শত শত ট্রাকে গরু ভর্তি করে বাড়ি ফিরছেন ব্যাপারীরা

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৯ জুন ২০২৩, ০৮:৩০ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৩, ০৮:৩০ এএম

গাবতলী থেকে বেড়িবাঁধ রুটে প্রবেশ করছে শত শত ট্রাক। কারণ গাবতলী পশুর হাটের এই অদূরে রয়েছে বিট খাটাল। বিট খাটাল হলো খোয়াড়ের মতো স্থান। এখানে ট্রাক থেকে গরু নামানো হয়। মাটি দিয়ে ট্রাকের বডি পর্যন্ত উচু করা হয়েছে। যাতে করে সহজেই গরু ট্রাকে উঠানো যায়। এখান থেকে অবিক্রীত গরু ট্রাক ভর্তি করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপারীরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রাত সাড়ে ১২টার সময় গাবতলী পশুর হাটে এমন চিত্র দেখা গেছে। একের পর এক ট্রাক গাবতলীতে প্রবেশ করছে। রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। হাটে এখনো পর্যাপ্ত সংখ্যক কোরবানির পশু অবিক্রীত রয়ে গেছে। বিপরীতে হাটগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি কম। বুধবার ভোর থেকেই রাজধানীতে থেমে থেমে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে সকালে হাটটিতে ক্রেতার তেমন আনাগোনা ছিল না।
তাই অনেক বিক্রেতা হাট থেকে বেরিয়ে রাস্তায়ও গরু-ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তারা কয়েক দিন ধরে যে দাম চাইছিলেন, আজ সে তুলনায় দামও কমিয়ে দেন। শেষ দিনে বাড়তি লাভের আশায় গরু বিক্রি করেননি ক্রেতারা। এসব কারণেই শেষ দিনে লোকশানে পড়েছেন ব্যাপারীরা।
মানিকগঞ্জ সিঙাইড়ের ব্যাপারী আমিনুল ইসলাম। তিনি হাটে ৬৫টি দেশি মাঝারি দামের গরু তুলেছিলেন। এর মধ্যে শেষ দিনে ১০টা গরু লোকসানে বিক্রি করেছেন। তবে এর আগে ১৫টা বিক্রি করেছেন সীমিত লাভে। ফলে ৪০টি গরু ট্রাক ভর্তি করে পুনরায় বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
আমিনুল বলেন, এবার কোরবানির ঈদ মাটি ভাই। গরু বেচাবিক্রি নাই, তাই গরু বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। যারা অন্যান্য বার ছাগল কোরবানি দেয় তারাও এবার গরু কোরবানি দিয়েছে।
দাম কমায় অনেকে মধ্যরাতে গাবতলী এসেছেন গরু কিনতে। পছন্দের গরু কম দামে কিনে বাড়ি ফিরছেন। তাদের মধ্যে একজন শেরে বাংলানগরের বাসিন্দা হাজী মুনতাজুর রহমান। তিনি মাঝারি আকারের একটি গরু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন। গরুটি কেনার সময় তাকে বিক্রেতার সঙ্গে খুব বেশি সময় দরদাম করতে দেখা যায়নি। গরু কেনা শেষে তিনি বলেন, এর আগে কয়েকটি হাটে গিয়েছি। কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫টা গরু দেখেছি। কিন্ত দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারিনি। আল্লাহ দিলে শেষ সময়ে পড়তা মতো গরু পেয়েছি।
কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মজনু ব্যাপারী। হাটে ৩৫টি গরু তুলেছিলেন। এর মধ্যে মাত্র ৫টি গরু বিক্রি করেছেন। কুষ্টিয়া থেকে একটি গরু পরিবহন খরচ ৬ হাজার টাকা। একটা গরুর হাট খরচ ২ হাজার ৫০০ টাকা। বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে আরও ৩ হাজার টাকা। এছাড়া খাবার ও রাখাল খরচ দিয়ে গরু প্রতি খরচ ১২ হাজার টাকা।
এখন বাড়তি খরচ করে গরু বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন মজনু। তিনি বলেন, ৩৫টা গরুর মধ্যে ৫টা গরু লোকসানে বিক্রি করেছি। এখন ৩০টা গরু ট্রাক ভর্তি করে বাড়ি যাচ্ছি। এবার যা বসান (লোকসান) খাইলাম তা আজীবন মনে থাকবে। গাবতলীর হাটে গরুর থেকে পাঙ্গাসের দাম আরও বেশি। আর কখনও হাটে গরু তুলবো না। কিন্তু এবার যে লোকসান হলো তা কি দিয়ে পোষাবে। গরু হাটে তুললে গরুর শরীর নষ্ট হয়ে যায়। এই গরু ঠিক করতে আরও চার মাস সময় লাগবে। তারপরও গরুর খাদ্য খাবারের দামও বাড়তি।
মধ্যরাতে গাবতলীর হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাত যত গভীর হচ্ছে ট্রাকের সংখ্যা ততই বাড়ছে। এসব ট্রাকে করে দেশের নানা প্রান্তে গোরবানির পশু ফিরে যাবে। মূলত কুষ্টিয়া, পাবনা, মানিকগঞ্জ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলার গরু বেশি দেখা গেছে গাবতলীর পশুর হাটে। এসব গরু পুনরায় ট্রাক ভর্তি হয়ে এসব অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপারীরা। অনেক ব্যাপারী গাবতলী পশুর হাটে কান্নায় ভেঙে পড়েন লোকসানের কারণে।
ট্রাকে গরু তুলছেন আর গামছা নিয়ে চোখ মুছছেন চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুক্তার ব্যাপারী। ৭৫টি গরুর মধ্যে ৬৫টি গরু বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
মুক্তার ব্যাপারী বলেন, ঈদের আগের রাতে গরুর দাম ডাউন গেছে। অথচ দুই দিন আগেও বাজার ভালো ছিল। পানির দরে তো গরু বেচা যায় না। তাই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি আল্লাহ যা করে কপালে। দামি খাদ্য খাবার খাওয়ানোর পর ঢাকায় গরু ফেলে দেওয়া যায় না। ঘরের মানিক ঘরে নিয়ে যাচ্ছি।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতার

টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতার

দাবানল থেকে পালিয়ে আসার ‘নারকীয় অভিজ্ঞতা’ লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের

দাবানল থেকে পালিয়ে আসার ‘নারকীয় অভিজ্ঞতা’ লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের

হামাসের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে গাজায় চার ইসরাইলি সেনা নিহত

হামাসের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে গাজায় চার ইসরাইলি সেনা নিহত

শতাধিক পণ্য ও সেবায় সরকার ভ্যাট বাড়ানোর পথ বেছে নিলো কেন

শতাধিক পণ্য ও সেবায় সরকার ভ্যাট বাড়ানোর পথ বেছে নিলো কেন

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে ঘানার আক্রা, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে ঘানার আক্রা, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

ডাকসু নির্বাচন : ছাত্রদলের সঙ্গে শিবির-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

ডাকসু নির্বাচন : ছাত্রদলের সঙ্গে শিবির-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

লন্ডনে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থার দ্রুতই উন্নতি

লন্ডনে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থার দ্রুতই উন্নতি

এবার নির্বাচন কমিশনের ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’

এবার নির্বাচন কমিশনের ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’

এবার মার্কিন পণ্যের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা কানাডার

এবার মার্কিন পণ্যের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা কানাডার

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ, কূটনৈতিক উত্তেজনা  বাড়ছে

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ, কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে

আজ গরম চা দিবস

আজ গরম চা দিবস

এলিফেন্ট রোডে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপ, ভিডিও ভাইরাল

এলিফেন্ট রোডে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপ, ভিডিও ভাইরাল

গাজায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা

গাজায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা

জ্যাক স্মিথ বিচার বিভাগ থেকে পদত্যাগ করেছেন

জ্যাক স্মিথ বিচার বিভাগ থেকে পদত্যাগ করেছেন

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গ্যারেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গ্যারেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, আগুনের বিরুদ্ধে দমকল বাহিনীর মরিয়া লড়াই

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, আগুনের বিরুদ্ধে দমকল বাহিনীর মরিয়া লড়াই

হাসিনাকে যে কারণে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতেই হবে ভারতকে: তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ

হাসিনাকে যে কারণে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতেই হবে ভারতকে: তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ

সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনায় সউদী আরবে বৈঠক

সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনায় সউদী আরবে বৈঠক

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২, মানবিক সংকট চরমে

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২, মানবিক সংকট চরমে

চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত

চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত