এক আদু ভাইয়ের পতন, উত্থানে আরেক আদু ভাই
১৪ জুন ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের এক 'আদু ভাই' বিদায়ের পরপরই আরেক 'আদু ভাই' শীর্ষপদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি হলেন ২০১৫ সালে গঠিত বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহি। নিজের ছাত্রত্বকে শো করার জন্য ভর্তি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যাকালীন কোর্সেও। এদিকে বয়স উত্তীর্ণ 'আদু ভাই' শীর্ষ পদ প্রত্যাশী হওয়ায় নিয়মিত ছাত্র নেতাদের পদ পেতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুবি শাখা ছাত্রলীগের ২০১৫ সালে গঠিত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা এলাহীর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৫ বছর আগে। ২০১৭ সালের ১৩ মে ওই কমিটি (আলিফ-রেজা) বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসবিমুখ ছিলেন তিনি। তবে গত ৬ মার্চ ইলিয়াস-মাজেদ কমিটি বিলুপ্তের পর ফের ক্যাম্পাসে পদ পেতে সক্রিয় হয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নিজ দলের কর্মীদের মারধর, ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণ, কর্মীদের হাতে মাদকদ্রব্য সহজলভ্য করে দেওয়া, সাংবাদিক হেনস্তাসহ নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
২০১৭ সালের ২৮ মে ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি এবং গণিত বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও কমিটি বহাল থাকে ২০২৩ সালের ৫ মার্চ পর্যন্ত। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি অন্তত চারবার পরিবর্তিত হলেও পরিবর্তন হয়নি কুবি কমিটি। ফলে চাপা কষ্ট নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন অনেক উদীয়মান নেতাকর্মীরা।
কমিটির প্রভাব খাটিয়ে ইলিয়াস ক্যাম্পাসে কায়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে হস্তক্ষেপ, টেন্ডারবাজি, শিক্ষকের ওপর হামলা, ছাত্রীদের নিপীড়ন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের মারধরসহ নানা অভিযোগ থাকলেও কেন্দ্রে তদবির করে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে বহাল তবিয়তে ছিলেন তিনি। সবশেষ গত ৬ মার্চ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর পতন হয় ইলিয়াসের। তার পতনের পর নতুন করে নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন উদীয়মান নেতারা। তবে ক্যাম্পাসে আরেক 'আদু ভাই'র উত্থানে সে স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে তাঁদের।
নতুন 'আদু ভাই'র নাম রেজা-ই-এলাহি। তিনি ২০১৫ সালে গঠিত কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৭ সালে তাঁর কমিটি বিলুপ্ত হলে ক্যাম্পাস থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এরপর দায়িত্ব পালন করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকেরও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে তিনিও ভর্তি হোন লোক প্রশাসন বিভাগে। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অনুযায়ী বর্তমানে তাঁর বয়স ৩১। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক বয়সসীমাও শেষ হয়েছে তাঁর। তবে নতুন কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়ার আশায় ছাত্রত্ব দেখাতে ভর্তি হয়েছেন ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে। এমনকি আগামী কমিটিতে তিনি নিশ্চিতভাবেই সভাপতি হচ্ছেন দাবি করে ছাত্রলীগের কর্মীদেরকে নিজ দলে ভেড়াচ্ছেন । এ পরিচয় ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন রেজা। এরইমধ্যে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সংঘাতে জড়িয়েছেন তিনি। বহিরাগত নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ফাঁকাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ থেকে সাংবাদিক হেনস্তা, তাঁর হাত থেকে বাদ যায়নি কিছুই। এমনকি ছাত্রলীগ কর্মীদেরকে মাদক নেওয়ার জন্য অর্থ যোগান দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর এসব কর্মকাণ্ডে আবারও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন পদপ্রত্যাশী নিয়মিত শিক্ষার্থীরা।
তাঁদের ভাষ্য, এক 'আদু ভাই' ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আরেক 'আদু ভাই'য়ের উত্থানে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। পদবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন ক্যাম্পাসের সক্রিয় ও উদীয়মান নেতা-কর্মীরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী শরিফ উদ্দিন বলেন, 'আদু ভাইদের নেতৃত্বে আসতে চাওয়া নতুনদের জন্য ইতিবাচক নয়। আদু ভাইরাই যদি নেতা হয়, তাহলে হতাশ হয়ে পড়বে যোগ্য ও মেধাবীরা। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ, কোনো আদু ভাইকে নয়, তরুণদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচন করুন। এতে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে ছাত্রসমাজকে সেবা দিতে পারবে।'
নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদ প্রত্যাশী ও রেজা-ই-এলাহি সমর্থিত মমিন শুভ বলেন, 'ক্যাম্পাস থেকে অনেকেই সিভি জমা দিয়েছে। কে অছাত্র, কার বয়স আছে-নেই এটা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দেখবে। পদ পাওয়ার জন্য যেকেউ নিজের মতো করে চেষ্টা করতে পারে।'
কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির শীর্ষ পদপ্রার্থী নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ত্যাগী ও পরিশ্রমীদের সংগঠন। অছাত্র কিংবা বয়সোত্তীর্ণ কেউ পদে আসলে উদীয়মান নেতাকর্মীদের হারাবে ছাত্রলীগ। আশা করি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নিয়মিত ছাত্র, ক্লিন ইমেজদারী এবং দক্ষ নেতাকর্মীদেরকে বিবেচনায় নেবে।
বয়সোত্তীর্ণ ও অছাত্র হওয়ার পরও নতুন কমিটির সভাপতি প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে রেজা-ই-এলাহি বলেন, আমাকে কে বা কারা আদুভাই, বহিরাগত ডাকে আমি জানি না। এমন কিছু আমি শুনিনি। আমি একবার শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকলেও আবার সভাপতি প্রার্থী হতে পারি। এক্ষেত্রে আমার বয়স কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দেখবে। আমিতো কমিটিতে নাও আসতে পারি।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আছে, কার বয়স আছে কি নেই, কমিটি দেওয়ার সময় আমরা অবশ্যই এসব খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেব। অছাত্র ও বয়সোত্তীর্ণদের কমিটিতে আসার সুযোগ নেই।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সূর্যের নিকটতম যাত্রা, নিরাপদে ফিরে এলো নাসার পার্কার সোলার প্রোব
দোয়ারাবাজার পল্লীতে যুবক খুন
স্পেনগামী সমুদ্রপথে ২০২৪ সালে অভিবাসীদের রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু
অভিনয়ের জন্য গোসল করতেন না অনিল কাপুর
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০২৫ সালে রাশিয়া সফর করবেন
শেষ বিকেলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে ভারত
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী টাইম ওয়ার্নারের প্রাক্তন সিইও রিচার্ড ডি. পারসন্সের মৃত্যু
নারীকে যৌন নিপীড়ন: খোদ মহারাষ্ট্রে ইসকন সন্ন্যাসী জুতাপেটা
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস
অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু
বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার
নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত
কালকিনিতে ইউপি সদস্যসহ নিহত-৩, আহত-১০
রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার
উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা
সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা
ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে