ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

নিজ বাসভুমে পরবাসী স্থানীয়রা-ব্যবসা ও শ্রম বাজার দখলে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা

Daily Inqilab উখিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা

৩০ মে ২০২৩, ০৮:০৭ এএম | আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ০৮:০৭ এএম

জাতিগত নিপীড়নের মুখে জোরপুর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মায়ানমার রাষ্ট্রের রাখাইন ও অন্যান্য এলাকা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় প্রদান করে বাংলাদেশ। এসব রোহিঙ্গা এখন স্থানীয়দের গলার কাঁটা হয়ে বিদ্ধ হচ্ছে। উখিয়া টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরে কাটাতারের ঘেরার ভিতরে তাদের অবস্থান হবার কথা থাকলেও, মৌলিক মানবাধিকারের প্রশ্নে এখন তারা অনেকটাই উন্মুক্ত। ইতিপুর্বে মুল সড়কে বিভিন্নভাবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বসিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্টিকে স্থানীয়দের সাথে মিশে যাবার পথ বারিত করা হলেও সম্প্রতি চেকপোস্টগুলো তুলে নেওয়ায় এবং কাটা তারের ভেতরে এপিবিএন পুলিশের নজরদারীর শীতলতার কারনে রোহিঙ্গা জনগোষ্টী অতি সহজে স্থানীয়দের মুল স্রোতে মিশে যাবার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। এখন উখিয়া টেকনাফ এলাকাসহ কক্সবাজার জেলার শ্রম বাজার দখল করে নিয়েছে এই রোহিঙ্গা জনগোষ্টী।

রোহিঙ্গা শ্রমিকের দাপটে স্থানীয় শ্রমিকরা আজ দিশাহারা। তাদের (রোহিঙ্গাদের) কারনে উখিয়া টেকনাফের শ্রম বাজার ও ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে বহুমুখী জটিলতায় ভুগছে স্থানীয়রা। একদিকে রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা মারামারি, অপহরন, খুন, গুম, চাঁদাবাজিসহ হেন অপরাধ নেই তারা করছে, নিজেদের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই, মায়ানমারে ফিরে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ, উপগ্রুপ,‌ দলবাজি,বিবদমান গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, মাঝি বা নেতা হত্যার প্রতিযোগিতা রয়েছেই। রোহিঙ্গা শিবিরে গত ৪ মাসে প্রায় ৩০ জনের উপরে খুন হয়েছে, অপহরণ হয়েছে ৮০ জনের অধিক। অন্যদিকে মায়ানমার সরকারের পৃষ্টপোষকতায় অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহ, ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালান, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টির প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। মায়ানমার রাষ্ট্র বিভিন্ন ছলে-বলে-কৌশলে রোহিঙ্গাদেরকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে তাদের স্বদেশে ফিরানো বিলম্বিত করার অপচেষ্টার কথা বলাই বাহুল্য। আবার তাদের হাতে রয়েছে ইয়াবা, স্বর্ন, আইসসহ বিভিন্ন রকমের মাদক ও চোরাচালান দ্রব্য। অন্যদিকে রোহিঙ্গারা নামে বেনামে বিভিন্ন বাজারে, মার্কেটে গড়ে তুলেছে ব্যবসা বানিজ্য-যা স্থানীয়দের জীবন ধারন ও বেচে থাকার অবলম্বনের উপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে। দিনে দিনে স্থানীয়দের ব্যবসা বানিজ্য, শ্রম বাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকুরিসহ বিভিন্ন কিছু রোহিঙ্গারা দখল করে চরম একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে।
রোহিঙ্গারা খুবই ঐক্যবদ্ধ। যেকোন ব্যাপারে তাদের মধ্যে রয়েছে একতা, সংঘবদ্ধতা ও তিলকে তাল করার মন-মানসিকতা। তাই অতি সহজে স্থানীয়রা তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তর্কে লিপ্ত হতে সাহস পায় না। ছোট বা যেকোন ঠুনকো ব্যাপারে তারা বড় ঘটনা ঘটাতে দ্বিধা করেনা। তাই স্থানীয়রা তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তর্কাতর্কিতে যায় না। এটাকে পুজি করে এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত আইন শৃংখলা বাহিনী, এপিবিএন পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর নির্লিপ্ততায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।
উখিয়ার প্রতিটি ক্যাম্প জুড়ে বাজারের অবস্থানগুলতে রোহিঙ্গাদের একচেটিয়া ব্যবসা। ক্যাম্প জুড়ে বলি বাজার, মধুর ছড়া বাজার, জামতলা বাজার, কুতুপালং বাজার, লম্বাশিয়া বাজারসহ আর অনেক বাজারে প্রায় হাজার দশেক দোকানপাট, রয়েছে। এর প্রতিটি বাজারের প্রায় ৮০% এর মালিক রোহিঙ্গা। সেখানে ২০/২৫ হাজারের উপরে রোহিঙ্গা শ্রমিক কাজ করে। শুধু উখিয়া উপজেলায় এক লাখের মত রোহিঙ্গা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের কারনে উখিয়ায় শ্রমবাজার ও ব্যবসা নিয়ে জটিলতায় ভোগছে স্থানীয় দিন মজুর, শ্রমিক ও ফুটফাট ব্যবসায়িদের কৌশলে তাড়িয়ে দিয়ে রোহিঙ্গারা দেদারসে রাস্তার আশে পাশে এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সর্বত্র রোহিঙ্গা শ্রমিক। কুতুপালং এলাকার রহিম মিয়া নামের এক স্থানীয় দিনমজুর বলেন, দিনে এনে দিনে খাওয়া বুভুক্ষ মানুষ আমরা। একদিন কাজ না করলে বা কাজ না পেলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হয়। আগের মত মানুষের বাসায় কাজ পাইনা। সবাই রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ সেরে নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মজুরি অপেক্ষাকৃত কম হবার কারনে তাদেরকে কাজে নিয়োগ করে থাকে বেশি। মজুরি একটু বেশি বলে স্থানীয় শ্রমিকদের এখন কেউ নিতে চায়না। এদিকে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রয়োজনীয় ত্রান সামগ্রি পেয়ে থাকে। সাথে উপরি হিসেবে দৈনিক কাজ করেও টাকা আয় করছে। কিন্তু স্থানিয়রা না পায় কাজ, না পায় ত্রান সামগ্রি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের কি অবস্থা হবে। নিশ্চয়ই আমাদেরকে বাসা বাড়ি ছেড়ে অন্যদিকে যাওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। তাছাড়া এমন ও হতে পারে আমাদের জায়গা জমি রোহিঙ্গাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার পর থেকে তারা মনে করেছে ঐ এলাকার স্থায়ি বাসিন্দা তারা। কৃষি জমির কাজ, স্থানীয় শ্রম বাজার চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের দখলে। এতে উখিয়া ও টেকনাফসহ আশে পাশের স্থানীয় মানুষের জীবন জীবিকাইয় উখিয়া টেকনাফের বাসিন্দারা হতাশ। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা ঢলের সময় সেসব এলাকায় স্থানীয়দের জায়গা জমি রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য দেওয়া হয়েছিল তা হারানোর শংকায় রয়েছে স্থানীয়রা।

কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রিক্সা, অটোরিকশা, মাহিন্দ্র গাড়ি চালক, খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেল, গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ, জেলেদের ফিশিং বোট, বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ও ব্যবসা বানিজ্য দখলে নিয়ে রোহিঙ্গারা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রন করছে। টেকনাফের স্থল বন্দর, বিভিন্ন এলাকায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসুচি, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্টসহ অবকাঠামো নির্মানে রোহিঙ্গারা কাজ করছে। তারা এখন শুধু উখিয়া টেকনাফ নয়, কক্সবাজার সদর, রামু, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চক্করিয়াসহ কক্সবাজারের প্রতিটি উপজেলা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিঙ্গাদের সন্তান পড়ালেখা করার সুযোগ প্রাপ্ত হচ্ছে এবং রোহিঙ্গারা জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট গ্রহন করে স্থানীয় নাগরিকে পরিনত হচ্ছে অহরহ। তাছাড়া, স্থানীয় যুবকরা রোহিঙ্গা যুবতী বিয়ে করে অথবা রোহিঙ্গা যুবককে স্থানীয় যুবতীদের বিয়ে দিয়ে তারা অনায়াসে বাংলাদেশী বুনে যাচ্ছে-যা আগামি বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক অশনি সংকেত ছাড়া কিছু নয়।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাটোরে জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট শুরু
দাদা বাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
হিরণ ও তার ড্রাইভারের লাশ ৫ মাস পর উত্তোলন
ফরিদপুরের আলোচিত ওবায়দুর হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার ৪ আসামি গ্রেফতার
আরও

আরও পড়ুন

নাটোরে জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট শুরু

নাটোরে জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট শুরু

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিল

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিল

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় বৈঠক শুরু

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় বৈঠক শুরু

দাদা বাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২

দাদা বাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২

সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

হিরণ ও তার ড্রাইভারের লাশ ৫ মাস পর উত্তোলন

হিরণ ও তার ড্রাইভারের লাশ ৫ মাস পর উত্তোলন

সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা

সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা

শুধু এইচএমপিভি নয়, সানজিদার মাল্টিঅর্গান ফেইল করেছিল

শুধু এইচএমপিভি নয়, সানজিদার মাল্টিঅর্গান ফেইল করেছিল

ফরিদপুরের আলোচিত ওবায়দুর হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের আলোচিত ওবায়দুর হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্থায়ী শান্তির আশা তুরস্কের: এরদোগান

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্থায়ী শান্তির আশা তুরস্কের: এরদোগান

আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার ৪ আসামি গ্রেফতার

আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার ৪ আসামি গ্রেফতার

সকলে মিলেমিশে স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই:  ডা. শফিকুর রহমান

সকলে মিলেমিশে স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই: ডা. শফিকুর রহমান

মুগ্ধ হত্যা: ট্রাইব্যুনালে স্নিগ্ধের অভিযোগ

মুগ্ধ হত্যা: ট্রাইব্যুনালে স্নিগ্ধের অভিযোগ

জাবেদ পাটোয়ারী ও বনজ কুমারের পাসপোর্ট বাতিল

জাবেদ পাটোয়ারী ও বনজ কুমারের পাসপোর্ট বাতিল

কেন এসেছেন, কি করার আছে আপনাদের

কেন এসেছেন, কি করার আছে আপনাদের

ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না: রিজভী

ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না: রিজভী

লক্ষ্মীপুরে ট্রাফিক পুলিশের উপর হামলায় ঘটনায় ৯০ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ১১

লক্ষ্মীপুরে ট্রাফিক পুলিশের উপর হামলায় ঘটনায় ৯০ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ১১

‘আল্লাহ সম্পদ দিয়েছে মানুষের মাঝে বন্টনের জন্য, লুটপাটের জন্য নয়’

‘আল্লাহ সম্পদ দিয়েছে মানুষের মাঝে বন্টনের জন্য, লুটপাটের জন্য নয়’

আমার মতো চুটিয়ে প্রেম বোধহয় কেউ করেনি—পরীমণি

আমার মতো চুটিয়ে প্রেম বোধহয় কেউ করেনি—পরীমণি

কলাপাড়ায় ছয় ব্যবসায়ীর জরিমানা

কলাপাড়ায় ছয় ব্যবসায়ীর জরিমানা