৪৪ বছর কারাভোগ শেষে মুক্তি পাচ্ছেন জল্লাদ শাহজাহান

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৮ জুন ২০২৩, ১০:২৮ এএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১০:২৮ এএম

দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থাকা জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন। ৪৪ বছর কারাভোগ শেষে আজ (রোববার, ১৮ জুন) তিনি মুক্তি পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নিজের সাজার মেয়াদ কমানোর বাসনায় কয়েদি থেকে জল্লাদ বনেছেন তিনি। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন কারাগারের চার দেয়ালের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে। অবশেষে মুক্তি সেই বাসনা সত্যি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে জেল সুপার সুভাষ ঘোষের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের সকল কারাগারের প্রধান জল্লাদ শাহজাহান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক, ৬ জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ বাংলাদেশের আলোচিত প্রায় ৪০ জনের ফাঁসি দিয়েছেন।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেফতার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় শাহজাহানের ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে ৮৭ বছর জেল মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য সাজা দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাঁজা ৪৩ বছরে এসে নামে। দুইটি মামলায় ৫০০০ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস করে অতিরিক্ত এক বছর জেল খেটে ৪৪ বছর পর আগামীকাল মুক্ত আকাশে শ্বাস ফেলার সুযোগ পাবেন জল্লাদ শাহজাহান।
১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করে। এরপর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নের সময় আসলেই তার ডাক পরে। টানা আট বছর এই কাজ করার পর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন করতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ হয়। এ ছাড়া কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
পুরো নাম মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ। জন্মস্থান নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে। তার বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া, মাতা সবমেহের। তিনি পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত।
ছেলে হিসেবে শাহজাহান খুবই ভালো ছেলে ছিলেন। পারতপক্ষে করও উপকার ছাড়া ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন না। তবে সে প্রচণ্ড বন্ধু পাগল মানুষ ছিলেন। একবার তার গ্রামে নারী ঘটিত একটি ঘটনা ঘটে। শাহজাহানের দুই বন্ধুসহ তার নামে অভিযোগ ওঠে। গ্রামে তাকে নিয়ে বিচার বসানো হয়। সেই বিচারে তাকে অপরাধী প্রমাণিত করে তাকে সাজা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তার ক্ষিপ্ততা শুরু। তিনি অপমান সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন অপরাধ জগতে প্রবেশ করে এই অপমানের চরম প্রতিশোধ নিবেন। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ।
নারীঘটিত ওই ঘটনার পরে তিনি বাংলাদেশের একজন বহুল পরিচিত সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন। তাছাড়া কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করার পর থেকে যেকোনো অপারেশনে তার চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি পেতে থাকলো। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন করেছিলেন ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মাদারীপুর জেলায় এবং এটাই ছিল তার জীবনে সর্বশেষ অপারেশন। সেখানে তার অপারেশন শেষ করে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে শাহজাহানের দল মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাবে। মানিকগঞ্জে পুলিশ চেক পোস্ট বসালে শাহজাহান তার ওই এলাকার বাহিনীর মাধ্যমে তা জেনে জান। সব জেনেই ওই এলাকা দিয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। মানিকগঞ্জে পুলিশের সাথে গুলাগুলিও হয় কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এরপর ঢাকায় পৌঁছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রতিমধ্যে পুলিশ তাকে আটক করে ফেলে। তার গতিময় জীবনের এখানেই সমাপ্তি এবং এরপর থেকে তার বন্দী জীবন শুরু।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সালমান এফ রহমানের কারখানায় নির্বাচন
সহযোগিতাকে দুর্বলতা ভাবলে নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না : গয়েশ্বর
হাসিনার বিচার করতে হবে : ফ্যাসিবাদ বিরোধী তৃণমূল মঞ্চ
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরো এক মাস বাড়লো
ঐক্য আন্দোলনের জাতীয় কাউন্সিল আজ
আরও

আরও পড়ুন

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সালমান এফ রহমানের কারখানায় নির্বাচন

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সালমান এফ রহমানের কারখানায় নির্বাচন

সহযোগিতাকে দুর্বলতা ভাবলে নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না : গয়েশ্বর

সহযোগিতাকে দুর্বলতা ভাবলে নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না : গয়েশ্বর

হাসিনার বিচার করতে হবে : ফ্যাসিবাদ বিরোধী তৃণমূল মঞ্চ

হাসিনার বিচার করতে হবে : ফ্যাসিবাদ বিরোধী তৃণমূল মঞ্চ

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরো এক মাস বাড়লো

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরো এক মাস বাড়লো

ঐক্য আন্দোলনের জাতীয় কাউন্সিল আজ

ঐক্য আন্দোলনের জাতীয় কাউন্সিল আজ

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।

বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।

পরাজিত শক্তির দোসররা এখনো নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত : মির্জা ফখরুল

পরাজিত শক্তির দোসররা এখনো নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত : মির্জা ফখরুল

বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স

বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স

ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও

ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও

আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার আশা বুমেরাং হবে : মুফতী ফয়জুল করীম

আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার আশা বুমেরাং হবে : মুফতী ফয়জুল করীম

ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূ‌র্তে নির্বাচন হ‌লে বিএন‌পি ৯০ শতাংশ ভোট পা‌বে: ফজলুর রহমান

ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূ‌র্তে নির্বাচন হ‌লে বিএন‌পি ৯০ শতাংশ ভোট পা‌বে: ফজলুর রহমান

রূপালী ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম

রূপালী ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম

একেকজন কাউন্সিলর ছিল ভূমিদস্যু, ডাকাতের সর্দার : চসিক মেয়র শাহাদাত

একেকজন কাউন্সিলর ছিল ভূমিদস্যু, ডাকাতের সর্দার : চসিক মেয়র শাহাদাত

ইসলামী ব্যাংকে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় এস আলম গ্রুপ

ইসলামী ব্যাংকে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় এস আলম গ্রুপ

ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

চট্টগ্রাম বন্দরে অনিয়ম বের করার নির্দেশ নৌপরিবহন উপদেষ্টার

চট্টগ্রাম বন্দরে অনিয়ম বের করার নির্দেশ নৌপরিবহন উপদেষ্টার

একীভূত হচ্ছে না পদ্মা-এক্সিম সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

একীভূত হচ্ছে না পদ্মা-এক্সিম সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া

লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া

চাহিদা বেশি ছোট ফ্ল্যাটের

চাহিদা বেশি ছোট ফ্ল্যাটের