সারা দেশের সাথে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেও গম আবাদ ও উৎপাদন বাড়ল
৩১ মে ২০২৩, ০৩:৩৮ পিএম | আপডেট: ৩১ মে ২০২৩, ০৩:৪৬ পিএম
টানা কয়েক বছরের নানা সংকট কাটিয়ে সারা দেশের সাথে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেও এবার গম আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম করল। সদ্যসমাপ্ত রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৯১ হাজার টন গম উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদনের পরিমান ছিল ৩.১১ লাখ টন। এসময়ে দেশে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭শ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ১ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যা অগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বেশী হলেও উৎপাদন আগের বছরের ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৮শ টন থেকে এবার ১২ লাখ ৫ হাজার ৯শ টনে উন্নীত হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর পরে গম আবদ ও উৎপাদনের এ প্রবৃদ্ধিকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সহ কৃষিবীদগন আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন। ২০১৭ সালে দেশের ৫টি জেলায় ছত্রাকবাহী রোগ ব্লাষ্ট’এর সংক্রমনের পরে সরকার গমের আবাদ ও উৎপাদন কিছুটা নিরুসাহিত করে। ফলে অত্যন্ত সম্বভনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসলের ভবিষ্যত যথেষ্ঠ অনিশ্চয়তার কবরে পারে। এমনকি স্বল্প ব্যায় এ খাদ্য ফসলেল ভাল দাম পেয়ে কৃষকনরা আশার আলো দেখলেও তা নিয়ে নতুন শংকা তৈরী করে ছত্রাকবাহী রোগ ‘ব্লাষ্ট’।
তবে গত ৩টি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের কোথাও এ রেগের কোন সংক্রমন না থাকায় কৃষকদের মধ্যে আবার যথেষ্ঠ আশার আলো দেখা দিয়েছে। ফলে গত বছর থেকেই কৃষি মন্ত্রনালয় ও ডিএই গম আবাদে কৃষকদের মনযোগী করারও চেষ্টা করছে। এরই ফলশ্রুতিতে সদ্যসমাপ্ত রবি মৌসুমে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও গম আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে। তবে দেশে এখনো গমের মোট আবাদ ৫ লাখ হেক্টরে উন্নীত না হওয়াকে হতাশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন কৃষিবীদগন। কৃষক পর্যায়ে উন্নত বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে গমের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি নুন্যতম ৪ টনে উন্নীত করার পাশাপাশি আবাদ হেক্টরে ৫ টনে উন্নীত করতে পারলে মোট উৎপাদনও ২০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন নয় বলেই মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
আমাদের ‘কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ও ‘গম গবেষনা ইনস্টিটিউট’এর বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল ও পরিবেশ উপযোগী একাধীক গম-এর জাত উদ্ভাবন করেছেন। এমনকি ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের গম বীজ এবং আমাদের দেশের মত কম শীত প্রধান অঞ্চলের জন্য ‘শতাব্দী’ নামের গম বীজও উদ্ভাবন করেছেন বারি’র বিজ্ঞানীগন। বারি উদ্ভাবিত গম বীজের মধ্যে ‘কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রানী, শতাব্দী ছাড়াও সৌরভ-বারি-১৯ ও গৌরব-বারি-২০’ নামের উচ্চ ফলনশীল গম বীজও রয়েছে। এসব বীজ থেকে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ টন পর্যন্ত গম উৎপাদন সম্ভব বলে ‘বারি’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। এছাড়া গম গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীগনও আরো একাধীক উচ্চ ফলনশীল গম বীজ উদ্ভাবন করেছেন।
বরিশাল কৃষি অঞ্চল সহ দেশে গম আবাদের ইতিহাস খুব বেশী দিনের না হলেও দানাদার খাদ্য ফসল হিসেবে তা ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় শীর্ষস্থান দখল করেছে। সারা বিশ্বে গম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে। ১৯৮৫ সালে দেশে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১২লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছিল। কিন্ত এর পর থেকে গমের আবাদ সম্প্রসারনের পরিবর্তে তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। তবে উচ্চ ফলনশীল বীজের কারণে অঅবাদী জমি হ্রাস পেলেও তুলনামূলকভাবে উৎপাদন কমেনি।
দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের অনেক জমিতেই গমের পরিবর্তে এখন ভ’ট্টা ছাড়াও সম্প্রতি পেয়াঁজের আবাদ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৫৯ হাজার হেক্টরে গম আবাদ হয়েছে । যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বেশী। আর অতি সম্প্রতি কর্তন শেষে মোট উৎপাদন হিসেব করা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার টন। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ২০ হাজার টন বেশী। এবার দক্ষিণাঞ্চলে গমের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি প্রায় ৩ দশমিক ১৪ টনে উন্নীত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরনগুনা ও ঝালঠীতে ১০ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমিতে ৩২ হাজার ২১০ টন গম উৎপাদন হয়েছে। আর ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জের ৪৭ হাজার ৭১২ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২৭৭ টন গম । ডিএই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বল্পসেচ এবং সহজ বালাই ব্যবস্থাপনা সহ উৎপাদন ব্যায় তুলনামূলক ভাবে কম ও ভাল দাম পাওয়ায় নিকট অতীতে দেশে গমের আবাদ সম্প্রসারন ঘটলেও ২০১৭ সালে আকষ্মিকভাবেই ৫টি জেলায় ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ সংক্রমনে বিপুল আবাদী জমির ফসল বিনষ্ট হয়। এমনকি কয়েকটি এলাকায় জমিতে থাকা গম আগুনে পুড়িয়ে সংক্রমন প্রতিরোধ করতে হয়েছে। যেসব এলাকায় ব্লাষ্টÑএর সংক্রমন দেখা দেয়, পরবর্তি ৩ বছর সেসব জেলায় গমের আবাদ নিরুৎসাহিত করে সরকার। ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ ফসল আবাদ সম্প্রসারনের পরিবর্তে ক্রমশ পেছাতে শুরু করে।
তবে বিগত ৩টি মৌসুমের মত সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুওমেও ব্লাষ্টের কোন সংক্রমন না হওয়ায় কৃষকরা গম আবাদে আবার আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলেই মনে করছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। অত্যন্ত সম্ভনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসল আবাদে কিছুটা আশার আলো দেখছেন দক্ষিণাঞ্চল সহ সারাদেশের কৃিষযোদ্ধাগনও। ৩১-৫-২০২৩.
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রভিটা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ স্ত্রী-ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ভারতীয় উৎসবে অংশ নেবে ছয় ইরানি চলচ্চিত্র
বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রপের সংঘর্ষ, ৮ বাড়ীতে আগ্নিসংযোগ, আহত ২০
হাসিনার পরিবারকে প্লট বরাদ্দে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে
অভিনেত্রীর নেকলেস চুরি, চোর কি তবে রং মিস্ত্রী?
ভিভো এক্স২০০ এর নজর কাড়া পাঁচ দিক
ভৈরব থানার লুট হওয়া অস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের মামলায় আসামী অন্তর, ষড়যন্ত্র অব্যাহত
সিলেট কোম্পানীগঞ্জে কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা, থানায় অভিযোগ
সুনামগঞ্জে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
মালয়াম অভিনেত্রীকে যৌন হয়রানি, আটক স্বর্ণ ব্যবসায়ী
‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান
কেরানীগঞ্জের অস্থায়ী আদালতে চলবে বিডিআর বিদ্রোহ মামলা
বিশ্বাসের ঘরে ষড়যন্ত্র চলছে: ফারুক
ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা
সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
বিয়ের পূর্বে স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকা প্রসঙ্গে।
লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া
টিম কম্বিনেশনের জন্য দলের বাইরে ছিলাম: রিশাদ
ফুলপুরে তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে ফুটবল প্রতিযোগিতায় রুপসী বিজয়ী