ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ২ লাখ টাকায় শিশু বিক্রি
১৯ মে ২০২৩, ০৬:৪৫ পিএম | আপডেট: ১৯ মে ২০২৩, ০৬:৪৮ পিএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে গত ২৬ এপ্রিল অপহৃত হয় ৩ বছরের এক শিশু। চকলেটের লোভ দেখিয়ে অপহরণের পর শিশুটিকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে অপহরণকারীরা। অপহ্নত শিশুটিকে বিক্রির জন্য অপহরনকারীরা ফেইজবুকে বিজ্ঞান দেয়। অবশেষে ওই শিশুকে গোপালগঞ্জ থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে র্যাব-২। অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা পীযুষ দম্পতিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূলহোতা পীযূষ কান্তি পাল (২৯) ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালকে (২৫) সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান এ সব জানান। র্যাব জানায়, ওই দম্পতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলেন। আসামি পীযূষ ও রিদ্ধিতা বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু অপহরণ করে ওই গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করতেন।
মো. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, গত ২৬ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যানের মনির মিয়ার বাজার সংলগ্ন মো. দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়ে হুমায়রা (৮) ও তার ছোট ছেলে মো. সিদ্দিকসহ (৩) আরও ৭/৮ জন শিশু কিশোর খেলা করছিল। এ সময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি সব শিশুকে চকলেট খাওয়ায়। এক পর্যায়ে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়েকে বলে ‘তুমি বাসায় চলে যাও আমি তোমার ভাইয়াকে বাজার থেকে আম কিনে দেব।’ শিশুটির বড় বোন যেতে না চাইলে তাকে ধমক দিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বলে। আর ছোট ভাই তিন বছরের শিশু সিদ্দিককে বাজার থেকে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় হুমায়রা ভয়ে কান্নাকাটি করতে করতে বাসায় চলে যায়।
ভুক্তভোগী শিশুর মা কাজ শেষে বাসায় এলে মেয়ে হুমায়রা বিষয়টি তার মাকে জানায়। তৎক্ষণাৎ ভুক্তভোগীর মা তার স্বামীকে জানায় এবং আশপাশে খোঁজা-খুঁজি করতে থাকে। খোঁজা-খুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
তিনি বলেন, পরে ২৯ এপ্রিল অপহৃত শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। জিডির পর থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে অপহৃত শিশু উদ্ধারে তৎপর হয় র্যাব-২। র্যাব-২ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, পর্যালোচনা, বিভিন্ন সোর্স ও তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে, অপহরণকারী ব্যক্তি পিযুষ কান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। পিযুষ দম্পতি শিশুটিকে বিক্রির জন্য সুজন সুতার নামের ব্যক্তির মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রথমে সুজন সুতারকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে অপহৃত শিশুকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া থানাধীন তাড়াসি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে সুজন সুতারের নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছ থেকে অপহৃত শিশু সিদ্দিককে (৩) উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকার সাভার এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রটির মূলহোতা পীযুষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত পীযুষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, পীযুষ কান্তি পাল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াকালীন একটি স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে পীযুষ কান্তি পাল মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০২২ সালের মে মাসে মানবপাচারের অভিযোগে বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলায় গ্রেফতারের পর তিনি কিছুদিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে বের হয়। পীযুষ ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সনাতনী উদ্যোক্তা ফোরাম’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল।
অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান বলেন, পীযুষ পাল ও রিদ্ধিতা পাল বাচ্চা বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু অপহরণ করে থাকে। ২৬ এপ্রিল পীযুষ কান্তি পাল সাভার এলাকা থেকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় আসে। শিশু সিদ্দিককে রাস্তায় চকলেটের লোভ দেখিয়ে কোলে নিয়ে সিএনজিযোগে গাবতলী হয়ে সাভার তার বাসায় নিয়ে যায়। পরে ওইদিনই রিদ্ধিতা পাল সুজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আগারগাঁও আইডিবি ভবনের সামনে একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পনা দাস ও পীযুষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দেয়। শিশু সিদ্দিককে প্রনিল পাল নাম দিয়ে স্ট্যাম্প করে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে সুজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রমাণস্বরূপ প্রনিল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্ম সনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত সুজন সুতারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাসের স্ত্রীর বড় বোন বেবি সরকারের একটি সন্তান প্রয়োজন হওয়ায় সুজন সুতার পীযুষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালের কাছ থেকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে অপহৃত শিশু মো. সিদ্দিককে কিনে নেন। পরে ২৬ এপ্রিল রাতের বেলা সিদ্দিককে গোপালগঞ্জ দিয়ে আসেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল