প্রশাসনের কড়া নজরদারি, ভারতীয় গরু শুন্য কুড়িগ্রামে গরুর হাট
২৭ জুন ২০২৩, ১২:০৯ পিএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩, ১২:০৯ পিএম
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা কে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রাম জেলার হাট গুলোতে কোরবানীর গরু-ছাগল বেচাকেনার ধুম পড়েছে । কুড়িগ্রাম জেলা সাথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় এই তিন রাজ্যের সাথে সীমান্ত। প্রশাসনের করা নজরদারি থাকায় এবারে ভারত থেকে কোন গরু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হাট গুলোতে আসতে পারেনি। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের বিশাল জলরাশি পার হয়ে প্রতিবছর ভারতীয় গরু আমদানী হলেও, এবছর আসেনি প্রতিবেশী দেশের গরু। যার ফলে দেশী খামারীদের মধ্যে স্বস্তি ও খুঁশির হাসি দেখা গেলেও ক্রেতারা পড়েছে মহাবিপাকে।
সরেজমিনে হাটে গিয়ে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সদরের দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত স্থানের পাশেই বিশাল এলাকা জুড়ে যাত্রাপুর হাট। এই হাটে বসে কোরবানীর পশুর হাট। অর্থনৈতিক সংকটে থাকায় ক্রেতারা বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর দিকে ঝুঁকছেন বেশি।
ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে পশুর হাট সরগরম হয়ে উঠেছে। কাঁদা-গোবর পেরিয়ে লোকজন গরু দেখছেন। কিনছেন কম। বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারী গরু গুলোর দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় খুব সহজে কিনছেন অনেকেই। এছাড়াও সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় প্রতিবছর কোরবানির সময় যাত্রাপুর হাটে চোরাই পথে ভারতীয় গরু উঠলেও এবারে ভারতীয় গরু না আসায় স্বস্তিতে আছেন প্রান্তিক কৃষক ও খামারীরা।
জেলা শহরের বাসিন্দা রকিবুল হাসান বলেন,' জেলার সব থেকে বড় হাট আমাদের এই যাত্রাপুর। এবার ভারতীয় গরু না থাকায় দেশী অনেক গরু উঠেছে। আশা করছি সাধ্যের মধ্যে পছন্দ মতো গরু কিনতে পারবো।'
হাটের ইজারাদাররা বলছেন, ভারতীয় গরু না আসায় এবার হাটে বাইরের জেলার ব্যাপারীর সংখ্যা কম। অন্যদিকে বন্যার পানি বাড়ার কারনে এবার হাটে চরাঞ্চলের অনেক গরু এসেছে। আর বিক্রেতার তুলনায় হাটে ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়। যার কারণে অল্প লাভে খামারীরা গরু ছেড়ে দিচ্ছেন।
ব্রহ্মপুত্রের দ্বীপচর মোল্লারহাট থেকে দুটি গরু নিয়ে এসেছেন কৃষক আব্দুল মালেক, তিনি গরুর ব্যবসাও করেন তিনি বলেন,' আমার মাঝারী দুইটা গরুর দাম প্রতিটি ৮০ থেকে ৯০হাজার করে চাচ্ছি । বড় ব্যাপারী নাই। স্থানীয় লোকজন ৬০ থেকে ৬৫ হাজার দাম বলেছে। এই দামে বিক্রি করলে লাভ তো দুরের কথা অনেক লোকসানে পরব।
খেয়ার আলগার চরের কৃষক মোন্নাফ আলী বলেন, "সাড়ে তিন মণ ওজনের দুইটা ষাঁড় গরু ব্যাচবার(বিক্রি) আসছি । নৌকা ঘাটেই ৮৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করলাম। ছোট গরু কেনার মানসের (মানুষের) অভাব নাই। হাটত আনার আগেই বিক্রি হয়া যায়। ভারতের গরু না আসায় হামরা খুব খুশি।"
নাগেশ্বরী মাদারগঞ্জ থেকে আসা খামারী জিয়াউর রহমান বলেন,'এবার ভারতের গরু নেই এটা খুশির খবর। কিন্তু ক্রেতা সংকট খারাপ দিক। আমার এই গরুটা ১ লাখ ১০ হাজার দাম চাচ্ছি। যাত্রাপুর হাটে এবার বড় গরু তেমন চাহিদা দেখছি না। লোকজন বেশি মনে হলেও প্রকৃত ক্রেতা নাই।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন,'গত বছরের চেয়ে এবার হাটে দেশী ছোট ও মাঝারী গরু গুলোর দাম মানুষের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। বন্যার পানি উঠার কারণে চরের লোকজন বাড়িতে গরু না রেখে কম লাভে বিক্রি করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে,যাত্রাপুর হাটে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ইজারা আদায়। ঈদের হাট উপলক্ষে যাত্রাপুর হাটে ইজারা ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত গরুর খাজনা ৫০০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার ২৫০ টাকা। অথচ ক্রেতার কাছ থেকে গরুর খাজনা ৭০০ টাকা এবং ভেড়া-ছাগলের জন্য ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও বিক্রেতার কাছ থেকে আগে গরু প্রতি ২০০ টাকা নেওয়া হলেও ঈদ উপলক্ষে ৩০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
যাত্রাপুর হাট ইজারাদের অংশীদার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন,'ঈদ উপলক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। ঈদের পর থেকে এই অতিরিক্ত খাজনা আদায় হবে না।'
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোশারফ হোসেন জানান, কুড়িগ্রামের সীমান্তগুলোতে বিজিবির কড়া নজরদারির কারণে যাত্রাপুর হাটে এবার ভারতীয় গরু আসতে পারেনি। ৯ উপজেলায় এ বছর কোরবানীর জন্য ২ লাখ ৬৯ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১ লাখ বেশি।
কুড়িগ্রাম ২২, বিজিবি'র অধিনায়ক মোঃ আব্দুল মোত্তাকিম জানান, এবারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশে।তারই আলোকে আমরা ভারতীয় বিএসএফ'র সাথে আলোচনা সাপেক্ষে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে ইতোমধ্যে কিছু ভারতীয় গরু আটক করে নিলামের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং আমাদের টহল টিম কঠোরভাবে নজরদারি করছে।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ গরুর হাটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ কোরবানির ঈদে চোরাচালান বন্ধে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশের সকল বিভাগ মাঠে কাজ করছে, আমি নিজেই নিরাপত্তার বিষয়টি মনিটরিং করছি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, কোরবানির ঈদের হাট উপলক্ষে যাত্রাপুর হাটসহ জেলার অন্যসব হাটগুলোতে জাল টাকা সনাক্তকরণে ব্যাংকগুলো মেশিন বসিয়েছে। এছাড়াও জেলা পুলিশ কঠোরভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছেন। আর হাটে
অতিরিক্ত টাকা ইজারা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। নিয়মের বাইরে গিয়ে বেশি টাকা ইজারা আদায়ের কোন সুযোগও নেই। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে অতিরিক্ত ইজারা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেরপুরে ডিসি লেকে ফের চালু হলো প্যাডেল বোট
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সাংবাদিক ডালিমের লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধান বিচারপতি
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীনদের আন্দোলন : সারজিসের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার
৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দনিয়া কলেজ ছাত্রদলের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন সেনাপ্রধান
কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে প্রতিশ্রুত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে চাই: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
তারকাখচিত বরিশালকে উড়িয়ে রংপুরের তিনে তিন
নতুন ছয় লাখ টিসিবি কার্ড বিতরণ করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সিংগাইরে শীতার্তদের মাঝে ইউএনও’র কম্বল বিতরণ
বিস্ফোরক মামলায় নিক্সন চৌধুরীর অন্যতম সহযোগী জব্বার মাস্টার গ্রেপ্তার
২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেল রিজার্ভ
সাবেক এমপি কবির উদ্দিন আহমেদ আর নেই
রেকর্ড ৫,৬৩৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা সোনালী ব্যাংকের
১৪৮ চিকিৎসককে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বদলি
৭ উইকেট ছেলেকে দিলেন তাসকিন
প্রধান উপদেষ্টার রাজবাড়ী সফর স্থগিত
ভিসা সত্যায়নের বেড়াজালে বিপুল সংখ্যক সউদীগামী কর্মী বায়রা নেতৃবৃন্দের সাথে বিএমইটির ডিজি
মোবাইলের ব্যাককভারে প্রিন্ট করা ছবি লাগানো প্রসঙ্গে
প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন জনপ্রিয় গায়ক আরমান মালিক
সরকারি দপ্তরে তদবির বন্ধে সচিবদের উদ্দেশে পত্র দিয়ে তথ্য উপদেষ্টার অনন্য দৃষ্টান্ত