচ মিটিয়ে নিজেও স্বাবলম্বী হচ্ছি। অনেক ব্যক্তি অনার্স মাস্টার্স পাস করে এখানে অফিসিয়াল কাজসহ বিভিন্ন কাজ করছে। এতে জেলার বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও কমেছে।
শ্রমিক হাসি আক্তার বলেন, আগে স্বামীর একা কাজ করতো এখন আমি ও কাজ করি। দুইজনে আয় দিয়ে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলছে। পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনা করাতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় আসি আর বিকেল ৫ টায় বাড়ি গিয়ে বাড়ির কাজ করি।
শ্রমিক স্মৃতি আক্তার বলেন, সর্বনাশা পদ্মার ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি জমিজমা সব হারিয়েছি। বাড়ির কাছে এ কারখানায় চাকুরী করে এক বছরে ৮৫ হাজার টাকা জমিয়েছি। আর একটু জমি কিনে ঘর তোলার স্বপ্ন দেখছি। আমার মতো অনেক নারী আছে যারা এখানে কাজ করে নিজের পায়ে দাড়িয়েছেন।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের এইচআর এডমিন সাইদ হোসেন বলেন, আমরা মূলত বিদেশে আমাদের উৎপাদিত পন্য বেশি রপ্তানি করে থাকি। কারণ বিদেশে পরিবেশ বান্ধব এসব পন্যের চাহিদা বেশি। ক্রেতারা অর্ডার করার সাথে সাথেই আমরা পন্য প্রেরণ করি। আমাদের তৈরি পন্যের গুনগত মান ভালো হওয়ায় দিন দিন চাহিদা বেড়েছে।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আলাউদ্দিন শুভ বলেন, এতদিন পাট হোগলা দিয়ে নানান ধরনের পন্য তৈরি হলেও এবছর যুক্ত হয়েছে ধানের খড় ও কচুরিপানা। আমরা গ্রাম পর্যায়ে থেকে ধানের খড় ও কচুরিপানা কিনে এনে সেগুলোও ব্যাবহার উপযোগি বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করছি। যেগুলো বিশ্বের ২৬ টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাচামাল হচ্ছে ধানের খড়, পাট, হোগলা ও কচুরিপানা। রাজবাড়ীতে প্রচুর পাট চাষ হয় তাই এ জেলা থেকে পাট ক্রয় করা হয়। আর হোগলা কিনে আনা হয় কুমিল্লা থেকে। তিনি আরো বলেন, নিজের এলাকার প্রতিবন্ধি, বৃদ্ধ, অসহায়রা যে যে ধরনে কাজ করতে পারছে তাকে সেই ধরনের কাজ দিয়েই কর্মস্থান তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে নদী ভাঙ্গন এলাকা হওয়ায় কাজ পেয়ে এই এলাকার মানুষে মুখে হাঁসি ফুটেছে।
রাজবাড়ীর বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যাবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। আর গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টের পন্যের কারণে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। কর্মসংস্থানের তৈরি হয়েছে। আমরা মাঝে মধ্যেই ওই কারখানাটি পরিদর্শন করি। তাদের নানান ধরনের পরামর্শ প্রদান করে থাকি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, পরিবেশ বান্ধব এসব পন্য তৈরির উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কারখানা এলাকায় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন দিক খেয়াল রাখা হচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব এসব পন্য ব্যবহারে সকলকে আগ্রহী করে তুলতেও কাজ করা হচ্ছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চীনা রাষ্ট্রদূতের সাথে এবি পার্টি নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়
আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে চূড়ান্তভাবে কবর দিতে হবে: হাসনাত
বিজয়নগরে দুইটি দোকান পুড়ে ছাই
সব দল, সব ধর্ম একত্রিত হয়ে দেশটাকে ফুলের বাগান বানাতে চাই: ডা. শফিকুর রহমান
সিসিইউতে চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমান
মতলবে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ৩ টি ড্রেজার-বাল্কহেডসহ ১৩ জন আটক
মেহেরপুরের মুজিব নগরে যত্রতত্র অবৈধ ইটভাটা! নেই প্রশাসনের নজরদারী
‘বাংলাদেশ আজ রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে’
নগরবাসিকে পানিতে কষ্ট দিতে সরকারবিরোধী চক্র সক্রিয়
বিপিএল সফল করার দায়িত্ব খেলোয়াড়দেরও: তামিম
এসিআই লিমিটেড ২০ শতাংশ নগদ এবং ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে
কক্সবাজারের পর্যটনকে প্রমোট করলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে
আফ্রিদি এখন ঢাকায়
বৃষ্টির বাধায় বুলাওয়ায়ো টেস্ট
হাটহাজারীতে ইটভাটায় অভিযান দুই লক্ষ টাকা জরিমানা
ইসলামী আন্দোলন নেতা আলতাফ হোসাইনের বড় ভাইয়ের ইন্তেকালে ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দের শোক
রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারব : আমিনুল হক
ইসলামী আন্দোলন নেতা আলতাফ হোসাইনের বড় ভাইয়ের ইন্তেকালে ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দের শোক
বিশ্বনাথে কানাডা প্রবাসীকে মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি : না দিলে হত্যার হুমকি
মেহেরপুর জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে বিভিন্ন গ্রামে ৩১দফা দাবি নিয়ে লিফলেট বিতরণ